
পয়লা বৈশাখের কেনাকাটা শুরু করেছেন? পোশাক তো কিনবেনই, তবে ষোলো আনা বাঙালি সাজের জন্য হাতের সাজে দরকার পড়বে বালা। অনেকে এদিন শাড়ির সঙ্গে কাচের চুড়ি পরেন। তবে কাঠ বা মাটির তৈরি মোটা বালা সাজে আনবে ভিন্নতা। শাড়ি থেকে শুরু করে যেকোনো পোশাকের সঙ্গে অনায়াসেই পরতে পারেন কাঠ কিংবা মাটির তৈরি কয়েকটি বালা।
বালার ধরন
একরঙা ও একটু চওড়া কাঠের বালার সময়কাল বেশ পুরোনো। এখন কিন্তু কাঠের ওপরেই বিভিন্ন নকশার বালা পাওয়া যাচ্ছে। কোনোটায় ফুল-পাতা আঁকা, আবার কোনোটায় কল্কি, চতুর্ভুজ আঁকা। শুধু রং দিয়ে নকশা করাই নয়, কাঠের ওপর খোদাই নকশাযুক্ত বালাও রয়েছে। আর শুধু একটি রং নয়, একই সঙ্গে দু-তিনটি রঙের মিশ্রণ রয়েছে তাতে। লাল কিংবা কালো বালার মধ্যে সোনালি ফুল ও কল্কি আঁকা। আবার উজ্জ্বল বেগুনি, গোলাপি, সবুজের সঙ্গে বিপরীতধর্মী রঙের ছোঁয়া। যেমন বেগুনির সঙ্গে হলুদ রঙের বৈপরীত্য।
আকৃতিতেও রয়েছে ভিন্নতা। শুধু গোলাকৃতিরই নয়, মাঝে চওড়া এবং চারপাশে সরু আকৃতির কিংবা পুরোটাই সরু চুড়ির মতো।
এ ছাড়া কাঠের ওপরই ছোট ছোট পুঁতি, কড়ি, কাঠের ছোট বল, সুতায় পেঁচানো বালাও রয়েছে বৈশাখী বালায়। ফ্যাশন হাউস বিবিয়ানার ডিজাইনার লিপি খন্দকার বলেন, ‘কাঠের ওপর সুতা পেঁচিয়ে এবার আমরা কিছু চিকন, মাঝারি আকৃতির চুড়ি তৈরি করেছি। এগুলো আপনি বালা হিসেবেও পরতে পারেন।’ আবার কাঠের ওপরে তালপাতা পেঁচানো হাতের বালাও পাওয়া যাচ্ছে।’
কাঠের পাশাপাশি মাটির তৈরি বালাও রয়েছে বাজারে। লাল, হলুদ রঙের ওপর সোনালি নকশায় আঁকা মাটির বালা। বালার সঙ্গে মাটির তৈরি ব্রেসলেটও রয়েছে এই তালিকায়। কাঠের বালার মতোই বিপরীত রঙের মিশ্রণ রয়েছে মাটির তৈরি এই বালায়। যেমন গাড় সবুজ রঙের ওপর হ্যান্ডপেইন্টেড লাল ও সোনালি কারুকাজ।
এ ছাড়া পোড়ামাটির এসব গয়নার মধ্যে রয়েছে গোলাপ বালা, পলা বালা।

যেমন পোশাকের সঙ্গে
তাঁত কিংবা সুতি শাড়ির সঙ্গে কগাছি বালা তো পরাই যায়। তবে বালার আকৃতি চওড়া হলে এক হাতে একটি পরলেই ব্রেসলেটের মতো দেখাবে।
আর বালার আকৃতি যদি চিকন হয়, তাহলে একসঙ্গে কয়েকটি পরতে পারেন। হাত ভরে বালা পরার চাইতে কয়েকটি পরলেই বেশ মানিয়ে যায়। চাইলে এক হাতে বালা, আরেক হাতে কাচের চুড়িও পরতে পারেন।
শুধু শাড়িই নয়, ঘেরযুক্ত লং স্কার্ট, ফতুয়া, কামিজ, কুর্তির সঙ্গেও পরতে পারেন বালা। লিপি খন্দকার বলেন, ‘ফতুয়া, স্কার্ট তো রয়েছেই, আজকাল কিন্তু একটু পাশ্চাত্যধর্মী যে পোশাকগুলো, সেগুলোর সঙ্গেও বালা পরা হচ্ছে। যেমন সেমি লং স্কার্টের সঙ্গেও কিন্তু এক-দুটি বালা পরাই যায়।’
শুধু পোশাকের রঙের সঙ্গে মিলিয়ে নয়, বরং একটু বিপরীতধর্মী রঙের বালা বেছে নিতে পারেন।
আরও আছে
কাঠ ও মাটির বালা ছাড়াও বেত, তালপাতা, রিঠা, কড়ি, ঝিনুক, বিভিন্ন ফলের বীজ, কাপড়, নারকেলের ছোবড়া দিয়ে তৈরি বালাও পরতে পারেন এই নববর্ষে।
যেখানে পাবেন
এক রঙের কাঠের বালা সহজেই পেয়ে যাবেন নিউমার্কেট, গাউছিয়া, দোয়েল চত্বরসহ যেকোনো মার্কেটে। আর বিভিন্ন রঙের কড়ি, ছোট বোতাম, তালপাতা বসানো কাঠের বালা পাবেন বিভিন্ন ফ্যাশন হাউস যেমন—আড়ং, বিবিয়ানা, মাদল, পিরান, মাদুলী, অরণ্যে। বিভিন্ন লেখাযুক্ত ও লোকজ মোটিফের বালা পাবেন আজিজ সুপার মার্কেটে। মাটির বালাও পাবেন এসব ফ্যাশন হাউসসহ চারুকলা, দোয়েল চত্বর, কর্ণফুলী মার্কেট ও বসুন্ধরা শপিং মলে।
দরদাম
বালার ডিজাইন, নকশার ওপর নির্ভর করবে এর দরদাম। শুধু একরঙা মাঝারি আকৃতির কাঠের বালার দাম পড়বে ১৫ থেকে ৪০ টাকা। নকশা কিংবা বিভিন্ন উপকরণে তৈরি বালার দাম পড়বে ৫০ থেকে ২৫০ টাকা।
মাটির বালার ক্ষেত্রেও তা-ই। সাধারণ ডিজাইন থেকে শুরু করে হ ্যান্ডপেইন্টের বিভিন্ন নকশাযুক্ত মাটির বালা পাওয়া যাবে ২৫ থেকে ৪০০ টাকার মধ্যে।