বছরের শুরুতেই হোঁচট খেল শিক্ষার্থীরা
বেলা সাড়ে ১১টা। নগরের এনায়েত বাজারের রেলওয়ে হাসপাতাল কলোনি সিটি করপোরেশন উচ্চবিদ্যালয়ে জাতীয় পতাকা উড়ছে। বিদ্যালয় খোলা। শিক্ষকেরাও আছেন। কিন্তু মাঠ ও শ্রেণীকক্ষ ফাঁকা। কারণ হরতালের কারণে আসেনি ছাত্রছাত্রীরা। এটি গত মঙ্গলবারের চিত্র। শুধু মঙ্গলবার নয়, সপ্তাহের সাত দিনই এখন একই অবস্থা। হয় হরতাল, না হয় অবরোধ লেগেই আছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক উত্তম কুমার আচার্য প্রথম আলোকে বলেন, ‘শিক্ষকেরা সবাই সময়মতো স্কুলে হাজির হয়েছেন। কিন্তু হরতাল থাকায় শিক্ষার্থীরা আসতে পারেনি বলে শ্রেণী কার্যক্রম চলছে না। আমরা ভর্তির কাজ করছি।’
রেলওয়ে হাসপাতাল কলোনি উচ্চবিদ্যালয়ের মতো নগরের বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একই হাল। অথচ এই সময়ে শিক্ষার্থীদের পদচারণে মুখর থাকে বিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণ। কিন্তু এবার ব্যতিক্রম। বছর শুরু হয়ে দুই সপ্তাহ পার হতে চললেও এখনো ঠিকমতো ক্লাস শুরু হয়নি। ফলে শুরুতেই হোঁচট খেল শিক্ষার্থীরা।
প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২ জানুয়ারি থেকে সব প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান শুরুর দিন নির্ধারিত ছিল। ওই দিন বিনা মূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ উৎসব উদ্যাপন করা হয়। কিন্তু এরপর বিরোধী দলের টানা হরতাল কর্মসূচির কারণে এগোচ্ছে না শিক্ষা কার্যক্রম। আজ রোববার থেকে আবার অবরোধ শুরু হচ্ছে। এই মাসে আদৌ পাঠদান স্বাভাবিক করা যাবে কি না, এই নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানেরা।
বাংলাদেশ মহিলা সমিতি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ আনোয়ারা বেগম জানান, পাঠদান শুরু করতে না পারার চাপ শিক্ষক-শিক্ষার্থী উভয়ের ওপর পড়বে। কারণ ঠিক সময়ে প্রথম সাময়িক পরীক্ষা হয়ে যাবে। সিলেবাস শেষ করতে হিমশিম খেতে হবে শিক্ষকদের।
নগরের বিভিন্ন বিদ্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হরতালের মধ্যেও প্রায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিয়মমাফিক খোলা রয়েছে। শিক্ষক-কর্মচারীরাও হাজির হচ্ছেন। কিন্তু বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানে ছাত্রছাত্রীর উপস্থিতি কম থাকায় পাঠদান বন্ধ রয়েছে। কোনো কোনেটিতে শুধু দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের বিশেষ পাঠদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম নৌবাহিনী স্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষ এম জি সবুর বলেন, ‘খুব মনঃকষ্টে ভুগছি। বাচ্চাদের হাতে নতুন বই তুলে দিয়েছি। কিন্তু তারা এখন বিদ্যালয়েই আসতে পারছে না।’ এখানে প্রথম থেকে উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণী পর্যন্ত পাঠদান করা হয়। হরতালে নগরের সরকারি বিদ্যালয়ের প্রাত ও দিবা শাখায়ও কোনো শিক্ষার্থী উপস্থিত হয় না।
ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাসমত জাহান বলেন, ‘অবরোধের সময় মেয়েরা স্কুলে এলেও হরতালের দিনে আসে না। বাবা-মাও এ সময় তাদের পাঠাতে চান না।’ লালখান বাজার এলাকার বাসিন্দা অভিভাবক সাজ্জাদ হোসেন বলেন, নতুন বছরে নতুন বই পেয়ে ছেলেমেয়েদের মধ্যে অন্য রকম আগ্রহ সৃষ্টি হয়। এটা তাদের জানার স্পৃহাকে বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু বছরের শুরুতে স্কুলে যেতে না পারায় সে আগ্রহে এখন ভাটা পড়ল। তা ছাড়া হরতালে বাচ্চাদের কীভাবে বিদ্যালয়ে পাঠাব? কখন কোন বিপদে পড়ে তার কোনো ঠিক নেই। সাজ্জাদ হোসেনের মেয়ে পড়ে ডা. খাস্তগীর বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে।
চলমান পরিস্থিতির কারণে বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার কথা স্বীকার করে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপপরিচালক মোহাম্মদ আজিজ উদ্দিন বলেন, এ সময়টাকে বিভিন্ন বিদ্যালয় তাদের বাৎসরিক ক্রীড়া অনুষ্ঠানের কাজে লাগাতে পারে। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ক্লাস শুরুর উদ্যোগ নিলে অযথা সময় অপচয় হবে না।