প্রকৃতির রঙে রাঙা চুল

চুলে প্রাকৃতিক রঙ ব্যবহার করাই ভালোমডেল: মাসিয়াত, ছবি: নকশা

বাঙালি মেয়েদের চুলের স্বাভাবিক রং কালো। একসময় চুল সাদা হয়ে আসে। এই চক্র চলে এসেছে আবহমানকাল ধরে। তবে একালে অনেকেই আধুনিকতার ছোঁয়ায় চুল রাঙাতে ভালোবাসেন। তার জন্য রাসায়নিক রং আছে, আছে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এ ধরনের সেবা নেওয়ার সুযোগও। তবে রাসায়নিক ব্যবহারে চুল রুক্ষ হয়ে পড়ার ভয় থাকে। তাই অনেকে ইচ্ছা থাকলেও রং করাতে পারেন না। কারও কারও চুল সাদা হতে পারে বয়সের আগেই। এ নিয়ে অনেকেই পড়েন অস্বস্তিতে।

চুলে রং ভালোভাবে বসাতে বা রঙের স্থায়িত্ব বাড়াতে রাসায়নিকের ব্যবহার প্রয়োজন হয়। তবে রাসায়নিকের ব্যবহার সবার জন্য উপযোগী না-ও হতে পারে। প্রাকৃতিকভাবে চুলে রং করলে সেটি একটু ভিন্ন রকমের দেখাতে পারে। চুলে প্রাকৃতিক রঙের একটা হালকা শেড আনার বিষয়টিও ফ্যাশন–দুরস্তরা গ্রহণ করতে পারেন। সাদা চুলে প্রাকৃতিক রং বেশ ভালোভাবেই ফুটে ওঠে। এমনটাই জানালেন হার্বস আয়ুর্বেদিক স্কিন কেয়ার ক্লিনিকের আয়ুর্বেদিক রূপ বিশেষজ্ঞ আফরিন মৌসুমী। তাঁর কাছেই জেনে নিন চুলে প্রাকৃতিক রং করার নিয়মকানুন।

চুলে কোনো রাসায়নিক রং থাকা অবস্থায় প্রাকৃতিক রং বসবে না। তবে প্রাকৃতিক মেহেদির রং থাকলে সমস্যা হয় না।

চুলে রং লাগাতে ব্রাশ ব্যবহার করুন। হাত দিয়ে স্পর্শ করবেন না। গ্লাভস পরে নিতে পারেন।

প্রাকৃতিক রং চুলে বসতে একটু সময় লাগে। রং লাগানোর পর চুল শুকিয়ে এলে তেল মালিশ করে মোটা দাঁতের চিরুনি দিয়ে আঁচড়ে নিয়ে চুল বেঁধে রাখুন। পরপর তিন দিন একই পদ্ধতিতে রং লাগাতে হবে। এর ভেতর চুল ধোয়া যাবে না। শেষ দিনে একই পদ্ধতিতে চুল আঁচড়ানোর পর শ্যাম্পু করে ফেলুন।

এই রং, সেই রং

নানা রং তৈরির পদ্ধতি জানালেন আফরিন মৌসুমী:

মেহগনি রং আনতে কাঁচা মেহেদির রস (পানি ছাড়া করলে ভালো) ১ কাপ ও দেড় কাপ বিটরুটের রস নিয়ে জ্বাল দিতে হবে। এরপর কফি দিন ৩ টেবিল চামচ। জ্বাল দিতে দিতে সব মিলিয়ে পরিমাণ আধা কাপের মতো হয়ে এলে নামিয়ে নিন।

তামাটে বাদামি শেড পেতে ২ কাপ পানিতে ২ টেবিল চামচ চা দিয়ে জ্বাল দিন। নামিয়ে গরম অবস্থাতেই ছেঁকে নিন এবং ১ টেবিল চামচ কফি যোগ করে আলাদা রেখে দিন মিশ্রণটি। এবার কাঁচা মেহেদির রস (পানি ছাড়া করলে ভালো) ২ কাপ, মেথিগুঁড়া ১ চা–চামচ ও খয়েরগুঁড়া ১ টেবিল চামচ এবং আগে থেকে করে রাখা চায়ের মিশ্রণ একসঙ্গে জ্বাল দিন। ঘন লেই হয়ে এলে নামিয়ে নিন।

গাঢ় বাদামি পেতে কাজে দেবে আমের আঁটির ভেতরের শাঁস (এটি ফ্রিজেও সংরক্ষণ করা যায়)। আমের আঁটির শাঁস নেবেন ১টি (থেঁতো করা), নেবেন আমলকী পাউডার বা শুকনা আমলকী ১ কাপ, বিটরুটের রস ১ কাপ ও মেহেদির রস ১ কাপ। সব উপকরণ একসঙ্গে জ্বাল দিতে হবে। ঘন হলে নামিয়ে নিন। সাদা চুলে দারুণ রং আনে এই মিশ্রণ।

কম আয়াসে রং চাই?

কারও কাছে আবার ঝক্কি মনে হতে পারে, পরপর তিন দিন এত সব করতে। তাঁরা অন্য উপায় বেছে নিতে পারেন। তামাটে আর সিসা রঙের মাঝামাঝি একটা রং আনতে পানি ছাড়া মেহেদিপাতা বেটে বা পেস্ট করে রাখুন (৩ কাপ পরিমাণ হবে)। এবার বিটরুটের রস ১ কাপ, চা–পাতা ১ টেবিল চামচ, খয়ের ১ টেবিল চামচ, কফি ৩ টেবিল চামচ একসঙ্গে জ্বাল দিয়ে নামিয়ে নিন। এবার মেহেদিবাটা যোগ করে নেড়েচেড়ে রাখুন। ঠাণ্ডা হওয়ার পর চুলে রাখুন তিন ঘণ্টা। এরপর চুল পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন সরাসরি, অর্থাৎ সেদিন আর তেল মালিশের মতো কোনো বাড়তি ঝক্কি নেই। পরদিন তেল মালিশ করে ঘণ্টাখানেক পর শ্যাম্পু করুন। এভাবে একবারেই রং আনে এই মিশ্রণ।