
আবহাওয়া বদলালে অনেকেরই ঠান্ডা সর্দিজ্বর হয়। নাক দিয়ে পানির ধারা ঝরে। হ্যাঁচ্চো! অনেকের গলা খুসখুস, কফ, জ্বর, শরীর ব্যথা, মাথা ধরা, চোখ ছলছল, শরীরও গরম। ক্লান্তিও হয় শেষে।
ক্রমে ক্রমে শ্লেষ্মা হতে পারে হলুদ, সবুজ—বিভিন্ন রঙের। কম কম জ্বর। তবে বেশিও হতে পারে। একে আমরা বলি সাধারণ ঠান্ডা লাগা। মৌসুমি অসুখ। এর পেছনে কোল্ড ভাইরাসের দু শরও বেশি রকম জানা আছে চিকিৎসকদের। সচরাচর যে দুটো ভাইরাসের প্রকোপ বেশি, সে দুটো হলো রাইনো ভাইরাস ও করোনা ভাইরাস। উপসর্গও তাই হতে পারে নানা কিসিমের। শ্বাসনালির ওপর অংশ নাক ও গলাতে আক্রমণ বেশি। আপাত নিরীহ অসুখ, তবে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ হলে শ্বাসনালির নিচের ভাগ ও ফুসফুসও আক্রান্ত হতে পারে। শিশু ও বৃদ্ধদের এমন ঠান্ডা লাগলে সতর্ক থাকতে হবে বেশি। হঠাৎ নিউমোনিয়া হওয়ার ঘটনা ঘটে যায়। কোল্ড ভাইরাস ধরলে উপসর্গ দেখা দেয় এক থেকে তিন দিন পর। অসুখটি ছোঁয়াচেও বটে। সরাসরিও সংক্রমণ ছড়ায়। হাঁচি দিলে বা কাশি দিলে বাতাসে যায়, বিন্দুকণা সংক্রমণ হয়, অন্য কেউ সেই বায়ু সেবন করলে আক্রান্ত হয়। অনেক সময় অপ্রত্যক্ষ উপায়ে ছড়ায় সংক্রমণ, কেউ হাঁচি দিলে সেই হাঁচি হাত দিয়ে মুছে দরজার হাতলে হাত লাগালেন, এরপর অন্য কেউ সেই হাতল ধরে দরজা খুললেন, সেই হাত লাগালেন নিজের মুখে বা চোখে—সংক্রমণ ছড়াল। হাঁচি হাত দিয়ে মুছে অন্যের সঙ্গে হাত মেলালেও সংক্রমণ ছড়াতে পারে।
উপসর্গ শুরু হওয়ার দু-তিন দিন আগ থেকেই এটি ছোঁয়াচে হয়ে যায় এবং উপসর্গ চলে যাওয়া পর্যন্ত থাকে, তাই এক থেকে দুই হপ্তা হতে পারে স্থিতিকাল।
মৌসুমি ঠান্ডা সর্দি তেমন জটিল অসুখ নয়। এমনিতেই সেরে যায়। কথায় বলে, এমন ঠান্ডা লাগলে ওষুধ খেলে এক হপ্তা, আর না খেলে সাত দিন, তারপর ভালো। কথাটি সত্যি, তবে সমস্যা বেশি হলে ডাক্তার দর্শন অবশ্য। কখন ডাক্তার দেখানো উচিত, তাও পরে বলছি। একে মোকাবিলা করার জন্য চিরন্তন কিছু নিয়ম আছে, যেগুলো বেশ আরাম দেয়; এমন অসুখে উপসর্গ উপশম বেশ জরুরি।
প্রচুর তরল গ্রহণ করলে বেশ আরাম। পানি পান, এমনকি ফলের রস, সব রকমের তরল বেশি বেশি পান করতে হবে। গরম আদা-চা বেশ ভালো। গ্রিন টি চমৎকার।
গরম স্যুপ আরও ভালো। মুরগির স্যুপের প্রদাহরোধী তরল পানে শ্লেষ্মা হয় তরল ও পাতলা, শ্লেষ্মা বেরোয় সহজে, অবাধে। পানিশূন্যতা হলে তাও ঠেকায়।
দুই ঘণ্টা পরপর পানি পান। শরীর থাকে সজল। খুব সকালে এক গ্লাস গরম জল বা লেবুজল বেশ উপকারী। আদাকুচি চিবানো, তুলসীপাতার রস, মধু বেশ উপকারী। ঘরোয়া চিকিৎসা হলেও বেশ ভালো।
নুনজল দিয়ে গড়গড়া করলে গলা খুসখুস চলে যায়। ৮ আউন্স জলে সিকি চামচ নুন মিশিয়ে সেই নুনজল দিয়ে গড়গড়া।
শ্বাসের সঙ্গে গরমজলের ভাঁপ নিলে নাক বন্ধে আরাম হয়। বাজারের ডিকনজেস্টেন্ট ওষুধ, নাকের ড্রপ, অ্যান্টিহিস্টামিনিক ওষুধের প্রয়োজন লাগতে পারে।
নিটোল ঘুম দিলে যেমন আরাম হয়, তেমনি দেখা গেছে যাদের ৮ ঘণ্টার বেশি সময় সুনিদ্রা হয়, তাদের ঠান্ডাও লাগে কম।
উষ্ণ ধারা জলে স্নান, স্টিমবাথ বেশ উপকারী।
স্যালাইন ন্যাজাল ওয়াশ নিতে পারলে নাক বন্ধে বেশ আরাম হয়।
ভিটামিন সি সাধারণ ঠান্ডা লাগায় বেশ কাজ দেয়।
অন্য ভাইরাস থেকে কোল্ড ভাইরাস কীভাবে আলাদা করা যায়?
কোল্ড ভাইরাস সংক্রমণে খুব জ্বর হয় না এবং খুব ক্লান্তিও হয় না। ওষুধ উপসর্গ লঘু করে, তবে এটি প্রতিরোধ করে না, নিরাময় করে না বা অসুখের কাল হ্রস্ব করে না। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনেক সময় হয় জরুরি।
খুব জ্বর যদি হয়, ১০৩ ডিগ্রির বেশি। খুব জ্বর যদি দুদিনের বেশি থাকে।
খুব ঘাম হয়, শীত শীত ভাব, কফ শ্লেষ্মা গাঢ় হলুদ, গ্লান্ড ফুলে যায় সাইনাস সফলে ব্যথা অটলকান্তি হলে, বমি বা পেটে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট হলে ডাক্তার দেখাতে হবে।
শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য বেশি জরুরি।
ঠান্ডা সর্দি যাতে না ছড়ায়—
হাত নিয়মিত ও সঠিকভাবে ধুতে হবে, বিশেষ করে নাক ও মুখ স্পর্শ করার পর এবং খাবার নাড়াচাড়া করার পর।
হাঁচি ও কাশি দিতে হবে টিস্যুতে—এতে ভাইরাসবাহী বিন্দুকণা নাক ও মুখ থেকে বাতাসে যাবে না ও অন্যদের মধ্যে ছড়াবে না। সেই টিস্যুটি ফেলে দিতে হবে।
ডিসপোজেবল পেপার টাওয়েল ব্যবহার করতে হবে।
নিজের কাপ-প্লেট কেবল নিজে ব্যবহার করবেন।
লেখক: পরিচালক, ল্যাবরেটরি সার্ভিসেস, বারডেম [email protected]