মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

মিখা পিরেগু
মিখা পিরেগু

মানুষের স্বাধীনতার সবচেয়ে বড় জায়গা হলো তার স্বপ্ন। স্বপ্নে অবাধ বিচরণ সম্ভব, বাধা দেওয়ার কেউ থাকে না। তেমনই স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসে এমনই এক কিশোরের নাম মিখা পিরেগু। সমাজের নানা জটিলতা আর বঞ্চনাও এই কিশোরকে রুখতে পারেনি সামনে এগিয়ে যেতে। মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে উঠে আসা এই তরুণ তাই নতুন দিনের বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করে। পঞ্চম শ্রেণীতে বৃত্তি লাভের মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনায় কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখা দিয়ে শুরু মিখার। তারপর অষ্টম শ্রেণীতেও বৃত্তি পেয়ে নিজের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের কথাই সবাইকে আবারও মনে করিয়ে দেয় সে। এসএসসিতে মৌলভীবাজারের শমসেরনগরের এ এ টি এম বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয় থেকে বাণিজ্য বিভাগ থেকে এ প্লাস পেয়ে মিখা ভর্তি হয় নটর ডেম কলেজের বাণিজ্য বিভাগে। নিম্ন মধ্যবিত্ত এক খ্রিষ্টান পরিবারে জন্ম ও বেড়ে ওঠা মিখা পিরেগুর। প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনায় মেধার পরিচয় রাখা মিখা তার প্রতিভার পরিচয় দিয়েছে গ্রামীণফোন-প্রথম আলো আই-জিনিয়াস প্রতিযোগিতায়ও। প্রথমবারের আই-জিনিয়াসের আয়োজনে মৌলভীবাজার অঞ্চলে আই-জিনিয়াস হওয়ার গৌরব অর্জন করে এই মেধাবী তরুণ। চা-বাগানের ভেতর প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেখানে ইন্টারনেট-সুবিধা পাওয়াই দুষ্কর, সেখানে আই-জিনিয়াসের আসরে নিজেকে আলাদা করে পরিচিত করানোই প্রমাণ করে মিখার অদম্য মনোভাবের। আশপাশে বেড়ে ওঠা অন্য তরুণদের থেকে এখানেই ব্যতিক্রম সে। আই-জিনিয়াস খেতাবের সঙ্গে সঙ্গে নিজ এলাকার শিক্ষার্থীদের মধ্যে ইন্টারনেট সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তোলার কাজটিও আগ্রহের সঙ্গে পালন করেছে মিখা। লেখালেখি ও বিতর্ক নিয়েও অনেকটা সময় কেটে যায় মিখার। স্কুলে বিতর্ক ক্লাবের একজন সক্রিয় সদস্য হিসেবে সে অর্জন করেছে অনেক অভিজ্ঞতা। এখন নটর ডেম কলেজের বিতর্ক ক্লাবের সিনিয়র অপারেটিং অফিসার হিসেবে নিয়োজিত আছে মিখা। বিভিন্ন ম্যাগাজিনে লেখা ছাপানো তার শখের মধ্যে অন্যতম। ছোটবেলা থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার স্বপ্ন এই কিশোরের মনের মধ্যে গেঁথে আছে। মিখা পড়াশোনা করতে চায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটে (আইবিএ)। মিখা বিশ্বাস করে, তার স্বপ্ন কোনো বিলাস নয়। সংখ্যালঘু সমাজের জন্য কিছু করার বিশ্বাস তাকে আরও সামনে নিয়ে যাচ্ছে। এসএসসি পরীক্ষার ঠিক পরপরই জন্মদিনের আগে মাকে হারানোর শোক এই কিশোরকে বলীয়ান করেছে মায়ের আশাগুলো পূরণ করতে। মা-ই এই কিশোরের স্বপ্ন ও আশার মূর্ত প্রতীক ছিলেন। মিখা পিরেগু স্বপ্ন দেখে খ্রিষ্টান সমাজের অনগ্রসর মানুষের জন্য কিছু করতে। অষ্টম শ্রেণীতে শুধু খ্রিষ্টানদের জন্য আয়োজিত বৃত্তি পরীক্ষায় দেশের মধ্যে প্রথম হয়ে এই সমাজের জন্য কিছু করার ইচ্ছাটা যেন আরও বেশি পোক্ত করে নিয়েছে মিখা। প্রত্যন্ত অঞ্চলের সাদাসিধা মানুষগুলোর জীবনকে বদলে দিতে চায় সে, তাদের স্বপ্ন দেখাতে চায়। ‘মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়’—এই মূলমন্ত্রে দীক্ষিত হয়েই তাই এগিয়ে চলেছে মিখা পিরেগু।