বর্ষায় ক্যামেরার সুরক্ষা

করোনা পরিস্থিতির কারণে সবাই মোটামুটি বাসায় শুয়ে-বসেই সময় কাটাচ্ছেন। বাইরে তেমন একটা বের হওয়া হচ্ছে না। ক্যামেরাটাও রয়েছে বাক্সবন্দী। ছবি তোলাটাও আপাতত বন্ধ। কিন্তু বাক্সবন্দী ক্যামেরার রয়েছে কিছু যত্নআত্তি। বিশেষ করে যাঁরা অপেক্ষাকৃত নতুন ব্যবহারকারী। অথবা যাঁরা প্রফেশনালি ফটোগ্রাফার নন, তাঁদের অনেকেই হয়তো বিষয়টি জানেন না। আসলে বর্তমান আবহাওয়া, অর্থাৎ বর্ষাকাল ক্যামেরার স্বাস্থ্যের জন্য একদমই ভালো নয়। সোজা বাংলায় যাকে বলা হয় ‘ভ্যাপসা’ আবহাওয়া। এ সময় বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ থাকে অত্যধিক। তার ওপর দেশের সব জায়গায় কমবেশি বৃষ্টি লেগেই থাকে, যা চলে বর্ষা ঋতুজুড়ে।

এ রকম আবহাওয়ায় ক্যামেরা বা লেন্স অরক্ষিত রাখলে ফাঙ্গাস হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। অরক্ষিত বলতে সিন্দুকে রাখার কথা বলছি না। বেশির ভাগ সময় সিন্দুকের মতো জায়গায় রাখার জন্যই ফাঙ্গাস হয় ক্যামেরা বা লেন্সে। কারণ, এসব জায়গা সাধারণত স্যাঁতসেঁতে হয়। ফাঙ্গাসজনিত সমস্যায় পড়েননি, এ রকম আলোকচিত্রী খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।

ছবি: পেকজেলসডটকম

ফাঙ্গাস দেখতে অনেকটা জালের মতো, যা গ্লাসের ওপর একটা পরত বা লেয়ার তৈরি করে। এ জন্য লেন্সের মধ্য দিয়ে আলো যাওয়ার সময় বাধাগ্রস্ত হয়। যার ফলে ছবির শার্পনেস কমে যেতে শুরু করে এবং কমতে কমতে একটা পর্যায়ে ছবিগুলো আর ব্যবহারযোগ্য থাকে না। এ জন্য ফাঙ্গাস থেকে বাঁচতে সবার ক্যামেরাগুলো একটু সাবধানে রাখতে হবে।

আদর্শ আর্দ্রতা

ক্যামেরা বিশেষজ্ঞরা সাধারণত ক্যামেরার আপেক্ষিক আর্দ্রতা ৩০ থেকে ৬০ শতাংশের মধ্যে রাখার পরামর্শ দেন। যদিও এ বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন মত রয়েছে, তবু মোটামুটি ৪৫ শতাংশ আপেক্ষিক আর্দ্রতাকে আদর্শ ধরা যেতে পারে। আপেক্ষিক আর্দ্রতা ৮০ শতাংশের বেশি হলে গ্লাসে মোটামুটি ফাঙ্গাস হওয়ার ঝুঁকি থাকে। আবার ২০ শতাংশের নিচের আর্দ্রতাও ক্যামেরার জন্য ভালো নয়।

ছবি: পেকজেলসডটকম

এ ক্ষেত্রেও ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এ ছাড়া আরেকটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে, বিষয়গুলো ক্যামেরা বা লেন্সের মডেলের ওপরও নির্ভর করে। ক্যামেরা বা লেন্স তৈরি করার সময়ই তারা এটা নির্ধারণ করে দেয়, এই যন্ত্রাংশ কী ধরনের আবহাওয়ায় টিকতে পারবে অথবা এই যন্ত্রের জন্য আদর্শ আবহাওয়া কোনটি।

যা করতে হবে

ক্যামেরা বা লেন্স অবশ্যই এয়ারটাইট বাক্সে সিলিকা জেলসহ রাখতে হবে। সিলিকা জেল এমন একটি উপাদান, যা বাতাসের আর্দ্রতা শোষণ করতে পারে।
বর্তমানে বাজারে ক্যামেরা যন্ত্রাংশ রাখার জন্যে ড্রাই বক্স কিনতে পাওয়া যায়। সেখানে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ করা হয়।

ছবি: পেকজেলসডটকম


সিলিকা জেল ব্যবহার করলে ভালো করে দেখে নিতে হবে যে সিলিকা জেলের রং ঠিক আছে কি না। সিলিকা জেল সাধারণত গাঢ় নীল রঙের হয়। অকার্যকর হয়ে গেলে হালকা ফ্যাকাশে হতে শুরু করে। আসলে আর্দ্রতা শোষণ করতে করতে ক্রমে ফ্যাকাশে হয়ে যায়।

বাতাসের আর্দ্রতা সম্পর্কে সব সময় ধারণা রাখতে হবে। আর্দ্রতা ৮০ শতাংশের বেশি হলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। দূরে কোথাও ঘুরতে অথবা ছবি তুলতে গেলে আগেই সেখানকার আবহাওয়া সম্পর্কে আগাম ধারণা নিয়ে নিতে হবে। মাঝেমধ্যে ক্যামেরা ও লেন্স রোদে দিতে হবে। কড়া রোদে বেশিক্ষণ রাখলে অনেক সময় যন্ত্রাংশগুলোর অসম এক্সপ্যানশনের জন্য শার্পনেস হালকা কমে যেতে পারে।

ছবি: পেকজেলসডটকম

এ জন্য সতর্ক হতে হবে। মাঝেমধ্যে চেক করে দেখতে হবে, গ্লাসে ফাঙ্গাস হয়েছে কি না। আলোর দিকে ধরলে গ্লাসের ওপরে ফাঙ্গাস অনেকটা মাকড়শার জালের মতো দেখায়। আর সিলিকা জেল না পাওয়া গেলে বিকল্প হিসেবে চাল ব্যবহার করা যেতে পারে। কারণ, চালের আর্দ্রতা শোষণের অসাধারণ ক্ষমতা রয়েছে। আর একান্তই ফাঙ্গাস অনেক বেশি হয়ে গেলে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। এরও সমাধান আছে। এ জন্য অভিজ্ঞদের পরামর্শ নিতে হবে। অনেক সার্ভিস সেন্টারেও ফাঙ্গাস দূর করা হয়।


লেখক: আলোকচিত্রী