বাবার বিশ্বাসেই আজকের আমি

আজ ২০ জুন, বাবা দিবস। বাবাকে ভালোবাসার বিশেষ এই দিন উপলক্ষে পাঠকের কাছে লেখা আহ্বান করেছিল গোদরেজ প্রটেক্ট ও প্রথম আলো অনলাইন। ‘বাবা, তোমাকে বলা হয়নি’ শিরোনামে বিপুলসংখ্যক পাঠক তাঁদের বাবাকে নিয়ে অনুভূতিমালা লিখেছেন। এখানে নির্বাচিত লেখাগুলোর একটি প্রকাশিত হলো।

অলংকরণ: তুলি

নিত্যানন্দ চক্রবর্তী, আমার বাপ্পি, এক সঞ্জীবনী শক্তির নাম। আমার জীবনে পথচলার আদর্শ, আমার শিক্ষাগুরু। সেই ছোটবেলা থেকে বাপ্পি শিখিয়েছেন কী করে শিরদাঁড়া সোজা করে বাঁচতে হয়। একজন মেয়ে হওয়া সত্ত্বেও কখনোই কোনো বৈষম্য আমাকে স্পর্শ করেনি। বাপ্পি আমাকে নিজেকে প্রথমে মানুষ ভাবতে শিখিয়েছেন। সত্যই সুন্দর, এ মহামন্ত্র তাঁর কাছেই পাওয়া। জীবনের লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে যত পারিপার্শ্বিক জটিলতার সম্মুখীন হয়েছি, সবকিছুর সামনে বাপ্পি ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছেন।

বাপ্পির সীমিত উপার্জন ছিল। কিন্তু আমাকে সর্বোচ্চ স্বস্তি দিতে কোনো হোস্টেলে রাখেননি, আত্মীয়ের বাসায় রাখেননি। বাসা ভাড়া করে রেখে পড়িয়েছেন। নিজের ক্ষমতার বাইরে গিয়েও মেয়ের আত্মসম্মানবোধে আঁচ লাগতে দেননি। আমার পূর্ণ স্বাধীনতা ছিল যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার। বাপ্পি বলতেন, থাকুক না নিজের মতো করে। বাবার ঘরেই তো মেয়ে মুক্ত বিহঙ্গের মতো ডানা মেলে বেড়াবে।

আমার প্রতিটি জয়ে দেখতাম বাপ্পির কী অপার আনন্দ! এক অগাধ বিশ্বাস তাঁর আমার ওপর। বাপ্পি বলতেন, আমার মেয়ে কোনো অন্যায় করতে পারে না, কখনো পরাজিত হতে পারে না। তাঁর এ বিশ্বাসেই আজকের আমি।

বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া, বিসিএস দিয়ে সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে যোগদান, এসব যেন তাঁর একেকটি স্বপ্নপূরণের ধাপ। মেয়ে যেন তাঁর বিশ্ব জয় করে ফেলেছে। চোখে–মুখে সেকি উচ্ছ্বাস!

এমন স্বাধীনতা, সম্মান, ভরসা হয়তো একজন বাবাই তাঁর মেয়েকে দিতে পারেন। এই হচ্ছেন আমার বাবা। আমার দেখা শ্রেষ্ঠ মানুষ, যাঁর সঙ্গে আমি প্রাণ খুলে কথা বলতে পারি, যাঁকে শাসনও করতে পারি।