পাহাড়ে প্রাণের উৎসব শনিবার থেকে

পাহাড়ে নববর্ষ বরণের প্রস্তুতি চলছে জোরেশোরে। রাঙামাটিতে বিজু উপলক্ষে ঐতিহ্যবাহী সাজে আদিবাসী শিশুরা ষ সুপ্রিয় চাকমা
পাহাড়ে নববর্ষ বরণের প্রস্তুতি চলছে জোরেশোরে। রাঙামাটিতে বিজু উপলক্ষে ঐতিহ্যবাহী সাজে আদিবাসী শিশুরা ষ সুপ্রিয় চাকমা

১২ এপ্রিল থেকে পাহাড়ে শুরু হচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীদের প্রধান সামজিক উৎসব বৈসুক-সাংগ্রাই-বিজু-বিষু উৎসব। এ উৎসবকে ঘিরে পার্বত্য চট্টগ্রামে চলছে নানা প্রস্তুতি।
৩ এপ্রিল রাঙামাটিতে আদিবাসী সংস্কৃতি মেলা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শুরু হয়েছে পাহাড়ের নানা স্থানে সামাজিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। তবে মূল উৎসব বাংলা বছরের শেষ দুদিন ও নববর্ষের প্রথম দিন পালন করা হয়। উৎসবটি সমতলে বৈসাবি নামে পরিচিত। তবে এই উৎসবকে ত্রিপুর সম্প্রদায় বৈসুক, মারমারা সাংগ্রাই, চাকমারা বিজু ও তঞ্চঙ্গ্যারা বিষু নামে অভিহিত করে। উৎসবের নাম সম্প্রদায়ভেদে ভিন্ন হলেও সবার উদ্যাপনের রীতি ও সময় এক।
বৈচিত্র্যময় তিন দিন: আদিবাসীদের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের উৎসবের যেমন ভিন্ন ভিন্ন নাম রয়েছে, তেমনি উৎসবের তিনটি দিনের নামও আলাদা। ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের লোকজন উৎসবের প্রথম দিনকে হারি বৈসুক, দ্বিতীয় দিনকে বিসুমা ও তৃতীয় দিনকে বিসিকাতাল বলে। মারমারা প্রথম দিনকে সাংগ্রাই আকনিয়াহ, দ্বিতীয় দিনকে সাংগ্রাই আক্রাইনিহ ও শেষ দিনকে লাছাইংতার বলে। চাকমাদের কাছে এগুলো ফুল বিজু, মূল বিজু ও গোজ্যেপোজ্যে দিন হিসেবে পরিচিত।
উৎসব উদ্যাপনের দিন একই হলেও বান্দরবানের মারমা সম্প্রদায় বর্মি পঞ্জিকা অনুসারে এক দিন পরে উৎসব শুরু করে। অবশ্য রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ির মারমারা চাকমা ও ত্রিপুরাদের সঙ্গেই উৎসব উদ্যাপন করে।
উৎসবের প্রথম দিনে ঘরবাড়ি ও আঙিনা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয় এবং ফুল দিয়ে সাজানো হয়। এদিন পাহাড়ি ছড়া, ঝরনা বা নদীতে ফুল ভাসিয়ে দিয়ে মা গঙ্গাকে পূজা দেওয়া হয়। এ ছাড়া পাড়ার যুবক-যুবতীরা নদী থেকে পানি তুলে বুড়ো-বুড়িদের গোসল করিয়ে আশীর্বাদ নেন। অনেক এলাকায় দলবেঁধে বুদ্ধমূর্তিগুলোকেও গোসল করানো হয়। এরপর সারা দিন প্রস্তুতি চলে পরবর্তী দিন বা উৎসবের মূল দিনের খানাপিনা আয়োজনের।
উৎসবের দ্বিতীয় দিনে প্রতিটি বাড়িতে নানা মুখরোচক খাবারের আয়োজন করা হয়। তবে ২০ থেকে ২৫ বা তারও বেশি আনাজপাতি দিয়ে তৈরি ‘পাজন’ ও পানীয় পরিবেশন করা হয়। নানা বয়সী লোকজন সারা দিন দলবেঁধে ‘হে হু হু হু’ আনন্দধ্বনি দিয়ে ঘুরে বেড়ায়।
তৃতীয় দিনে দলবেঁধে মন্দিরে গিয়ে নতুন বছরের সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা বা ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানাদি পালন করা হয়। এদিন অনেকে পাড়ার মুরব্বিদের বাড়িতে ডেকে ভালো খাবার দেন। আর অনেকে উৎসবের তিন দিন মন্দির, বাড়ির আঙিনা, নদীর ঘাট, সবুজ গাছের নিচে ও গোয়ালঘরে বিভিন্ন দেবদেবীর উদ্দেশে মোমবাতি জ্বালান। তবে উৎসবে চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরাদের কিছু বিশেষ আকর্ষণীয় অনুষ্ঠান থাকে। এর মধ্যে চাকমাদের ‘বিজু নৃত্য’, ত্রিপুরাদের ‘গরাইয়া নৃত্য’ ও মারমাদের ‘পানি খেলা’ অন্যতম।