পিরিয়ড নিয়ে ভ্রমণকন্যাদের সচেতনতা বার্তা

‘মাসিক স্বাস্থ্য’ বিষয়ে ভ্রমণকন্যার পোস্টার প্রতিযোগিতায় ‘খ’ ও ‘গ’ বিভাগে প্রথম পুরস্কার পেয়েছে এই দুটি পোস্টার

প্ল্যাকার্ড হাতে তাঁরা কেউ দাঁড়িয়েছিলেন জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে, কেউবা সবুজ চা–বাগানে। প্রত্যেকের প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল, মাসিক স্বাভাবিক। পিরিয়ড বা মাসিক বিষয়টি যে নারীস্বাস্থ্যের স্বাভাবিক বিষয়, সে বার্তা পৌঁছে দিতেই এই তরুণেরা দাঁড়িয়েছিলেন নিজ জেলাকে প্রতিনিধিত্ব করে, এমন স্থানে। ৬৪ জেলায় সচেতনতার বার্তা ছড়ানো তরুণেরা ট্রাভেলেটস অব বাংলাদেশ—ভ্রমণকন্যার স্বেচ্ছাসেবক। গত ২৮ মে মাসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা দিবস উপলক্ষে ভ্রমণকন্যা অনলাইনে সাত দিনের যে অনুষ্ঠান আয়োজন করেছিল, কর্মসূচিটি তারই অংশ।

ভ্রমণ অনুরাগী নারীদের অলাভজনক সংগঠন ট্রাভেলেটস অব বাংলাদেশ। নারীদের ভ্রমণে অনুপ্রাণিত করার পাশাপাশি নারীর স্বাস্থ্য ও নারীর ক্ষমতায়ন নিয়েও নানা কাজ করে থাকে। সেই ধারাবাহিকতায় অনলাইনে দিবসটি পালন করেছে ভ্রমণকন্যা।

‘মাসিক স্বাভাবিক’ প্রচারণায় ভ্রমণকন্যার ঢাকা অঞ্চলের দুই স্বেচ্ছাসেবক
ছবি: সংগৃহীত

আয়োজনের প্রথম দিন ২২ মে ছিল মাসিক স্বাস্থ্য নিয়ে আলোচনা। দ্বিতীয় দিনে উপস্থিত হয়েছিলেন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ শাহ্‌লা খাতুন, তিনি পিরিয়ডের সময়ের বিভিন্ন জটিলতা নিয়ে প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। পরের দিনগুলোতে ছিল পেশাজীবী নারীদের অংশগ্রহণে মাসিক স্বাস্থ্য নিয়ে আলোচনা, মাসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করা ১০টি জাতীয় সংস্থার প্রতিনিধির অভিজ্ঞতা বিনিময়, নারীস্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করা বিদেশি কয়েকটি দেশের সংগঠকের অংশগ্রহণ।

ভ্রমণকন্যার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সাকিয়া হক বলেন, ‘আমাদের কর্মসূচির মধ্যে একটি হচ্ছে “নারীর চোখে বাংলাদেশ”। এই কর্মসূচির মাধ্যমে ইতিমধ্যে বাংলাদেশের ২৩ হাজারের বেশি স্কুলছাত্রীদের আমরা কর্মশালা করিয়েছি। তাদের বাংলাদেশ ও মুক্তিযুদ্ধ, প্রজননস্বাস্থ্য, আত্মরক্ষার কৌশল এবং খাদ্য-পুষ্টির মতো বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে সচেতন করেছি। আমাদের এই আয়োজন তারই অংশ।’

অনুষ্ঠানটি সাত দিনের হলেও প্রস্তুতি শুরু হয়েছিল আরও আগে। সেই প্রস্তুতি ছিল পোস্টার প্রতিযোগিতার। ‘মাসিক স্বাস্থ্য’ বিষয়ে তিনটি বিভাগে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের কাছে পোস্টার আহ্বান করা হয়েছিল। জমা পড়েছিল ২২৪টি পোস্টার। ২৭ মের আয়োজনে ছিল অনলাইনে পোস্টার প্রদর্শনী। এই পোস্টারগুলো অনলাইন দেখানো হয়। সে অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন প্রতিযোগিতার অন্যতম বিচারক কার্টুনিস্ট ও লেখক আহসান হাবীব। তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘মাসিকের এই ট্যাবুটা যে আমরা ভাঙার চেষ্টা করছি, ভ্রমণকন্যা যে দায়িত্বটা নিয়েছে, এ জন্য তাদেরও অভিনন্দন জানাচ্ছি। করোনাকাল না হলে হয়তো পোস্টারগুলো নিয়ে প্রদর্শনী করলে আরও মানুষকে সচেতন করা যেত।’

বিচারকদের রায়ে তিন বিভাগে তিনটি করে পোস্টারকে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় ঘোষণা করা হয়। এ ছাড়া অনলাইনে প্রদর্শনী শেষে দর্শকদের ভোটে নির্বাচন করা হয় আরও তিনটি পোস্টার। এ বিভাগের নাম দেওয়া হয়েছিল ‘পিপল চয়েস’। প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের উপহার হিসেবে সনদ ও বই দেওয়া হয়।

২৮ মে কর্মসূচির সমাপনী আয়োজনে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী

২৮ মে কর্মসূচির সমাপনী আয়োজনে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। মাসিক স্বাস্থ্য দিবসে ট্রাভেলেটসের এই আয়োজনও কার্যকর একটি পদক্ষেপ উল্লেখ করে স্পিকার বলেন, ‘প্রজননস্বাস্থ্য, মাসিক, গর্ভধারণ—এই বিষয়গুলো নিয়ে খোলামেলা কথা বলা, আলাপ-আলোচনা করার সুযোগ অত্যন্ত সীমিত। প্রজননস্বাস্থ্যের সূচনাই হয় এই মাসিকের সময়কাল থেকে। এই সময়ের মাধ্যমে একজন মেয়ে পরবর্তী জীবনে একজন নারী হয়ে বেড়ে ওঠেন। সেই সময়কালটা তাঁর জীবনে অত্যন্ত সংবেদনশীল। সে কারণে এ বিষয়ে মেয়েদের স্বাস্থ্য সচেতনতা, জ্ঞানদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’

সাত দিনের আয়োজনে ভ্রমণকন্যা সেই সচেতনতার বার্তায় ছড়িয়ে দিতে চেয়েছে।