মহাশিক্ষা পাঠশালা

সব বন্ধুকে অমর একুশের শুভেচ্ছা জানাই। বন্ধুরা, নিশ্চয়ই মনে আছে, সারা দেশে আমরা এবার সব বন্ধুসভা একটি করে দেয়ালিকা প্রকাশ করছি। আর যার যার এলাকার শহীদ মিনার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করছি।
বন্ধু কাবিলকে নিয়ে আজকের অণুকথা।
কাবিল হোসেন পড়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। মন পড়ে থাকে তার গ্রাম চুয়াডাঙ্গার জয়রামপুর বাড়ইপাড়ায়। গ্রামের প্রতি তার প্রচণ্ড টান। গ্রামের অসহায় শিশুদের সে শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে চায়। তাই খুলেছে স্কুল। স্কুলের নাম ছালেহা খাতুন মহাশিক্ষা পাঠশালা। নিজে পড়ায়। আর যখন সে বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকে, বাচ্চাদের পড়ানোর কাজটা আরেকজনকে দিয়ে আসে।
কাবিলের মন নেচে ওঠে হুটহাট বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে গেলে। কারণ, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হলেই সে গ্রামে যেতে পারবে। বাচ্চাদের প্রাণভরে পড়াবে।
কাবিলের বাবা নেই। ঘরে নুন আনতে পান্তা ফুরায়। নিতান্ত দরিদ্র পরিবার।
জানতে চাই, ‘কীভাবে চলে তোমার?’
‘টিউশনি করে আমার সব খরচ চালাই।’
‘মা আছেন?’
কাবিল সহজভাবেই বলে, ‘আছে। মা বাড়িতে বাড়িতে কাজ করেন। তাঁর চেষ্টাতেই আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারছি।’
আমি চুপ করে থাকি। কাবিল আবার শুরু করে।
‘মা একটা গরু পুষতেন। সেটা বিক্রি করে আমাকে জাহাঙ্গীরনগরে পাঠিয়েছেন পড়াশোনা করতে।’
আমার মুখে কোনো কথা সরে না। তবে কাবিলের কথা থামে না। কাবিল বলতেই থাকে।
‘জয়রামপুরের শিশুদের নিয়ে আমি স্থায়ী একটি স্কুল করতে চাই। যে স্কুলের নাম দিয়েছি ছালেহা খাতুন মহাশিক্ষা পাঠশালা, আমার মায়ের নামে।’
কাবিলের দিকে আমি নিষ্পলক তাকিয়ে থাকি। কাবিল বলে, ‘তাকিয়ে তাকিয়ে কী দেখছেন, আমি জয়রামপুরের সব অসহায় শিশুকে অ, আ শেখাতে চাই। পড়াশোনা করাতে চাই।’
কাবিল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়বন্ধুসভার সদস্য। কাবিলকে সামনে রেখেসারা দেশের বন্ধুদের আবারও অমর একুশের শুভেচ্ছা।