মেডিকেলে পড়ার পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সিং করেন তাঁরা

মাসুদুর রহমান ও শিশির বিন লতিফ
ছবি: প্রথম আলো

‘যে রাঁধে সে চুলও বাঁধে’, যশোর মেডিকেল কলেজের একদল শিক্ষার্থীর সঙ্গে আড্ডায় বসে প্রবাদটি মনে পড়ল। মেডিকেলে পড়ালেখার কঠিন চাপ সামলে অনলাইনে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করছেন তাঁরা। মাস শেষে যা আয় হচ্ছে, তা-ও মন্দ নয়।

আপওয়ার্ক, ফাইভার কিংবা ফ্রিল্যান্সারের মতো ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসগুলোর সুবাদে দেশের অনেক শিক্ষার্থীই পড়ালেখার পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সিং করেন। তবে মেডিকেল ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে এমনটা খুব বেশি চোখে পড়ে না। একে তো একাডেমিক চাপ সামলে বাড়তি কিছু করা তাঁদের জন্য কঠিন, তা ছাড়া এই শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা, প্রশিক্ষণ কিংবা ভবিষ্যৎ পেশাজীবনের সঙ্গেও এ ধরনের কাজের যোগসূত্র কম।

যশোর মেডিকেল কলেজের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী শিশির বিন লতিফ অবশ্য তাঁর একাডেমিক জ্ঞান কাজে লাগিয়েই ফ্রিল্যান্সিং করছেন। মানবদেহের বিভিন্ন রোগবালাই, মেডিকেল ট্যুরিজম, স্বাস্থ্যসম্মত খাবার ইত্যাদি নিয়ে প্রবন্ধ লিখে বিক্রি করেন তিনি। শিশির জানালেন, তিনি ‘কনটেন্ট সেলার’। মেডিকেল কলেজের শেষ বর্ষের এই ছাত্র গত দুই বছর ধরে পড়ালেখার পাশাপাশি এ কাজ করছেন। মাসে তাঁর আয় ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা।

শুরুটা কীভাবে হয়েছিল, জানতে চাই শিশিরের কাছে। বললেন, ‘করোনা মহামারির মধ্যে ঘরে বসে সময় কাটছিল। বেশির ভাগ সময় গুগল করে বা মেডিকেল–সংক্রান্ত ওয়েবসাইটে গিয়ে কনটেন্ট দেখতাম। তখন আমার কাছে মনে হয়েছে, যেসব কনটেন্ট অনলাইনে আছে, আমি নিজে লিখলে এর চেয়ে খারাপ হবে না। তখন মেডিকেল–সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে প্রবন্ধ লিখে অনলাইনে বিক্রি করা শুরু করি। তাতে মাসে ভালোই টাকা রোজগার হচ্ছে। লেখাপড়ার চাপ বাড়ায় পরে অবশ্য অনলাইনে কাজ কিছুটা কমিয়ে দিতে হয়েছে।’

শিশির বিন লতিফের পাশাপাশি এই কলেজ থেকে সদ্য এমবিবিএস চূড়ান্ত পরীক্ষা দেওয়া বদরুল আলম রাফাত, শেষ বর্ষের সুজন শেখ ও চতুর্থ বর্ষের মাসুদুর রহমানও অনলাইনে কাজ করে ডলার আয় করছেন।

ওষুধ ছাড়াই প্রাকৃতিক উপায়ে কীভাবে ব্যাক পেইন নিরাময় করা যায়, সে বিষয়ে গত মাসে ছয় হাজার শব্দের একটি প্রবন্ধ লিখে ৭ হাজার ২০০ টাকা আয় করেছেন মাসুদুর রহমান। এখন পর্যন্ত তিনি ৫০০ ডলার আয় করেছেন। মেডিকেলের গবেষণা বিষয়ে মৌলিক শিক্ষা গ্রহণের জন্য তিন মাসের একটি ডিপ্লোমা কোর্স শুরু করেছেন তিনি। সপ্তাহে তিন দিন সন্ধ্যার পরে অনলাইনে ক্লাস করেন। তাঁর বিশ্বাস, ডিপ্লোমা কোর্সটির মাধ্যমে তাঁর জানাশোনা আরও সমৃদ্ধ হবে। আরও ভালো লিখতে পারবেন তিনি। অন্যদিকে সুজন সেন চিকিৎসাবিজ্ঞান–সংক্রান্ত অ্যানিমেশন তৈরি করে অনলাইনে বিক্রি করেন। তাঁর আয়ও মন্দ না। নিজেরা আয় করছেন বলে এই শিক্ষার্থীদের বাড়ি থেকে টাকা আনার প্রয়োজন পড়ে না। নিজের খরচ তাঁরা নিজেরাই আয় করে নেন।

শিশির বিন লতিফ বলছিলেন, ‘গ্রাফিক ডিজাইন, অ্যানিমেশন, ভালো কনটেন্ট তৈরির দক্ষতা আমাদের আছে। যে কারণে আমরা নিজেরাই একটা দল গঠন করে অনলাইনে ওয়েবসাইট খুলে নিজেদের একটা মার্কেটপ্লেস তৈরির কথা ভাবছি। এটা করতে পারলে আমরা কলেজের আরও অনেককে এই কাজে যুক্ত করতে পারব। ইতিমধ্যে সুজন সেনসহ তিনজন আমাদের কাছ থেকে অনলাইনে ফ্রিল্যান্সিংয়ের কলাকৌশল রপ্ত করে নিয়েছেন। কিন্তু এটা অনেক ধৈর্যের বিষয়।’

মেডিকেলের পড়ালেখা তো আদতে ধৈর্যেরই পরীক্ষা। তাই অন্তত ধৈর্যের অভাবে এই শিক্ষার্থীদের অগ্রযাত্রা থেমে যাওয়ার কথা নয়। আসছে চতুর্থ শিল্পবিপ্লব। এগিয়ে থাকতে হলে শুধু যে গৎবাঁধা একাডেমিক জ্ঞানে নিজেকে বেঁধে রাখলে চলবে না, এই শিক্ষার্থীরা তা জানেন।