>

মানবজাতির এক বড় অংশজুড়ে আছে প্রেমিক প্রজাতি। এই প্রেমিকেরা হয় অনেক প্রকারের। আপনি নিজে কোন প্রকারের প্রেমিক? মিলিয়ে নিন। লেখা: মোস্তফা মনোয়ার
ন্যাকা প্রেমিক
কিছু প্রেমিক আছে, যাদের আগাগোড়া পুরোটাই ন্যাকামিতে পরিপূর্ণ। ফোনে কথা বললে মনে হয় এরা সদ্যভূমিষ্ঠ শিশুর সঙ্গে কথা বলছে।
প্রেমিক: বাবু, তুমি রাতে ভাত খাইছ তো? এখন কী করো? ফেসবুকে আমি ছবি দিলাম, তুমি লাভ না দিয়ে লাইক দিলা ক্যান? তুমি আমাকে একটুও লাভ করো না, বাবু...।
অতি যত্নবান প্রেমিক
কিছু প্রেমিক আছে, যারা তাদের প্রেমিকার প্রতি অতি যত্নশীল। বাসার সামনে নামিয়ে দিয়েও একটু পর ফোন করে খোঁজ নেয় তিনতলায় ঠিকমতো উঠতে পারল কি না।
প্রেমিক: কী বললা, বাবু? তোমার মাথাব্যথা করতেছে? আধা ঘণ্টা ধরে? আমাকে আগে জানাও নাই কেন তুমি? এক মিনিট ধরো, আমি ঢাকার সেরা মাথাব্যথা স্পেশালিস্টের কাছে অ্যাপয়েনমেন্ট নিচ্ছি। আর একা যেতে পারবা? অ্যাম্বুলেন্স কল করব?
সন্দেহ বাতিকগ্রস্ত প্রেমিক
কিছু প্রেমিক আছে, যাদের সবকিছুতেই সন্দেহ। বন্ধু তো দূরের কথা, প্রেমিকা ভাই সম্পর্কে কিছু বললেও তাদের মনে সন্দেহ উঁকি দেয়!
প্রেমিক: আচ্ছা, আফনান ছেলেটা কে? সেদিন দেখলাম তোমার ছবিতে লাভ দিল। আগে তো দেখিনি, তোমার ফ্রেন্ডলিস্টে কবে অ্যাড হলো? ফোনও আজকাল ওয়েটিং পাচ্ছি, ব্যাপারটা খুলে বলো তো আমাকে।
পাসওয়ার্ড প্রেমিক
কিছু প্রেমিক আছে, যারা প্রেমিকার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট দেখভাল করে অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে। প্রেমিকার পাসওয়ার্ড নিজের কাছে থাকলে তারা নিজেদের অনেক সম্পদশালী মনে করে।
প্রেমিক: দেখো জান, আমি তো বলতেছি না, আমি তোমাকে বিশ্বাস করি না, কিন্তু তোমার পাসওয়ার্ড আমাকে দিলে কী হয়? পলাশের গার্লফ্রেন্ডের পাসওয়ার্ড ওর কাছে আছে। কিন্তু তোমারটা আমার কাছে নাই। আমি তো কাউকে মুখ দেখাইতে পারতেছি না!
প্রমিজ প্রেমিক
কিছু প্রেমিক আছে, যারা প্রমিজ করতে খুব ভালোবাসে। কোনো কারণ ছাড়াই এরা প্রমিজ করতে ওস্তাদ। সহজেই অনুমেয়, এদের প্রমিজ রক্ষা করা হয়ে ওঠে না।
প্রেমিকা: তুমি ওই কাজটা আবার করলা কেন?
প্রেমিক: প্রমিজ বাবু আর করব না, একদম প্রমিজ!
প্রেমিকা: এই নিয়ে ৩৪৬ বার প্রমিজ করলা!
প্রেমিক: ৩৪৬-ই লাস্ট, আর করব না। প্রমিজ!
সবজান্তা প্রেমিক
কিছু প্রেমিক আছে, যারা প্রেমিকার সামনে জীবন্ত বিশ্বকোষ। তারা এমন একটা ভাব ধরে, যেন আকাশ কেন নীল থেকে সিপাহি বিদ্রোহ—সবকিছু সম্পর্কে তাদের গভীর জ্ঞান।
প্রেমিকা: বুঝছ, কালকে একটা অ্যাসাইনমেন্ট আছে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে, কী যে করি!
প্রেমিক: আরে এটা তো একদম সহজ জিনিস! দেখো, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ মূলত শুরু করেছিলেন তিতুমীর, তিতুমীরকে নিশ্চয়ই চেনো। তাঁর বাড়ি ছিল চাঁদপুরের চব্বিশ পরগনা গ্রামে...
ফাঁপরবাজ প্রেমিক
কিছু প্রেমিক আছে, যাদের কাজই হলো প্রেমিকার সামনে ফাঁপর নেওয়া। রিকশাওয়ালা থেকে শুরু ক্রিকেটার—সবার ব্যাপারে এরা ফাঁপর নেয়।
প্রেমিক (রিকশাওয়ালাকে): টিএসসি থেকে নীলক্ষেত ভাড়া ২০ টাকা? ওই মিয়া, ফাইজলামি করো? জানো, যোগাযোগমন্ত্রী আমার চাচার ছোটবেলার বন্ধুর ভাই?
প্রতিশ্রুতিদাতা প্রেমিক
কিছু প্রেমিক আছে, যারা প্রতিশ্রুতি দিতে ভালোবাসে। তাদের বোধ হয় রাজনীতিবিদ হওয়ার কথা ছিল, ভুল করে হয়ে গেছে প্রেমিক।
প্রেমিক: কথা দিচ্ছি, তুমি আমার প্রস্তাব গ্রহণ করলে আগামী পাঁচ বছর, না না সারা জীবন তোমাকে খুশি রাখব। তোমাকে কোনো কিছুর অভাব বোধ করতে দেব না। তোমার জন্য যা করার দরকার, সব করব।
সবার পরিচিত প্রেমিক
কিছু প্রেমিক আছে, যাদের শহরের রিকশাওয়ালা থেকে শুরু করে মন্ত্রী-মিনিস্টার সবাই চেনে। এবং তাদের এই পরিচিতি প্রেমিকার কাজে আসে বলে তাদের ধারণা।
প্রেমিকা: শোনো না, আজকে না আমার ফুপুর মেয়ের জন্মদিন। ভাবছি একটা থ্রিপিস দেব। কোথা থেকে নেওয়া যায়, বলো তো।
প্রেমিক: ভালো তো। শোনো গাউছিয়ায় যাবা, দোতলায় উঠে পাঁচ নম্বর সারির, দুই নম্বর কলামের চার নম্বর দোকানটা মোখলেসের, আমার পরিচিত। গিয়ে বলবা, তুমি তার ভাবি। তাহলেই হবে, ভালো জিনিস দেখাবে, দামও কম নেবে।
তেল মারা প্রেমিক
কিছু প্রেমিক আছে, যাদের একমাত্র কাজ হলো প্রেমিকাকে তেল মারা। রূপের প্রশংসা তো কিছুই না, তারা যেকোনো কিছুর প্রশংসাই করে বসতে পারে।
প্রেমিক: এই যে দেখো, আমি তো এমনি এমনি তোমাকে ভালোবাসি না। তুমি মোটেও অন্য মেয়েদের মতো না। এই যে তুমি কী সুন্দর করে পানি খেলে, অন্য মেয়ে হলে কোনো দিন পারত? পারত না।