মনের বাক্স

মনের বাক্স

তোকে অকালে হারালাম আমরা

বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের একদম শুরুতেই তোর সঙ্গে আমাদের পরিচয়। পরিচিতিমূলক (ওরিয়েন্টেশন) ক্লাসের দুদিন পরই শুরু হয় আমাদের আন্তবিভাগীয় ক্রিকেট টুর্নামেন্ট। সেই টুর্নামেন্টেই তোর সঙ্গে আমাদের সাক্ষাৎ। সেখানেই আমরা একে অপরকে খুব কাছ থেকে দেখি, সেই থেকে শুরু। একেকটা বছর পার করে শেষ হয় আমাদের স্নাতক। এই চলার পথে অসংখ্য স্মৃতি। তুই কাকা বলে বন্ধুদের সবাইকে সম্বোধন করতি। তোর কাকা ডাকে সবাই অনেক মজা পেত।

এই বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ঘটে যাওয়া অসংখ্য স্মৃতিময় ঘটনার সাক্ষী ছিলি তুই। সেসব স্মৃতিময় ঘটনাকে অতীত করে হঠাৎ আমাদের তোলপাড় করে দিল একটি নতুন খবর। তোর দুটি কিডনি নষ্ট হয়ে গেছে। এরপর বন্ধুদের মধ্যে শুরু হয় তোর জন্য কিছু করার চেষ্টা। আমাদের ব্যাচের বন্ধুরা যে যার মতো সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে। আমরা ঘুরে বেড়িয়েছি যশোর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে, মানুষের দ্বারে দ্বারে।

অসংখ্য স্থানে ঘুরে আমরা তোর জন্য প্রায় ছয় লাখ টাকা জোগাড় করতে পারলাম। আমরা আমাদের জায়গা থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। তবে এখন মনে হয়, আমরা যদি পারতাম আরও কিছু করতে।

তোকে আমরা ভারতে পাঠাই চিকিৎসার জন্য। দেশে ফিরে নিয়মিত ডায়ালাইসিস ঠিকঠাক চলছিল। আমরা খুঁজে বেড়িয়েছি কিডনিদাতা। এরপরই আমাদের দেশে করোনার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ল। ১৮ মার্চ দুপুর ১২ টার মধ্যে আমরা সবাই হল ত্যাগ করে যে যার গন্তব্যে চলে আসি।

কাকা তুই সব সময় বলতি, ১৩ সংখ্যাটা তোর জন্য আনলাকি। সেটাই সত্যি হলো। ১৩ মে ২০২০, তুই আমাদের রেখে পৃথিবীর মায়া ছেড়ে চলে গেলি। তোর সঙ্গে আর শেষ দেখাও হলো না। তোকে বলার মতো অসংখ্য কথা না বলাই থেকে গেল। প্রিয়জন হারানোর যন্ত্রণা যে কী, সেদিন বুঝেছি। ভালো থাকিস বন্ধু।

মো. আজাদুল ইসলাম, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

ভালোবাসা ভালো থাকুক

যাকে ছাড়া একটা দিন থাকা ছিল অসম্ভব, যার সঙ্গে একটা দিন কথা না হলে পাগলের মতো করতাম, কোনো কিছুতে মন দিতে পারতাম না। আজ কত দিন হয়ে গেল, সেই মানুষটার সঙ্গে একবারও কথা হয়নি। দিনের হিসাবে হয়তো বেশি নয়। কিন্তু আমার কাছে মনে হচ্ছে, কয়েক বছর হয়ে গেছে তাকে দেখি না। তার কণ্ঠস্বর শুনি না।

ভালোবাসার মানুষটা এমন করে পর হয়ে যাবে, কখনো ভাবিনি। যে একটা সময় আমার ছিল, আজ সে অন্য কারও হয়ে গেছে। তোমাকে দোষ দেব না। হয়তো আমাদের নিয়তি এমনই ছিল। তোমাকে ছাড়া আমি কেমন থাকতে পারি, তা তুমি নিজেও জানো। জানি, তুমি চাইলেও আর আমার কাছে ফিরতে পারবে না। তাই যেখানেই থাকো, ভালো থেকো।

সাগর মৈত্র, রাজবাড়ী

প্রিয় মানুষ

ভাগ্যের কী অদ্ভুত পরিহাস! প্রিয় মানুষটির সঙ্গে দেখা করে চলে এলাম। সময় যে কীভাবে চলে গেল, টেরই পেলাম না। এক বিচিত্র অনুভূতি কাজ করছিল মনের ভেতর। মনে হচ্ছিল এ যেন সত্যি নয়, সবই মায়া, সবই ছলনা! এখনই জেগে উঠব দিনের ব্যস্ততায়। কিন্তু না, প্রিয় মানুষটি যে চোখের সামনেই বসে আছে। ধরে দেখছে আমার চুল, ছুঁয়ে দেখছে আমার হাত। আর আমি? আমি যে তার চোখের দিকে তাকিয়েই পার করে দিলাম সময়। আমাদের দুজনেরই ফরসা গালগুলো হয়ে উঠছে গোলাপের মতো লাল। আর চোখে খেলা করছে ভবিষ্যতে একসঙ্গে ঘর বাঁধার স্বপ্ন।

প্রিয় মানুষ এত ভালো হয় কী করে?সে এত ভালো আমাকে বুঝে উঠে কীভাবে? আমার চুলগুলো কানের পেছনে টেনে নিয়ে বলে, ‘পাগলি মেয়ে, তুমি শুধু আমার।’ কথাটি শোনার পর আশপাশের সবকিছু যেন সাদা হয়ে গেল, সবকিছু হয়ে গেল নিশ্চুপ। যেন সে আর আমি ছাড়া এ পৃথিবীতে আর কেউ নেই। সে পরম ভালোবাসায় আমার হাতে পরিয়ে দিল মুক্তার চুড়ি। এটা সে বানিয়েছে আমার জন্য। যতই বলি, এ অনুভূতি যে ব্যাখ্যা করা যায় না। এসবের মধ্যে ভাগ্যের পরিহাস কেন বললাম? কারণ, সুন্দর মুহূর্তগুলো বেশিক্ষণ থাকল না। ফিরে গেলাম আমি আমার দুনিয়ায়, আর সে চলে গেল তার দুনিয়ায়। আমার দুনিয়ার দানবেরা ভেঙে দিল আমাদের সব যোগাযোগ। এমন নয় যে তাকে ছাড়া আমি বাঁচতে পারব না। আমি পারব। কিন্তু আমি সেটা চাই না।

মাইশা চৌধুরী, ধানমন্ডি,

আমি এ দেয়াল ভাঙতে চাই

প্রিয় আপা

আজ আমি বেশ বড় হয়েছি। বড় হওয়ার পাশাপাশি পৃথিবী সম্পর্কে আমার যে উপলব্ধি হয়েছে, তা সাংঘাতিক। আমি এখন নিজেকে ছাড়া কাউকেই আপন ভাবতে পারি না। বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে আমি সম্পূর্ণ একা। তুই কি জানিস, তোর সঙ্গে আমার যে সম্পর্ক তা কেবল আনুষ্ঠানিক। আমি বারবার চেয়েছি আনুষ্ঠানিকতার প্রলেপ মুছে ফেলতে। কিন্তু সমাজটাই যে আনুষ্ঠানিকতার মোড়কে আবৃত। এর থেকে বের হওয়া সম্ভব নয়। আমার খুব কষ্ট হয়। আমি আমার পরিবারের কারও কাছেই মন খুলে কিছু বলতে পারি না।

সব সময় মনে হয়, একটা অদৃশ্য দেয়াল বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। হয়তো তোরাই এ দেয়াল তৈরি করেছিস, নয়তো আমি। কিন্তু কেউ সেটা ভাঙিনি।

আমি এ দেয়াল ভাঙতে চাই। আমি প্রাণ খুলে হাসতে চাই, মন খুলে কথা বলতে চাই। আমি পৃথিবীর দেওয়া উপলব্ধিটা মিথ্যা প্রমাণ করতে চাই।

আকাশ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

অভাবে নাকি স্বভাব নষ্ট

হালখাতার এক বছর গত হলেও আনন্দের দোকানের বকেয়া পরিশোধ করতে পারিনি। কীভাবে করব? দেশের সর্বনিম্ন মজুরিতে একটি কোম্পানিতে চাকরি করি। বেতনের সিংহভাগ টাকা চলে যায় এনজিওর কিস্তি পরিশোধে। অবশিষ্ট যা থাকে, তা দিয়ে আমি কোনোরকম অর্ধাহারে মাস পার করি। বাড়িতে চারজন সদস্য, অথচ আমি একটি কানাকড়িও পাঠাতে পারি না। বৃদ্ধা মা, অসুস্থ স্ত্রী, পুত্রবধূ, বেকার ছেলে বাড়িতে দুর্বিষহ জীবন যাপন করছে। এর মধ্যে আনন্দের ফোন, ‘ভাই, ৪ ফেব্রুয়ারি আমার মেয়ের বিয়ে। আপনার টাকার ওপর বিয়ের বাজার নির্ভর করছে।’

মেয়ের বিয়ের টাকাটা না দিতে পারলে আমি আর ওকে কোনো দিন মুখ দেখাতে পারব না। কীভাবে টাকার জোগাড় হবে, কিছুই ভাবতে পারছি না। সারাক্ষণ টাকার চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। এমন অবস্থায় আজ ডিউটির সময় ১৮ হাজার টাকা আর পাসপোর্ট সাইজের তিনটা ছবি আমার সামনে পড়ে আছে দেখলাম। আশপাশের সবাই যে যার মতো ব্যস্ত। আমি টাকাগুলো তুলে পকেটে রেখে ভাবছি, এ টাকা দিয়ে আপাতত আমার সাময়িক কিছু সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। প্রায় ১ ঘণ্টা পর এক তরুণীর সঙ্গে বৃদ্ধ নারীকে দেখলাম গালাগাল করতে করতে আমার সামনে ব্যাগ ঢেলে টাকা খুঁজতে লাগলেন। পাশে দুই বছরের বাচ্চা কোলে আরেকজন নারীও। তরুণীর মুখে টাকা হারানোর বেদনার ছাপ স্পষ্ট দেখে আমি আমার সমস্যা ভুলে গেলাম। টাকাগুলো তরুণীর হাতে তুলে দিলাম।

মো. জোমারত হোসেন, সিরাজগঞ্জ।

লেখা পাঠানোর ঠিকানা

অধুনা, প্রথম আলো, প্রগতি ইনস্যুরেন্স ভবন, ২০–২১ কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।

ই-মেইল: [email protected], ফেসবুক: facebook.com/adhuna.PA খামের ওপর ও ই-মেইলের subject–এ লিখুন ‘মনের বাক্স’