বিয়ের আগে বিয়ের ভাবনা

অনেকে বলেন, ‘বিয়ের জন্য প্রস্তুতি’ বিষয়টাই নাকি একটি মিথ। কেউ নাকি কখনো বিয়ের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত হতে পারে না। বিয়ে মানে আনন্দ, ভয়, টেনশন, উত্তেজনা, কাজের চাপ মিলেমিশে একাকার। আবার এটিই জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিন। তাই দিনটি যাতে যেমন কল্পনা করেছিলেন, সে রকমই হয়, সে জন্য দুজনেরই থাকে কিছু প্রস্তুতি।

বিয়ের দিনটি কেমন হবে, এটা নিয়ে বর-কনে দুজনেরই দীর্ঘদিনের ভাবনা থাকে। দুজনের ভাবনা, দুই পরিবারের ভাবনা একটা নির্দিষ্ট জায়গায় এসে মেলা জরুরি। হবু বর বা কনে কাউকেই বাড়তি মানসিক চাপ নেওয়া যাবে না। এতে বিয়ের দিন চোখ–মুখ ক্লান্ত দেখাবে।

নকশা বিয়ে উৎসবে’ সিয়াম ও অবন্তী দম্পতি
ছবি: আবদুস সালাম

এখন বিয়েতে বর-কনের আগ্রহ বেশি থাকে ছবি তোলায়। সে ক্ষেত্রে দুজনের পোশাক, সাজসজ্জা, আলো, ছবির পটভূমি—এগুলো আগে থেকেই ঠিকঠাক রাখতে হবে। অনেক সময় দেখা যায়, বিয়েবাড়িতে সবাই তৈরি। কিন্তু কনের দেখা নেই। কনে কোথায়—এর প্রচলিত উত্তর হলো পারলারে। এটা যেন না হয়। কীভাবে সাজবেন, আগেই ঠিক করে রাখুন। ফুলসহ আনুষঙ্গিক যা কিছু লাগবে, সব হাতের কাছে রাখুন। সময়ের সাজ সময়ে শেষ করা বিয়ের দিনে কনের সবচেয়ে বড় ও সবচেয়ে জরুরি চ্যালেঞ্জ।

অনেক সময় দেখা যায়, সবাই অপেক্ষা করছেন। কনের আর খোঁজ নেই। পারলারে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, ফুল আনতে পাঠানো হয়েছে একজনকে। ফুল নিয়ে আসার পর দেখা গেল, যে ফুল আনা হয়েছে, তা ঠিক মানাচ্ছে না। মনের ভেতর একটা খুঁতখুঁতানি রয়েই গেল। সেই অস্বস্তি বিয়ের দিনজুড়ে রইল। তাই কনেদের উদ্দেশে উইমেন্স ওয়ার্ল্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফারনাজ আলম বলেন, ‘বিয়েতে কে কী বলল, তার চেয়ে নিজে নিজেকে কীভাবে দেখতে চান, সেটিই গুরুত্বপূর্ণ। চোখ বন্ধ করুন। নিজেকে দেখুন। ডিটেইলস ঠিক করে ফেলুন। আগে থেকে সব পরিকল্পনা করা থাকলে দেরি হওয়ার কোনো কারণ নেই। যে বিয়ের সাজেই সাজুন না কেন, দুই ঘণ্টার বেশি লাগবে না কিছুতেই।’

পেশায় সাংবাদিক সজীব মিয়া সদ্য বিয়ে করেছেন। তিনি ধারণা দিলেন বরের প্রস্তুতি নিয়ে। বললেন, ‘কনেদের মতো বরদেরও অনেক মানসিক চাপের ভেতর দিয়ে যেতে হয়। আর বিয়ের দিন কনেদের মতো না হলেও বরদেরও সুন্দর দেখানো জরুরি। আমি স্পা, ম্যাসাজ, ফেসিয়াল করিয়েছিলাম। এসব যে কেবল বিয়ের দিন সুন্দর দেখানোর জন্য, তা-ই নয়, সঙ্গে মানসিক চাপও কমায়। চুল–দাড়ি কাটার একটা ব্যাপার থাকে। এটা বিয়ের দিন সকালে না করে চার–পাঁচ দিন আগে করলেই ভালো, যাতে কাটটা সুন্দরমতো সেট হয়।’

বিয়ে উৎসবের আরেকটি ছবি
ছবি: প্রথম আলো

আয়ুর্বেদিক রূপ বিশেষজ্ঞ রাহিমা সুলতানা বর ও কনের বিয়ের প্রস্তুতি নিয়ে জানান, বিশেষ এই দিনে দুজনকেই সবচেয়ে সুন্দর দেখানোর বিকল্প নেই। হবু বউ একটা স্ক্রাবিং করতে পারেন। এ জন্য এক টেবিল চামচ কাঠবাদামের গুঁড়া, এক টেবিল চামচ টকদই, মধু আর এক টেবিল চামচ মালিশের ক্রিম নিতে হবে। এটা সারা শরীরে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে লাগাতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত কাঠবাদামের গুঁড়োগুলো শরীরের সঙ্গে মিশে না যায়, ততক্ষণ পর্যন্ত এটা করতে হবে। এতে ত্বকের মৃত কোষগুলো উঠে যাবে। আর ত্বক সতেজ দেখাবে।

এর সঙ্গে একটা প্যাক লাগাতে হবে। কাঁচা হলুদ, বেসন, দুধ, গোলাপ জল, চন্দন পাউডার মিশিয়ে প্যাকটা তুলির মাধ্যমে পুরো শরীরে লাগানো হবে। এটা দেওয়ার পর ২০ মিনিট একটা চাদর দিয়ে শরীর ঢেকে রাখতে হবে, যাতে ঠান্ডা না লেগে যায়। এরপর ভালোভাবে গোসল করতে হবে। এটা মুখে, হাতে, পায়েও লাগাতে হবে। এই গেল কনের প্রস্তুতি।

এদিন বর ও কনে দুজনকেই সুন্দর দেখানো চাই
ছবি: প্রথম আলো

আর হবু বর একটু হার্ড স্ক্রাব করতে পারেন জানিয়ে রাহিমা সুলতানা বলেন, ‘এ জন্য অ্যাপ্রিকট স্ক্রাব কিনে নিতে পারেন বাজার থেকে। অথবা বাড়িতে চালের গুঁড়া, টক দই, গোলাপ জল আর ম্যাসাজ ক্রিম মিশিয়ে স্ক্রাবার বানিয়ে নিতে পারেন। এটা সারা শরীরে, মুখে, হাতে, পায়ে লাগিয়ে গোসল করে নেবেন। হয়ে গেলে একটু লোশন লাগিয়ে নেবেন। ময়েশ্চারাইজার লাগাবেন। বর–কনে যদি বিয়ের আগে এক মাসে প্রতি সপ্তাহে একবার এটা করেন, ভালো উপকার পাবেন। মাসে চার দিন না হলেও অন্তত শেষ দুই সপ্তাহ যেন করেন।’

যাহোক, শুরু হয়ে গেছে বিয়ের মৌসুম। চারপাশে সাজ সাজ রব। নতুন জীবন শুরু করতে চলা হবু বর-কনেদের জন্য শুভকামনা।