মা-বাবা যখন কথা শোনেন না

কোনো খাবারে চিকিৎসকের নিষেধাজ্ঞা থাকলে সন্তান বাবাকে তা খেতে নিষেধ করতেই পারে। মডেল: মাহফুজুর রহমান ও সোনিয়া, ছবি: অধুনা
কোনো খাবারে চিকিৎসকের নিষেধাজ্ঞা থাকলে সন্তান বাবাকে তা খেতে নিষেধ করতেই পারে। মডেল: মাহফুজুর রহমান ও সোনিয়া, ছবি: অধুনা

একটা সময় মা-বাবা আমাদের শাসন করেছেন। তাঁদের বয়স হলে সন্তান হিসেবে আমরাও করি। কেননা, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কিছু কিছু রোগ যেমন ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, কোলেস্টেরল, বাতের ব্যথা, ওজনের আধিক্যসহ নানা রোগব্যাধি পেয়ে বসে। মা-বাবা অনেক সময় নিজেদের শরীর-স্বাস্থ্যের ঠিকমতো যত্ন নিতে চান না অথবা নেন না। আবার বেশি বয়স হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শিশুর মতোই অবুঝ হতে থাকেন। প্রত্যেক মানুষ অবুঝ শিশু থেকে বড় হয় আবার একসময় অবুঝ শিশুর মতোই আচরণ করে। এটাই নিয়ম। আমরাও যখন বৃদ্ধ হব, আমাদের অবস্থাও সেই রকমই হবে।

এরই মধ্যে চিকিৎসক হয়তো কিছু রোগের জন্য দীর্ঘমেয়াদি ওষুধ দিয়েছেন। একে অসুখে শরীর কাহিল, অন্যদিকে ওষুধ খেতে হবে সারা জীবন। শরীর ও মনে ক্লান্তি আর হতাশা। সেই ওষুধ ঠিকমতো খান না অনেক সময়। সেটাও দেখার দায়িত্ব সন্তানের। দীর্ঘমেয়াদি ওষুধ খাওয়া বা সারা জীবনের জন্য ইনসুলিন নেওয়া এমনিতেই যেকোনো বয়সের মানুষের জন্য কষ্টসাধ্য ব্যাপার। অনেকেই তা নিয়মিত গ্রহণ করেন না বা ভুলে যান। শরীর খারাপ হতে থাকে। শরীর খারাপ মানে মন খারাপ। অনেকে আবার কখন কীভাবে ওষুধ গ্রহণ করতে হয়, তা মনে রাখতে পারেন না। বারবার বলার পরও না খেলে রাগ না করে ভালোভাবে বুঝিয়ে বলুন কেন ওষুধ খাওয়া দরকার।

কাজের ব্যস্ততা ও অন্যান্য অজুহাত দেখিয়ে অথবা পারিপার্শ্বিক অবস্থার দোহাই তুলে কখনো মা–বাবার সেবাযত্নের অবহেলা করা উচিত নয়। বিশেষ করে বয়স্ক মা–বাবা যাতে কোনো ধরনের কষ্ট না পান, তা দেখা প্রত্যেক সন্তানের দায়িত্ব। প্রয়োজনে বছরে অন্তত একবার চিকিৎসকের পরামর্শে রুটিন রক্ত পরীক্ষা, এক্স-রে, ইসিজিসহ প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানো। তাঁরা করাতে চান না বেশির ভাগ সময়। সন্তানদের উচিত জোর করে নিয়ে যাওয়া।

আবার অনেক বাবা-মা আছেন, যাঁদের চোখে তাঁর সন্তানেরা কখনোই বড় হন না। এমন অনেক ঘটনা আছে যে অনেক বড় চিকিৎসকের মা-বাবা তাঁর দেওয়া পরামর্শ বা চিকিৎসা নিতে চান না। এমন এক ঘটনা, একজন প্রখ্যাত চিকিৎসক তাঁর মাকে রক্তচাপ মেপে দেখেন রক্তচাপ অনেক বেশি। কিন্তু তাঁর মা কোনো সমস্যা বোধ করেন না। প্রাথমিক কিছু ব্যবস্থা গ্রহণের পরও যখন উচ্চরক্তচাপ কমছে না, তখন আসন্ন বিপদ চিন্তা করে ওই চিকিৎসক নিজেই ওষুধ দিয়েছেন যেন রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। কিন্তু মা তা নিতে আগ্রহী নন। একবার বলেই বসেন, ‘তোরে এই সেদিন কোলে–পিঠে মানুষ করলাম, তুই কী বুঝিস? আমার কোনো সমস্যা হচ্ছে না।’ চিকিৎসক বিপদে পড়ে যান কী করবেন। এমন সময় একটা বুদ্ধি করেন। অন্য চিকিৎসককে বিদেশি বড় চিকিৎসক সাজিয়ে তাঁর কাছ থেকে লিখিয়ে নেন ওষুধ, তবে যদি ওষুধ খেতে রাজি হন। সে যাত্রায় চিকিৎসক তাঁর মাকে ওষুধ খাওয়াতে পেরেছিলেন।

আমাদের মাথায় আগেই ঢোকাতে হবে যে এই বয়সে বা বাবা-মা যা–ই বলুন না কেন, তাঁদের স্বাস্থ্যের ব্যাপারে আমাদের সচেতন হতে হবে বেশি। যাঁকে দিয়ে বললে বা যেভাবে বোঝালে কাজ হবে বা না বুঝতে চাইলেও ধৈর্যসহকারে তাঁদের ওষুধ খাওয়ানো বা চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। এই বয়সে একই কথা বারবার বলতে হতে পারে বা প্রতিদিন ওষুধ খেতে ভুলে পারেন।

মা-বাবা হয়তো মিষ্টিজাতীয় খাবার খেতে পছন্দ করেন। এতে তাঁদের ডায়াবেটিস বেড়ে যেতে পারে। তাঁদের সেটা খাওয়া থেকে বিরত রাখতে হবে। চিনি ছাড়া প্রিয় খাবারটি কিনে বা বানিয়ে এনে দিতে পারেন। নিয়মিত হাঁটা, সঠিক সময়ে ঘুমানো এগুলো ঠিকমতো করছেন কি না, তা খেয়াল রাখতে হবে। সন্তানের জন্য মা-বাবার সুস্থতা প্রয়োজন, সেটা তাঁদের উপলব্ধি করাতে হবে।

লেখক: চিকিৎসক