বিয়ে অস্বীকার...!

.
.

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক পাঠকের ই-মেইলে পাঠানো একটি সমস্যা হুবহু তুলে ধরছি। ‘প্রথম দিকে আমি আমার স্বামীর প্রেমের প্রস্তাবে রাজি ছিলাম না। তাকে প্রথমে এড়ানোর চেষ্টা করলেও শেষের দিকে আমিও দুর্বল হয়ে পড়ি। বিয়েতেও রাজি হয়ে যাই। তার এক বন্ধুর বাসায় এক মৌলভি ডেকে আমাদের বিয়ে হয়। তখন একটি কাগজে আমাকে সই দিতে বলে। কোনো কিছু যাচাই না করে সই করে দিই। বিয়ের বিষয় তার কথামতো গোপন রাখি। বিয়ের পর যে যার বাসায় থেকেছি। সে বলেছিল পড়াশোনা শেষ করেই সে আমাকে নিয়ে নতুন বাসায় উঠবে। প্রায় কয়েক মাস আমি পড়াশোনা শেষ করেছি। পড়াশোনা শেষ করার পর থেকে তাকে নতুন বাসা ঠিক করে আমাকে তুলে নিতে বলি। কিন্তু আজকাল সে বদলে গেছে। ফোন দিলে ধরে না। দেখা করে না, কথাও বলে না। সে তার বন্ধুর কাছে বলেছে, আমাদের নাকি বিয়েই হয়নি। সে বিয়েটি অস্বীকার করছে। আমি এ কথা জানার পর চোখে অন্ধকার দেখতে থাকি। তার মোবাইল নম্বরটিও বন্ধ থাকে। সে যদি আমাকে স্বীকৃতি না দেয়, তাহলে আমি কীভাবে আইনের আশ্রয় নিতে পারব? সে যদি বিয়ে অস্বীকার করে, তাহলে আমার কী করার আছে?’
আছে কি কোনো উপায়?
পাঠকের এই সমস্যার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় বিয়ে প্রমাণ করার জন্য প্রথমেই যেটি দরকার, সেটি হচ্ছে কাবিননামা। কোনো কারণে যদি কাবিননামা না থাকে বা কোন কাজি অফিসে বিয়ে হলো, এটা জানা না থাকে, তাহলে বিয়ে প্রমাণ করাটা একটু কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়ায়। তখন বিয়ের সময় কারা উপস্থিত ছিল, তাদের বক্তব্য বিয়ের কোনো ছবি বা অন্য কোনো দলিল থাকলে তা প্রমাণ হিসেবে দাঁড় করাতে হয়। তখন দেখতে হয় বিয়ে সম্পন্ন হওয়ার জন্য যাবতীয় উপাদান সঠিকভাবে পালন হয়েছে কি না।

মেয়েটি দণ্ডবিধি আইনের আশ্রয় নিতে পারে। দণ্ডবিধি আইনের ৪৯৩ অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি যদি কোনো নারীকে প্রতারণামূলকভাবে আইনসম্মত বিবাহিত বলে বিশ্বাস করান, কিন্তু আদৌ ওই বিয়ে আইনসম্মতভাবে না হয় এবং ওই নারীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করেন, তবে অপরাধী ১০ বছর পর্যন্ত যেকোনো মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবে।

যা করণীয়
বিয়ে পারিবারিকভাবে কিংবা নিজেদের পছন্দ অনুযায়ীই হোক না কেন, প্রত্যেকেরই নিজের কাছে কাবিননামা সংগ্রহে রাখা উচিত। আর নিজেদের উদ্যোগেই বিয়েটি কোন কাজির মাধ্যমে হলো, কোন কাজি অফিসে হলো, তা জেনে নেওয়া উচিত। পরে কাবিননামা উঠিয়ে রাখা উচিত। কাবিননামার ওপর কাজির সিল-স্বাক্ষর আছে কি না, যাচাই করে নিতে হবে। স্বাক্ষর দেওয়ার সময় একটু সতর্ক হয়ে দেখা উচিত এটার ওপরে ‘নিকাহনামা’ লেখা আছে কি না। মুসলিম বিয়ে নিবন্ধন বাধ্যতামূলক। এটা স্বামী-স্ত্রী দুজনকেই মনে রাখতে হবে। বর্তমানে হিন্দু বিয়ের নিবন্ধনও ঐচ্ছিক করা হয়েছে। অনেকে বিয়ের হলফনামাও সম্পন্ন করে থাকেন। এটিও ভবিষ্যতে বিয়ে প্রমাণ করার একটি দলিল হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।
লেখক: আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট
ই-মেইল: [email protected]