বিশ্বসেরা হতে চান শাপলা

শাপলা আক্তার
শাপলা আক্তার

খেলাধুলার জন্য ক্লাব অনেক বড় একটা ব্যাপার। নিজের স্বাচ্ছন্দ্য না থাকলে কোনো খেলোয়াড়ই সেরাটা খেলতে পারেন না। আমি সেদিক থেকে সৌভাগ্যবান।
আট কি নয় বছর বয়স তখন। ছোট্ট মেয়ে হাতে তুলে নিল ব্যাডমিন্টন র্যা কেট। সেই শুরু। স্কুলে খেলতে খেলতে হয়ে গেল জাতীয় পর্যায়ের খেলোয়াড়। পাবনার শাপলা আক্তার এখন দেশের সেরা ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড়।
এত কিছু থাকতে ব্যাডমিন্টন খেলায় নাম লেখালেন! হাসেন তিনি। বললেন, ‘চািচ ছিলেন আমার স্কুলের ক্রীড়া শিক্ষক। আর আমার বড় বোন ছিলেন ভলিবল খেলোয়াড়। তাই খেলাধুলার প্রতি আগ্রহী ছিলাম।’ শাপলা শুরু করেন ছোটবেলার গল্প। তখন পড়তেন পাবনার সেন্ট্রাল গার্লস স্কুলে। চািচ হোসনে আরার তত্ত্বাবধানে শুরু করেন ব্যাডমিন্টন খেলা। ২০০৩ সালে ঢাকায় বাংলাদেশ শিশু একাডেমী আয়োজিত টুর্নামেন্টে একক চ্যাম্পিয়ন হয়ে বুঝিয়ে দেন, সেরা হওয়ার জন্যই ব্যাডমিন্টন কোর্টে পা রেখেছেন শাপলা। ২০০৫-০৬ সালে জুনিয়র, সাব জুনিয়র—সব বিভাগেই পদক জেতেন শাপলা। ওই বছরই যোগ দেন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ব্যাডমিন্টন গ্রুপে। ‘আমার প্রথম ক্লাব বিমান। আমি চেষ্টা করেছি তাদের হয়ে ভালো ফল করার। ওই সময় থেকেই সিনিয়র গ্রুপে খেলা শুরু করি। আর দেশের হয়ে মালয়েশিয়া খেলতে যাই তখনই। প্রথমবার অংশ িনই এশিয়ান জুনিয়র চ্যাম্পিয়নিশপে।’ বলেন শাপলা। ২০০৭ সালে নেপালে খেলতে যান তিনি। নিয়ে আসেন ব্রোঞ্জপদক। দ্বৈত বিভাগে কোয়ার্টার ফাইনাল এবং এককে সেমিফাইনাল পর্যন্ত যান তিনি।
২০০৭ সালে ক্লাব পরিবর্তন করে যোগ দেন নারায়ণগঞ্জের নিট কনসার্ন ব্যাডমিন্টন ক্লাবে। পাঁচ বছরের চুক্তিতে সাউথ এশিয়ান গেমসসহ দেশি নানা প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। নতুন পথচলায় আবারও পদক ঘরে আনতে থাকেন। সর্বশেষ ২০১৩ সালে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ গেমসে িনট কনসার্ন ব্যাডমিন্টন ক্লাব চ্যাম্পিয়ন হয়। এ টুর্নামেন্টে শাপলা একক, দ্বৈত ও মিশ্রতে স্বর্ণপদক নিয়ে চ্যাম্পিয়ন হন।

এর মধ্যে ২০১০ সালে একবার খেলা ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন তিনি। পরে আবার তাঁকে খেলায় নিয়ে আসেন িনট কনসার্ন ক্লাবের ব্যবস্থাপক ওয়াহিদুজ্জামান। মূলত তাঁর আগ্রহেই আবার খেলায় ফিরে আসা এবং এখনো একই ক্লাবে খেলে যাওয়া। এ বিষয়ে অবশ্য তাঁর বক্তব্য স্পষ্ট, ‘খেলাধুলার জন্য ক্লাব অনেক বড় একটা ব্যাপার। নিজের স্বাচ্ছন্দ্য না থাকলে কোনো খেলোয়াড়ই সেরাটা খেলতে পারেন না। আমি সেদিক থেকে সৌভাগ্যবান।’
এত সাফল্যের ভিড়ে খানিকটা কষ্ট আছে তার। ‘আমাদের দেশে ব্যাডমিন্টন খেলা বেশ উপেক্ষিত। গুটি কয়েক মানুষ পছন্দ করে বলেই এখনো টিকে আছে। দেশে-বিদেশে খেলার সুযোগ খুব কম। তবে সঠিক পৃষ্ঠপোষকতা পেলে অনেক প্রতিভাবান খেলোয়াড় উঠে আসবেন।’ বলেন শাপলা। এ কারণেই আপনমনে একটা স্বপ্নও দেখেন নিয়মিত। একদিন ঠিকই বিশ্বসেরা খেলোয়াড় হবেন। শুধু নিজের নয়, দেশের নাম উজ্জ্বল করবেন তিনি। এত দূর আসার পেছনে শাপলা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন বাংলাদেশ ব্যাডমিন্টন ফেডারেশনের যুগ্ম সম্পাদক এফ এম সামছুল আরেফিন ও িনট কনসার্ন ক্লাবের সাবেক কোচ মনোয়ারুল আলমের কাছে। শাপলা মনে করেন, এই দুজনের উৎসাহে এখনো ব্যাডমিন্টনের সঙ্গে বসবাস তাঁর।
বর্তমানে শাপলা পড়াশোনা করছেন যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগে। ব্যবসায়ী বাবা আবদুস সালাম পাঁচ মেয়ের মধ্যে সবার ছোট এ মেয়েকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেন নিয়মিত। বাবার স্বপ্নের পালে হাওয়া লাগিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন আমাদের শাপলা।