মাশরাফির বাড়িতে এক বেলা

নড়াইল এক্সপ্রেস বাড়ির ফটকের সামনে মাশরাফি বিন মুর্তজার ম্যুরালের সামনে লেখক
নড়াইল এক্সপ্রেস বাড়ির ফটকের সামনে মাশরাফি বিন মুর্তজার ম্যুরালের সামনে লেখক

২০ জানুয়ারি বেলা তখন তিনটা। আমরা হাজির হয়েছিলাম ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’-এর সামনে। এটি আমাদের মাশরাফি বিন মুর্তজার নতুন বাড়ির নাম। ভেতরে–ভেতরে একধরনের চাপা উত্তেজনা অনুভব করছিলাম। সত্যি সত্যিই কি মাশরাফির বাড়ি! সে ভুল ভাঙল বাড়ির মূল ফটকের বাঁ পাশের দেয়ালে মাশরাফি বিন মুর্তজার ছোট ম্যুরালটা।

আমরা ফটক পেরিয়ে বাড়ির সদর দরজায় গিয়ে দাঁড়ালাম। আমার বলতে, সঙ্গে আছেন আশেকুর রহমান ও ইউসুফ ইফতি। তিনজনই ঘুরতে এসেছি নড়াইল। তখন ভাবছিলাম, পুরো বাড়িটা যদি একবার ঘুরে দেখা যেত! যদি ম্যাশের রুমটা একটু দেখতে পেতাম! এসব ভাবতে ভাবতেই ভেতরে প্রবেশ করি। বাড়ির শেষ মুহূর্তের কাজ তখনো চলছিল। আমরা গিয়ে সোফায় বসি। সোফার সামনে সবুজ ঘাসের কার্পেট বিছানো। ক্রিকেটারের বাসা বলে কথা! মাশরাফির বাবা গোলাম মুর্তজা আমাদের দিকে এগিয়ে এলেন।

আমরা ম্যাশের বাবাকে সালাম দিয়ে পরিচয় দিলাম। এরই মধ্যে আরও একদল ভক্ত এসে হাজির। ম্যাশের বাবা আমাদের কাছে একটু সময় নিয়ে তাঁদের পুরো বাড়ি ঘুরিয়ে দেখালেন। এই ফাঁকে আমরাও কিছু ছবি তুলে নিলাম। একসময় আমাদের কাছে এলেন। বললাম, ‘আংকেল, আন্টিকে যদি একটু ডেকে দিতেন। আমরা আপনাদের দুজনের সঙ্গেই কথা বলতে চাই।’

মাশরাফির মা-বাবার সঙ্গে আমরা কথা বললাম। ঘুরে দেখলাম পুরো বাড়ি। মাশরাফির সব অর্জন, অ্যালবাম, পোর্ট্রেট, বেডরুম, বারান্দা—সব দেখা হলো। ম্যাশের রুমের বারান্দা থেকে তাঁর খেলার মাঠের অনেকটা অংশ দেখা যায়। ম্যাশ তাঁকে নিয়ে লেখা বিভিন্ন পত্রিকার লেখা বাঁধাই করে রেখেছেন।

এক ফাঁকে অধিনায়কের মা আমাদের নিজ হাতে বানানো নড়াইলের রস চিতই খাওয়ালেন। ম্যাশের বাড়িতে যাওয়ার আগে তাঁর মা-বাবার অতিথিপরায়ণতা আর মিশুক স্বভাবের কথা যতটুকু শুনেছিলাম, গিয়ে উপলব্ধি করলাম আরও বেশি। তাঁদের কাছ থেকে যখন বিদায় নিয়ে বের হলাম, তখন বিকেল পাঁচটা। ফটকের বাইরে দেখলাম একটা পুলিশের ভ্যান দাঁড়িয়ে আছে। একজন একজন করে পুলিশ সদস্য ম্যাশের বাড়ির ফটকের সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন।

বাড়ি থেকে সামনে এগোলেই সেই বিখ্যাত মাঠ। যেখানে মাশরাফি ক্রিকেট খেলে আজকের ম্যাশ হয়েছেন। তখনো মাঠে চলছে ম্যাশের উত্তরসূরিদের ক্রিকেটের প্র্যাকটিস। ছবি তুললাম সেই মাঠে। এরপর সেই চিত্রা নদীর ওপর দিয়ে ফেরার পথে ব্রিজে কিছুক্ষণ দাঁড়ালাম, ছবি তুললাম, প্রাণভরে নিশ্বাস নিলাম...। এসবেই তো মিশে আছেন মাশরাফি বিন মুর্তজা—আমাদের ম্যাশ।

কামরুন্নাহার মৌসুমী

ঢাকা