আজ বিশ্ব মা দিবস। পাঠক-বন্ধুদের সব মাকে ভালোবাসা জানাই। শ্রদ্ধা জানাই। এ সংখ্যায় পাঠক-বন্ধুরা লিখেছেন তাঁদের মাকে নিয়ে। কয়েক পঙ্ক্তিতে কি আর মাকে নিয়ে লেখা যায়! তার পরও কয়েক বাক্যে ফুটে উঠছে কত-না অনুভূতির কথা

হাজারবার বলব
ফারজিয়া হক
মা, তোমাকে অনেক ভালোবাসি। অনেকবার বলেছি এ কথা, আরও হাজারবার বলব। কিন্তু তুমি আমাকে যতটা ভালোবাসো, সেই ভালোবাসার কানাকড়িও আমি দিতে পারি না তোমাকে! কেমন করে পারো এই দুষ্টু মেয়েটাকে এত ভালোবাসতে?
আজকের এই বিশেষ দিনে তোমাকে কী উপহার দেব, খুঁজে পাচ্ছি না। যা-ই বলি, যা-ই করি না কেন, সেটা তোমার আকাশের মতো বিশাল ভালোবাসার কাছে ছোট্ট হয়ে যায়!
সুনামগঞ্জ বন্ধুসভা।
মনে পড়ে
শাহিন মাহফুজ
আনন্দে মনে পড়ে দুখেও মনে পড়ে
ঘুমে জাগরণে নির্ঘুমে মনে পড়ে।
গ্রামে শহরে সৈকতে পাহাড়ে
মনে পড়ে বর্ষা শীত শরৎ হেমন্তে।
মনে পড়ে সাহসে আর ভয়ে ডরে
মনে পড়ে বিপদে আঘাতে সর্দি জ্বরে।
সকল পথ চলা সাফল্য ব্যর্থতা অর্জনে
আমার শুধু মাকে মনে পড়ে।
অশ্রুতে সুখ খুঁজি
রানা মজুমদার
মনে আছে, আমার সেমিস্টার ফাইনাল শেষ হওয়ার পরের দিন মা আমাকে ফোন দিয়ে বললেন, অনেক দিন হয় তিনি আমাকে দেখছেন না। তাই আমি যেন বাড়িতে যাই। উত্তরে আমি বলেছিলাম, একটা কাজ আছে তাই এখন বাড়িতে যাওয়া সম্ভব না। আমি বুঝলাম, উত্তর শুনে মা খুব কষ্ট পেয়েছিলেন। সন্ধ্যাবেলা মাকে যখন ফোন দিলাম, তখন তিনি ফোন রিসিভ করেই জিজ্ঞেস করলেন, কেমন আছিস, বাবা? আমি বললাম, আগে গেট খুলে ঘরে তো ঢুকতে দাও! তারপর নাহয় বলি কেমন আছি। আমাকে দেখে মায়ের চোখ বেয়ে তখন অঝোর ধারায় বৃষ্টি ঝরেছিল। আর সেই বৃষ্টিতেই আমি খুঁজে পেয়েছিলাম পৃথিবীর সব অকৃত্রিম সুখ।
মনে পড়ে
আশেকুর রহমান
শহরের রাস্তার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় অনেক স্কুলের ঘণ্টাধ্বনি কানে ভেসে আসে। তখন তোমার কথা খুব মনে পড়ে। মনে হয় পাঠদান শেষে এখনই তুমি বেরিয়ে আসবে। মনে পড়ে সেই দিনগুলো, যখন তোমাকে নিতে তোমার স্কুল গেটে টুংটাং ঘণ্টাধ্বনির অপেক্ষায় থাকতাম দীর্ঘক্ষণ। আচ্ছা, বাবা কি তোমাকে স্কুল থেকে আনা-নেওয়ার সময় পান ঠিকমতো?
শুকনো পাতা
রেজাউল করিম
শুকনো পাতার খাজনা কিসে
একটু বলে নাও
ওই মাটিতে শুকনো পাতার
ঘোমটা পরে দাও।
সত্যি করে বলছি তো ভাই
একটু তো নয় মিছে
আম্মুটা না শুয়ে আছেন
ওই যে মাটির নিচে।
তাই তো আমি ওই মাটিকে
কত্ত ভালোবাসি
প্রভাতফেরির ডাক শুনে আর
নিত্য ছুটে আসি
তাঁর দুটি হাত
তৈয়্যবা নূপুর
বাবা মারা যাওয়ার দিন থেকে আজ পর্যন্ত মা কখনো কোনো কিছুর অভাব বুঝতে দেননি। নিজের সব সুখ বিসর্জন দিয়েছেন আমার মুখের হাসির জন্য। আমার ছোট্ট জীবনে অনেক কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছি। কিন্তু মা যখন তাঁর স্নেহের হাত দুখানা মাথায় রেখেছেন, তখন সব সমস্যার সমাধান হয়ে গিয়েছে।
এক কথায়, মা আমার বেহেশতের চাবিকাঠি।
ইডেন মহিলা কলেজ
পাশেই আছে
মো. ইমতিয়াজ ভুঁইয়া
সারা দিন ব্যস্ততার মধ্য দিয়ে কাটিয়ে যখন ঘুমাতে যাই, তখনই মনে পড়ে মা তোমার কথা, মনে পড়ে তোমার বানিয়ে বানিয়ে গল্পচ্ছলে ঘুম পাড়ানোর কথা, মনে পড়ে তোমাকে ছাড়া অন্য কারও সঙ্গে ঘুমানো মানেই তোমাকে হারিয়ে ফেলার ভয়।
তুমি হয়তো জানো না সারা দিন ব্যস্ত থাকলেও রাতে ঘুমাতে যাওয়ার সময় তোমার বানিয়ে বানিয়ে বলা গল্পগুলো আওড়াতে থাকি আর ভাবি, তুমি আমার পাশেই আছ। ভালো থেকো মা।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভা।
দরদমাখা
সোহেল নওরোজ
কতবার তোমাকে বোঝাতে চেয়েছি, যে মানুষটি সব সময় আমাকে নির্ভার রাখে, তাঁর নির্ভরতা হওয়া মোটেও সহজ নয়। নিষ্ফলা সে প্রয়াসও আমার নেই। স্বার্থের ঊর্ধ্বে ওঠার পথ আজও অজানা-অচেনা। চাইলেও সে পথে চলতে পারি না, চলতে চাইও না। তবু তুমি নাছোড়। আমাকে শেখানোর বৃথা চেষ্টা কেন করো? ভালোবাসা কি পাঠ্যবই যে তোমার থেকে শিখে নেব? স্নেহ-ভালোবাসার ক্লাসে আমাকে সবচেয়ে অপদার্থ ছাত্র মনে করে রেহাই দিয়ো। আমি কেবল স্বার্থপরের মতো আজীবন তোমার দরদমাখা হাতটি মাথার ওপরে পেতে চাই, মা।

খুঁজে ফেরা
মাসুদ রানা
মাত্র দুই বছর বয়সে আমি আমার মাকে চিরতরে হারিয়েছি! মায়ের আদর, স্নেহ পাওয়া আমার ভাগ্যে জোটেনি। যখন দেখি কোনো মা তাঁর সন্তানকে পরম মমতায় বুকে জড়িয়ে নেন এবং আদর করেন, তখন প্রচণ্ড কষ্টের ঢেউ আমার বুকের ভেতরটাকে উত্তাল করে দেয়। যাদের মা জীবিত আছেন, তারা নিজের মাকে মা বলে ডেকে প্রাণ জুড়ায়। আর আমি তারাদের মাঝে আমার মাকে খুঁজে ফিরি।
ছেলেবেলায়
অভিজিৎ বড়ুয়া
মাগো তুমি কপোল চুমি
হাত বুলিয়ে যাও
ঘুমাও এসে আগের বেশে
যখন সময় পাও।
না হয় সোজা এক মুহূর্তে
ছেলেবেলায় যাব,
যেথায় গেলে হেসে খেলে
তোমায় খুঁজে পাব।
স্বপ্নে দেখেছেন
শান্তা তাওহিদা
একটি দুষ্টু ছোট্ট মেয়ে কলমের ক্যাপ কামড়াতে কামড়াতে পরীক্ষা দিচ্ছিল। হঠাৎ জুড়ে দিল হাউমাউ কান্না। কারণ, বাংলা রচনা কমন পড়েনি। কাঁদবেই-বা না কেন! টিচার কি বোকা, শীতকালে কেউ বর্ষাকাল নিয়ে রচনা দেয়! সেই মেয়েটা নাকি আমি। সেদিন সকালে আম্মু ফোন করে বলল, কাল রাতে আমাকে নিয়ে এই স্বপ্ন দেখেছে। আম্মু ফোনে কথাগুলো বলছিল, আর আমার ছোটবেলার স্মৃতি রোমন্থন করছিল।
উষার আলো
তামান্না নিশাত
আমার মা মাকসুদা হক উষা। আমার মায়ের এই নামকরণ সার্থক। তিনি আমার কাছে উষার আলো।
আঁচল
মো. গোলাম সারওয়ার
মা তুমি সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। যখন আমি অন্ধকারে ভয় পেতাম, তিনি আমাকে নিজের আঁচলে লুকোতেন, যখন আমি একা থাকতাম, তিনি আমাকে কোলে নিয়ে আদর করতেন। কিন্তু তখন আমি ছোট ছিলাম, তাই বলতে পারতাম না, আমি তোমায় অনেক ভালোবাসি মা।
কুমিল্লা।
মায়ের জন্য
সুবীর বসাক
সবকিছু যে করতে পারি
মায়ের জন্য লড়তে পারি
মায়ের মান রাখতে গিয়ে
জীবনবাজি ধরতে পারি।
নিজের ভালোবাসার
মেহেদী সেকান্দার
জীবনের সবচেয়ে আপন আমার মা, যাঁর প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের কোনো নির্দিষ্ট সময়ের প্রয়োজন হয় না। পৃথিবীতে সব মা তাঁর সন্তানের কাছে অনেক আপন হলেও অনেক মায়ের জীবনের শেষ সময়টি কাটে অবহেলায়। আমার মায়ের বেলায় আমি নিজের ভালোবাসার কমতি হতে দেব না।
কেন জানি
ধ্রুব সরকার
কেন জানি জীবনের এই সময়টায় মাকে খুব মনে পড়ছে। প্রতিটি দিনের অনেকটা সময় কাটে কেবল মাকে ভেবে তাঁর সাথে অতীত হয়ে যাওয়া মুহূর্তগুলো নিয়ে। খুব দেখতে ইচ্ছে করছে মাকে।
হলুদ রোদ্দুর
শাশ্বত মেহেদী
যার শাড়ির গন্ধ মেখে আশৈশব আমি বড় হয়েছি
তিনি উঠে এসেছিলেন মুসলিম মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে।
তিনি আমার সাদা নরম বিছানার নিকটবর্তী কোনো জোনাকি অথবা হলুদ রোদ্দুর।
দুঃখিত
মাহবুবা সুলতানা
আম্মু, তোমাকে আমি কত কষ্ট দিয়েছি জানি না, দিয়েছি বললে হয়তো ভুল হবে। এখনো কখনো জেনে, কখনো না জেনে তোমার কষ্টের পরিমাণটা বাড়িয়েই চলেছি। কোনো কষ্টের কথা হয়তো বলেছ, কোনো কষ্টের কথা হয়তো জানাওইনি, পাছে আমি কষ্ট পাব বলে। সবকিছুর জন্য দুঃখিত, আম্মু।
নর্দার্ন ইউনিভার্সিটি
অনুভবে
সুশান্ত পোদ্দার
শয়নকালে মনের কোণে আছড়ে পড়ে শূন্যতা
খুঁজছি তাই ঘুমপাড়ানি আদর-সোহাগ-মমতা।
ঘুমের মাঝে স্বপনেতে বুকে ধরে আদর করে
চিবুকখানি একটু টেনে করবে আশিস বুকে ধরে।
আশা-জাগা রাত্রি-দিন শিশু-কিশোর-যুবা লীন
তুমি গেলে না-ফেরাতে আমি রইলাম সঙ্গীহীন।
স্বপ্ন মাঝে দেখতে হলে মগজে তার আদল চাই
হাতে ছুঁয়ে প্রণাম করতে ছায়াতে তাই আটকে যাই।
বলে দেব
আবীর অধিকারী
এখনো অনেক দিন মাকে না দেখলে কান্না আসে। বলা হয় না, ভাবছি এবার গিয়ে বলে দেব, ভালোবাসি! হয়তো, তার আগেই মা বুঝে যাওয়ায় বলতে দেবে না!
এক আকাশ
খায়রুল বাসার
‘দেখ, আকাশ কত নীল, চাঁদ কত সুন্দর; আকাশের মতো উদার মানুষ হবি।’
মা তোমার চোখেই আমি আকাশটাকে পেয়েছি। সুখে-দুঃখে তোমার দেওয়া আকাশ আমাকে অকপট বিনোদন দেয়। আকাশ নিয়ে কেউ আমার সঙ্গে ঝগড়া করে না, কারও কোনো মাথাব্যথা নেই আকাশ নিয়ে। তাই আকাশটাকে একান্তই নিজের মনে হয়।
আজও আকাশে এত্ত বড় চাঁদ আর জোছনার প্রাচুর্যতায় নিজেকে খুব বিত্তবান মনে হয়। তোমার এই বিত্তবান ছেলের এক আকাশ ভালোবাসা তোমার জন্য।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভা
ফেরা...
মো. জাহেদুল আলম
টানাটানির সংসারে ও ভুলোমনা মায়েরা কিছু টাকা বেডের নিচে ভুল করে ফেলে রাখেন, বেকার ছেলেটির পকেটে জায়গা পাওয়ার সুযোগ করে দিতে...
আমি অনেকবারই এ সুযোগ নিয়েছি, মনে পড়ার পর কিছুই করার থাকে না মায়ের, খানিকক্ষণ বকাঝকা, তারপর আবারও ভুলে যাওয়া!
এখন সময় ফিরিয়ে দেওয়ার, ভাবছি এবার দেশে গেলে অনেকগুলো দশ-বিশ টাকার নোট বিছানার নিচে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রেখে মাকে ডেকে বলব, বিছানাটা একটু রোদে দিয়ে দিতে, পিঠটা ব্যথা করে। কেমন যেন শক্ত হয়ে গেছে বেডটা...
মা নোটগুলো দেখে হয়তো আমায় ডেকে জানতে চাইবে, আমি বলব সেই দশ-বারো বছর আগে আপনার হারিয়ে যাওয়া টাকাগুলো ফিরে এসেছে হয়তো...
সাদা কাঁথা
মু. সাইদুল হাসান
আমার সাদা রং কাঁথার প্রতিটি বুননে মায়ের হাতের স্পর্শ।
মা তাঁর শরীরে জড়িয়ে রাখা পুরোনো শাড়ি জোড়া দিয়ে, সুচ আর সুতার মিলনে
দীর্ঘ সময় নিয়ে তৈরি করেছেন কাঁথা। আজ মা নেই, কাঁথা আছে।
এখনো প্রতি রাতে সেই কাঁথা বুকে নিয়ে আমি ঘুমাতে যাই।
মনে হয় মা আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরে ঘুম পাড়াচ্ছেন।
চরাচরে
তানিম ইশতিয়াক
এই শহরে পড়ে থাকি একলা
আমার ঘরে
তোমার কাঁথা সুবাস ছড়ায় আমার চরাচরে।
কুড়িয়ে রেখেছি
রবিউল ইসলাম
সকালে ঘুম থেকে উঠে মাকে বললাম, ‘আমার না ভোরবেলা আম কুড়াতে যাওয়ার কথা ছিল। ডাক দিলেন না যে?’ আমাকে অবাক করে দিয়ে মা বললেন, ‘তুই অনেক দেরি করে ঘুমিয়েছিস, তাই ডাক দিইনি। আমি আম কুড়িয়ে রেখেছি।’
আমার মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হলো না।
এ-ই হলো মা।
হ্যালো বাবু
মাসুম বিল্লাহ
রৌদ্রের মধ্যে বেশি ঘোরাঘুরি করিস না। সব সময় সঙ্গে এক বোতল পানি রাখবি। হোটেলে কি খাস না খাস, শোন এক কাজ কর, এক ফাঁকে বাড়ি থেকে ঘুরে যা। গাছের জামরুল প্রায় শেষ, কয় দিন আর রাখা যায় বল? কবে আসবি?