ফেরার লড়াইয়ে সাকিবের সঙ্গী জয়

সাকিব আল হাসানের সঙ্গে জয় সাহা
ছবি: সংগৃহীত

দীর্ঘ এক বছরের নিষেধাজ্ঞার পর আবার নিজেকে তৈরি করতে সাকিব আল হাসান ফিরেছিলেন তাঁর চেনা আঙিনা—বিকেএসপিতে (বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান)। গত সেপ্টেম্বর মাসব্যাপী চলা এই অনুশীলনে সাকিবকে সহায়তা করেছেন তাঁর গুরু নাজমুল আবেদীন ও মোহাম্মাদ সালাউদ্দিন। দুই কোচের সঙ্গে কুশীলব হিসেবে ছিলেন প্রশিক্ষক আবদুল্লাহ হেল কাফী ও বক্সিং কোচ আরিফুল করিম। চারজনের কাজের ধরন আলাদা হওয়ায় সব সময়ই সাকিবের সঙ্গে তাঁদের থাকতে হয়নি। ব্যতিক্রম ছিলেন একজন—জয় সাহা। ফেরার লড়াইয়ের বিকেএসপি পর্বে সাকিবের সব ধরনের অনুশীলনেই ২৫ বছর বয়সী এই ফিজিওথেরাপিস্টের উপস্থিতি ছিল নিশ্চিতভাবে।

সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অনুষদের অধীনে ফিজিওথেরাপি নিয়ে পড়ালেখা করেছেন জয়। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের সঙ্গে টানা এক মাস কাজের অভিজ্ঞতা নিয়ে কথা হলো তাঁর সঙ্গে।

যেভাবে চলেছে প্রস্তুতি

প্রায় বছরখানেক বাদে সাকিব মাঠে ফেরায় তাঁর সঙ্গে প্রধানত জড়িত ছিল দুটি বিষয়। চোটের শঙ্কা এবং কন্ডিশনিং পর্বে প্রতিদিন কঠোর পরিশ্রম করার জন্য শরীর তৈরি রাখা। চোটের আগাম শঙ্কা শনাক্ত করা ও চোটমুক্ত থেকে কঠোর পরিশ্রম করার জন্য সাকিবকে আস্থা রাখতে হয়েছে জয়ের ওপর। সকালে সাকিবকে ঘুম থেকে তুলে ওজন নেওয়া থেকে শুরু করে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগপর্যন্ত জয়-ই ছিলেন সাকিবের সার্বক্ষণিক সঙ্গী। ওজন নেওয়ার পর রাতে কেমন ঘুম হয়েছে, তা জেনে ও হৃৎস্পন্দন মেপে কোচদের জানানো হতো সাকিবের শারীরিক অবস্থা। সে অনুযায়ীই ঠিক করা হতো দিনের অনুশীলনের চরিত্র।

সাধারণত বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একজন ফিজিওর কাজ খেলোয়াড়দের চোট পাওয়ার পর। কিন্তু সাকিবের ক্ষেত্রে বিষয়টি ছিল ব্যতিক্রম। অনেক দিন পর তিনি মাঠে ফিরেছেন, তাই ফিজিওকে অনুমান করতে হয়েছে চোটের শঙ্কার ধরনগুলো। যেমন ব্যাটিং করলে কোথায় কোথায় ফোসকা পড়বে, সেখানে টেপ লাগাও। দ্রুতগতিতে দৌড়ানোর সময় কোনো মাংসপেশিতে টান অনুভব হতে পারে, সেই পেশিগুলো বিশেষভাবে স্ট্রেচিং করাও। প্রতিটা অনুশীলন পর্ব শুরুর আগেই এই বিষয়গুলো নিয়ে আলাদাভাবে কাজ করতে হয়েছে জয়কে।

প্রতিদিন চার সেশনের অনুশীলনের সূচি। সকালে অ্যাথলেটিকস ট্র্যাক থেকে শুরু করে শেষ হয় জিম ও মাঠে। কয়েক দিন যেতে হয়েছে বক্সিং ইনডোরেও। চোটের আগাম শঙ্কাগুলো তো শনাক্ত করতে হয়েছেই। তাৎক্ষণিক ছোট চোটগুলোতে দিতে হয়েছে প্রাথমিক চিকিৎসা। তবে অনেক দিন বাদে একজন বিশ্বসেরা খেলোয়াড়ের মাঠে ফেরার প্রস্তুতি মানে প্রতিদিন পরের দিনের প্রস্তুতি। জয়ের কাজ ছিল সারা দিনের ধকল শেষে আগামী দিনের জন্য সাকিবকে তৈরি রাখা।

সুপার হিউম্যান

সাকিবের সঙ্গে প্রথম কাজ করার সুযোগ হলেও ক্রিকেটে জয় সাহা নতুন নন। তিন বছর ধরে খেলাঘর ক্লাবের ফিজিও হিসেবে কাজ করেছেন। গত বছর বিকেএসপিতে যোগ দিয়েছেন ফিজিওথেরাপিস্ট হিসেবে। বর্তমানে কর্মরত আছেন বিকেএসপির দিনাজপুর শাখায়। কিন্তু সাকিব সাভারের বিকেএসপিতে পা রাখার আগেই কোচদের পক্ষ থেকে তলব করা হয় তাঁকে। ব্যক্তি হিসেবে সাকিবের একনিষ্ঠ ভক্ত জয় পেশাগত কাজের জন্য সাকিবকে দেখার সুযোগ পেয়েছেন কাছ থেকে।

সাকিব বিশ্বের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার। তাঁর ঔদ্ধত্যের ব্যাপারে শোনা যায় কত গুঞ্জন। তাই শুরুর দিকে অজানা এক শঙ্কাতেই ছিলেন জয়। কিন্তু শুরুর কয়েক দিনের মধ্যেই সাকিবের প্রতি তাঁর মুগ্ধতার জন্ম হয়, ‘তাঁর ব্যাপারে তো কত কিছুই শোনা যায়। তাই প্রথম দিকে ভয়ে ছিলাম। কিন্তু পরে বেশ অবাক হয়েছি। আমার সঙ্গে পরিবারের সদস্যের মতো ব্যবহার করেছেন।’

সাকিব আল হাসানের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে তাঁকে ‘সুপার হিউম্যান’ মনে হয়েছে জয়ের, ‘প্রতিদিন চারটি সেশনের পর শরীরে আর কিছু থাকে না। ভালো রিকভারি না হলে পরের দিন গিয়ে আবার আগের মতো অনুশীলন করা কোনোভাবেই সম্ভবই নয়। আমার কাজ ছিল বিভিন্ন স্ট্রেচিং, বিশেষ কিছু ম্যাসাজের মাধ্যমে শরীরের সব ল্যাকটিড অ্যাসিড বের করে দিয়ে পরের দিনের জন্য তৈরি করা। সব ট্রেনিং শেষে সন্ধ্যার পরে ট্রিটমেন্ট বেডে তাঁকে দেড়-দুই ঘণ্টা সময় নিয়ে এই কাজগুলো করতে হতো। সবকিছু মিলিয়ে শরীরের ওপর দিয়ে অনেক ধকল যায়। “সুপার হিউম্যান” না হলে পুরো এক মাস দিনের পর দিন এভাবে চালিয়ে নেওয়া যায় না।’

পেশাদার খেলোয়াড় না হলেও ছোটবেলা থেকে খেলাধুলা পছন্দ করতেন জয়। বলছিলেন, ‘স্কুল-কলেজে ক্রিকেট-ফুটবল খেলেছি। এ ছাড়া জামালপুর জেলায় জুনিয়রে দাবা চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলাম। খেলাধুলা পছন্দ করি বলেই ফিজিওথেরাপিতে পড়েছি। সাকিব আল হাসানের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ হলো, এটা তো স্বপ্ন পূরণের মতো।’