
তাসলিমা আখতারের (ছদ্মনাম) নাম কখন কীভাবে ‘লুলু’ হয়ে গিয়েছিল, সেটা এখন আর কারও মনে নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় হঠাৎ বন্ধুদের কেউ একজন ‘লুলু’ ডাকা শুরু করেছিলেন। একজন থেকে আরেকজন...এভাবে আস্তে আস্তে সবার মুখে এই নাম ছড়িয়ে পড়ল।
‘লুলু, তোর অ্যাসাইনমেন্টটা দে তো।’
‘লুলু, লাঞ্চ করেছিস?’
‘হ্যালো লুলু, কই তুই?’
ব্যস, কীভাবে কীভাবে যেন লুলুটাই স্থায়ী হয়ে গেছে। লুলু নামের সঙ্গে এতটাই অভ্যস্ত হয়ে গেছেন, এখন বন্ধুরা ‘তাসলিমা’ বলে ডাকলে স্বয়ং তাসলিমাই নাকি চমকে ওঠেন!
বন্ধুবান্ধবের আড্ডায় নাম বদলে যাওয়া রীতিমতো স্বাভাবিক। ভালো ফুটবল খেলেন, এমন বন্ধুকে অন্যরা নাম দিয়ে ফেলেন মেসি। অর্থহীন ব্যান্ডের ‘বেজবাবা’ সুমনের ভক্ত বন্ধুটিকে বাকিরা হয়তো দুষ্টুমি করে ‘বেজবাবু’ বলে ডাকেন! লম্বা বন্ধুটার নাম হয়ে যায় তালগাছ। করপোরেট অফিসে ধোপদুরস্ত পোশাকে যে ‘বড় সাহেব’ বসে থাকেন, খোঁজ নিয়ে দেখুন, তাঁরও হয়তো বন্ধুমহলে উদ্ভট কোনো নাম আছে!
বন্ধু যদি আপনার নাম বদলে দেন, তাতে ‘কটাক্ষ’ নয়; বরং নির্ভেজাল ‘রসিকতা’ই থাকার কথা। কখনো কখনো নামবদলের পেছনে কোনো গল্পও থাকতে পারে। আমাদের ক্রিকেট মাঠের কথাই ধরুন। স্পিনার আবদুর রাজ্জাক যখন বল করেন, উইকেটের পেছনে দাঁড়িয়ে মুশফিকুর রহীম অনবরত বলে যান, ‘শাবাশ লাল্লা, শাবাশ...নাইস বল লাল্লা...।’ আবদুর রাজ্জাকের নাম কীভাবে ‘লাল্লা’ হলো! এক সাক্ষাৎকারে হাসতে হাসতে এই অভিজ্ঞ স্পিনার কারণটা বলেছিলেন, ‘২০০৪ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজে খেলতে গিয়েছিলাম। খেলার সময় গরমে লাল হয়ে যেতাম। আর সে সময় আমার একটা লাল টি-শার্টও ছিল। সুজন ভাই (খালেদ মাহমুদ) তখন এই নামটা দিয়েছিলেন। ওই থেকে লাল্লা নামটা ছড়িয়ে গেছে।’ ক্রিকেটারদের মধ্যে অনেকেরই এমন ‘কোডনেম’ আছে। সাকিব আল হাসানকে সতীর্থরা ডাকেন ‘ময়না’, মাশরাফি বিন মুর্তজাকে ডাকা হয় ‘পাগলা’।
২০১৪ সালে প্রথম আলোর শনিবারের ক্রোড়পত্র ছুটিরদিনেতে ‘ঢাকার এক খাবারশিকারি’ শিরোনামে এক তরুণের গল্প ছাপা হয়েছিল। অলিগলি ঘুরে নতুন নতুন খাবার চেখে দেখা তাঁর নেশা, নাম মো. সারোয়ার জাহান। বন্ধুরা ডাকেন অ্যালেক্স। সে সময় তাঁর নামবদলের পেছনে একটা মজার গল্প বলেছিলেন। ‘কলেজে পড়ার সময় সিক্স প্যাক বানানোর জন্য ব্যায়াম শুরু করেছিলাম। ফিগার ভালো ছিল। কাঁধ উঁচু করে হাঁটতাম। তখন টিভিতে রোবোকপ দেখাত। বন্ধুরা বলত, আমার হাঁটা নাকি রোবোকপের মতো! রোবোকপের নাম যেহেতু অ্যালেক্স, আমাকেও সবাই অ্যালেক্স ডাকতে শুরু করল। আমার আসল ডাকনাম রানা। আত্মীয়স্বজন-প্রতিবেশী-বন্ধুবান্ধবের মধ্যে ২৯টা রানা ছিল। আমি মোটু রানা, বেঁটে রানা, চশমু রানা...এমন কোনো খেতাব চাইনি। ভাবলাম, এর চেয়ে অ্যালেক্সই ভালো।’ এখন মো. সারোয়ার জাহানের ফেসবুক প্রোফাইলেও নামের সঙ্গে অ্যালেক্স জুড়ে দেওয়া আছে।
আপাতদৃষ্টিতে মজা করেই হয় এই নামবদল। কিন্তু মজার খোরাক জোগাতে গিয়ে বন্ধুর মনে কষ্ট দিচ্ছেন কি না, সেটাও ভেবে দেখা উচিত। কারও দুর্বলতাকে কটাক্ষ করে নাম দেওয়া ঠিক নয়।