ফেসবুকে আপুর সঙ্গে আরেকটি ছেলের সম্পর্ক হয়

অধ্যাপক মেহতাব খানম
অধ্যাপক মেহতাব খানম

সমস্যা
আমরা চার বোন। আমার বড় বোন এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী। সমস্যাটি আমার বড় বোনের। ছোটবেলায় তার সঙ্গে একটি ছেলের সম্পর্ক হয়। কিন্তু ছেলেটি আপুকে ছেড়ে চলে যাওয়ায় আপু খুব কষ্ট পায়। এ বিষয়ে বাড়িতে জানাজানি হলে প্রথমবারের মতো সবাই ক্ষমা করে দেয়। কিন্তু পরীক্ষার এক মাস আগে ফেসবুকে আপুর সঙ্গে আরেকটি ছেলের সম্পর্ক হয়। এ বিষয়ে বাড়িতে জানাজানি হয়ে গেছে। এবার কেউ আপুকে ক্ষমা করেনি। বাড়ির সবাই আপুর বিয়ে দিতে চায়। কিন্তু আমার আপু পড়াশোনা করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চায়। পরীক্ষার ফল ভালো হলে তার বিয়ে হবে না। কিন্তু বাড়ির পরিস্থিতি এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে আপু ঠিকমতো পড়তে পারছে না। আবার ছেলেটাকে ভুলতেও পারছে না। আমার বাবা একজন সাধারণ ব্যবসায়ী। তাঁর পক্ষে আপুকে বাইরে নিয়ে গিয়ে চিকিত্সা করানো সম্ভব নয়। তাই আমরা বাড়িতে থেকেই আপুকে আগের মতো করে তুলতে চাই।
নাম-ঠিকানা প্রকাশে অনিচ্ছুক।
পরামর্শ
আপুর জন্য তোমার ভালোবাসা ও শুভকামনা সত্যিই খুব প্রশংসনীয়। তোমার প্রিয় আপুর সঙ্গে প্রথম ছেলেটির সম্পর্ক হয়েছিল বেশ ছোট বয়সে। এই বয়সের সম্পর্কগুলো টিকিয়ে রাখার মতো মানসিক পরিপক্বতা থাকে না বলে কেউ কাউকে ছেড়ে চলে যাওয়াটাও খুব স্বাভাবিক। এই বয়সের প্রেমের ক্ষেত্রে অভিভাবকের প্রতিক্রিয়াশীল না হয়ে অনেক বেশি সহমর্মী হওয়া দরকার। কাজেই ক্ষমা করার সঙ্গে সঙ্গে তোমার বোনটির প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়ার খুব প্রয়োজন ছিল।
পরবর্তী সময়ে ফেসবুকের কল্যাণে বোনটি অন্য ছেলেটির সঙ্গে হয়তো কিছুটা ঘনিষ্ঠ হয়েছে। আমি বুঝতে পারছি, পরিবারের অভিভাবকেরা ওর পরীক্ষা নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হওয়ার কারণে এ ধরনের প্রতিক্রিয়া করেছেন। কিন্তু এর পরও বলব, বোনটি যেহেতু এখনো বয়ঃসন্ধিতে আছে, তার মনটি বুঝে সেভাবে ওর সঙ্গে আচরণ করলে ভালো হতো। একবার ওকে ক্ষমা করা হয়েছে বলে আর কখনো সে ভুল করবে না, এটি তো ধরে নেওয়া যায় না। এই বয়সে এসে বিপরীত লিঙ্গের কারও সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হলে প্রথমেই অনেকের ক্ষেত্রে ভালোবাসার সম্পর্ক তৈরি হয়ে যায়।
এ ছাড়া বর্তমান যুগে যেহেতু ইন্টারনেটের মাধ্যমে একই সঙ্গে অনেক মানুষের পরিচিত হওয়ার সুযোগ হয়েছে, তাই প্রায় সব বয়সের লোকেরাই বিভিন্ন সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ছে।
অভিভাবকদের সন্তানদের সঙ্গে বিশ্বাস ও বন্ধুত্বের সম্পর্ক তৈরি করতে হবে। শুধু এ কারণে এবং এত ছোট বয়সে ওর বিয়ে দিলে বোনটির খুব বড় ক্ষতি করা হবে। এর জন্য সারা জীবন ওর কষ্ট সহ্য করতে হবে এবং কখনো নিজের পায়ে দাঁড়াতে সক্ষম হবে না। বাবা-মা যেহেতু জন্ম দিয়েছেন, তাঁদেরও সন্তানদের ভুলের দায়িত্ব কিছুটা হলেও নিতে হবে। আপুকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার জন্য তুমি একা যথেষ্ট সাহায্য করতে পারবে না। পরিবারের সবাইকে এই মুহূর্তে অত্যন্ত মমতা ও স্নেহ নিয়ে ওর মনের কষ্টের সঙ্গী হতে হবে।
সবাই মিলে ওকে উত্সাহ দিতে হবে এবং ওর প্রতি যে তোমাদের অনেক আস্থা রয়েছে, সেই ধারণাটি আন্তরিকভাবে ওকে দিতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশনাল অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক মেহতাব খানম। তিনি আপনার মানসিক বিভিন্ন সমস্যার সম্ভাব্য সমাধান দেবেন। অল্প কথায় আপনার সমস্যা তুলে ধরুন।—বি. স.