কিছুদিন আগেই অ্যাঞ্জেলিনা জোলির একটা ছবি ভাইরাল হলো। সারা গায়ে মৌমাছি। আর হাসি হাসি মুখ করে ক্যামেরার সামনে পোজ দিচ্ছেন তিনি। ১৯৮১ সালে মার্কিন আলোকচিত্রী রিচার্ড এভেডনের তোলা বিখ্যাত আলোকচিত্র ‘দ্য বি কিপার’-এর আদলে তোলা হয় জোলির ছবিটি। ঝুঁকিপূর্ণ কাজটি জোলি একটি কারণেই করেছেন আর সেটা হলো, বিশ্বে মৌমাছির সংখ্যা যাতে বাড়ে, সেই বিষয়ে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা। কেননা, মধুর গুণের শেষ নেই। রসনা, স্বাস্থ্য থেকে সৌন্দর্য—সবখানেই চলছে মধুর গুণকীর্তন। রূপচর্চায় যা কিছু শত শত বছর ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে, মধু এগুলোর মধ্যে প্রাচীনতম। জেনে নেওয়া যাক, রূপবর্ধনে মধু কীভাবে কলকাঠি নাড়তে পারে:
‘ম্যাজিক্যাল অ্যান্টি-অ্যাজার’ মধু
প্রকৃতির অন্যতম সেরা উপহার মধু। কোলাজেন তারুণ্য ধরে রাখার জন্য জরুরি একটি প্রোটিন। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীর কোলাজেনের তৈরি কমিয়ে দেয়। কিন্তু মধু আবার কোলাজেন তৈরিতে সহায়ক। এ জন্য মধুকে বলা হয় ‘ম্যাজিক্যাল অ্যান্টি-অ্যাজার’। তারুণ্য ধরে রাখতে জুড়ি নেই মধুর।
ময়েশ্চারাইজার হিসেবেও নামডাক আছে মধুর
মধুতে এমন সব এনজাইম থাকে, যেগুলো বাতাস থেকে জলীয় কণা ত্বকের ভেতরে টেনে নেয়। ফলে ত্বক হাইড্রেড থাকে। বলা হয়ে থাকে, প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার হিসেবে মধু সেরা। নিয়মিত মধু ব্যবহারে অল্প সময়েই সুফল পাওয়া যায়। ত্বকের রুক্ষতা কমে আসে। ত্বক নমনীয় আর উজ্জ্বল করে।
অ্যাকনি সারাতে মধু
ব্রণে মোটামুটি সব বয়সের মানুষের কপালের ভাঁজ গভীর হয়। মধুর অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টিসেপটিক, অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি গুণ আছে। তাই ত্বকে অ্যাকনি, আঘাত বা অন্য কোনো সমস্যা থাকলেও তা সহজে সারিয়ে তুলবে মধু। তা ছাড়া মৃত কোষ তুলে ফেলা ও ত্বকের গভীরে জমে থাকা ময়লা তুলে আনার জন্যও ব্যবহার করতে পারেন মধু। এ ছাড়া টিস্যুর পুনর্গঠনেরও কাজ করে। ত্বকের লালচে ভাব ও জ্বালাপোড়া কমায়। মুখের কালো দাগও দূর করে মধু।
বিশেষজ্ঞ পরামর্শ
হার্বস আয়ুর্বেদিক স্কিন কেয়ার ক্লিনিকের আয়ুর্বেদিক রূপবিশেষজ্ঞ আফরিন মৌসুমি বললেন, ‘এখন তো বাজারে চাষের নানা রকম মধু এসেছে। তবে সবচেয়ে ভালো শত ফুলের মধু। তৈলাক্ত ত্বকে ব্যবহারে অনেক সময় সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে শুষ্ক ত্বকের জন্য মধু খুবই ভালো ফল দেবে।’
রূপচর্চায় মধুর ব্যবহারবিধি
১. মুখের উজ্জ্বলতার জন্য আধা চা-চামচ মধু ও আধা চা-চামচ টমেটোর রস মিলিয়ে বানিয়ে নিতে পারেন ফেসপ্যাক। এর ঘনত্ব বাড়াতে চাইলে আধা চা-চামচ মসুর ডালের বেসন যোগ করতে পারেন। এ ছাড়া আধা চা-চামচ মধু ও আধা চা-চামচ শসার রস মিলিয়েও প্যাক তৈরি করা যায়। তরল বা গুঁড়া দুধের সঙ্গে সামান্য পরিমাণ মধু মেলানো প্যাকও ব্যবহার করতে পারেন।
২. সমপরিমাণ দুধ ও মধু মিশিয়ে ক্লিনজিং ক্রিম তৈরি করতে পারেন। কাচের বয়ামে মুখ বন্ধ করে ফ্রিজে রেখে দিলে এক সপ্তাহ পর্যন্ত ব্যবহার করা যায়। প্রতিদিন গোসলের আগে ২০ মিনিট এই মিশ্রণ মুখে লাগিয়ে নিন।
৩. গোসলেও ব্যবহার করতে পারেন মধু। ২ টেবিলচামচ মধু ১ কাপ গরম পানিতে ভালোভাবে মেশান। তারপর এক বালতি পানিতে ঢেলে দিন সেই মধুমিশ্রিত গরম পানি। সেই পানি দিয়ে গোসল করুন। এতে ত্বক পরিষ্কার থাকবে, ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ থেকেও ত্বক রক্ষা পাবে।
৪. ব্রণের স্থানে সিকি চা-চামচ মধু ও লবঙ্গগুঁড়া (মধুর সমপরিমাণ) মিশিয়ে প্যাক হিসেবে লাগান। ব্রণ দূর না হওয়া পর্যন্ত প্রতিদিনই ব্যবহার করুন।
৫. ১টি পাকা কলা, আধা কাপ টক দই, ১টি ডিম ও ১ চা-চামচ মধু দিয়ে প্যাক বানান। সপ্তাহে এক দিন চুলের ‘মধু’ময় যত্ন নিতে পারেন।
৬. কন্ডিশনার হিসেবেও ব্যবহার করা যাবে মধু। ২ টেবিল চামচ নারকেল তেলে ১ টেবিল চামচ মধু মেশান। চুলে ভালোমতো মালিশ করুন। ২০ মিনিট রেখে শ্যাম্পু করে ফেলুন।
৭. শ্যাম্পু করার সময়ও ব্যবহার করতে পারেন মধু। যে শ্যাম্পু ব্যবহার করেন, তার সঙ্গে ১ টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে দিন। তারপর যেভাবে শ্যাম্পু করেন, সেভাব