যা ছিল বছর জুড়ে

বছরটি শুরু হয়েছিল করোনা দিয়ে, শেষও হচ্ছে এই অদৃশ্য মহাশয়কে দিয়েই! মাঝখান থেকে এগিয়ে চলছে নতুন স্বাভাবিক জীবন। অতিমারির প্রভাব পড়েছে সবখানেই। ফ্যাশনেও। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কিছু ফ্যাশন ট্রেন্ড, যা ছিল একদম লকডাউনকেন্দ্রিক। প্রায় মুখ থুবড়ে পড়েছে জমকালো ফ্যাশন আর শক্তিশালীভাবে উত্থান হয়েছে মিনিমালিজম ফ্যাশন ই-কমার্সের।

লন্ডন ফ্যাশন উইকে বারবেরির শো প্রচার করা হয় ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মেছবি: রয়টার্স

ডিজিটাল ফ্যাশন উইক

মিলানে প্রাদার ডিজিটাল ফ্যাশন শো
ছবি: রয়টার্স

করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে বছরের শুরুর দিকে অনিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল ফ্যাশন উইকের আয়োজন। ঠিক সেই সময় ত্রাতা হয় হয় প্রযুক্তি। একে কাজে লাগিয়ে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে আয়োজিত হয়েছে ফ্যাশন উইক। অবশ্য কিছু শো হয়েছে মিলেমিশে। অর্থাৎ ফিজিক্যাল ও ডিজিটাল। একে বলা হচ্ছে ফিজিটাল। প্রযুক্তির জন্য বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকে মানুষ উপভোগ করেছে ফ্যাশনের সব আয়োজন। সীমাবদ্ধতা ছিল অনেক। কিন্তু তারপরও পোশাকের পাশাপাশি এর প্রদর্শনীতেও সৃজনশীলতার ছাপ রেখেছেন ডিজাইনাররা। বানিয়েছেন অভিনব সব ফ্যাশন ফিল্ম। আর এতে মহামারির পাশাপাশি উঠে এসেছে রাজনীতি, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, পরিবেশ আন্দোলন, ব্ল্যাক লাইভ ম্যাটারসের মতো স্পর্শকাতর বিষয়গুলো।  

ফ্যাশনের দূষণের বিরুদ্ধে সরব ছিল ফ্যাশন রেবেলেশন
ছবি: রয়টার্স

বিশেষজ্ঞরা একে ধরে নিয়েছেন টেকসই এবং নৈতিক ফ্যাশনের অংশ হিসেবে। কারণ, আগে ফ্যাশন উইকে অংশগ্রহণ করতে এর সংশ্লিষ্টদের যাতায়াতে যে পরিমাণ কার্বন নিঃসৃত হতো, তার পরিমাণ কমেছে। ধারণা করা হচ্ছে, ভবিষ্যতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে গেলেও ঠিক এই একটি কারণে ডিজিটাল ফ্যাশন উইকের এই ধারা থেকে যাবে।  

মিনিমাল ফ্যাশন

চোখ আর মনের তৃষ্ণা মিটিয়ে ফ্যাশনসামগ্রী কেনার ইতি ঘটেছে এ বছর। অতিমারিতে বিশ্বের সবারই কমবেশি কিছু না কিছু আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। এখন মানুষ নিতান্ত প্রয়োজন না হলে কিনছে না কিছুই। এভাবেই ফ্যাশনে এসেছে মিনিমাল ট্রেন্ড। এ ধারা আমাদের শেখায় নিজেদের কাছে থাকা পোশাকে সন্তুষ্ট থাকতে। লকডাউনের বিয়ের ফ্যাশনেও ছিল এই টেকসই মিনিমালিজমের ছোঁয়া। নিজের পুরোনো গাউন বা মা, দাদি-নানির বিয়ের গাউন বা শাড়ি পরে বিয়ের পিঁড়িতে বসেছেন অনেকে। এমনকি রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের নাতনি পর্যন্ত বিয়েতে বেছে নিয়েছেন তাঁরই একটি গাউন আর গয়না।

এই ট্রেন্ডের প্রচারে সেলিব্রিটিরা বেশ ভালো ভূমিকা রাখছেন। যেমন কেট ব্লানচেটের কথাই ধরুন। এবার ভেনিস ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে কয়েক বছর আগে পরা পুরোনো দুটি পোশাক পরে রেড কার্পেট আলো করেছেন। এভাবে একাত্ম প্রকাশ করেছেন টেকসই ফ্যাশনের এই ধারার সঙ্গে। শুধু ব্লানচেট নয়, আরও অনেক জনপ্রিয় সেলিব্রিটিদের দেখা যাচ্ছে পুরোনো পোশাকে। এদের দেখে অনেকে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। এ জন্যই মিনিমাল ফ্যাশনকে ধরা হচ্ছে বছরের অন্যতম বড় ট্রেন্ড।

মাস্ক আপ!

ছবি: রয়টার্স

করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে মাস্ক পরিধানের কোনো বিকল্প নেই। আর এটিই হয়ে উঠেছে সবচেয়ে ফ্যাশনেবল অনুষঙ্গ। পশ্চিম থেকে পূর্ব সবখানেই এখন বিচিত্র রকমের মাস্কের ছড়াছড়ি। ফ্যাশন হাউসগুলো বানাচ্ছে নানা ডিজাইনের বিচিত্র সব মাস্ক। ইউটিউবে ঘুরে বেড়াচ্ছে ডিআইওয়াই মাস্ক বানানোর ভিডিও। পোশাকের সঙ্গে মিক্স বা ম্যাচ করে পরা হচ্ছে এটি। সবকিছু ছাপিয়ে জীবাণু প্রতিরোধী এই ঢালই এখন এ বছরের সবচেয়ে সেরা ট্রেন্ড।

আরামদায়ক পোশাক

ক্যাজুয়াল পোশাক হয়েছে ফরমাল
ছবি: রয়টার্স

ঘরে থাকলে আমরা সবাই আরামদায়ক আর ঢিলেঢালা পোশাক পরে থাকি। আর এই বছরটাই কাটাতে হয়েছে প্রায় গৃহবন্দী থেকে। অবরুদ্ধ জীবনে তাই বেড়েছে আরামের পোশাকের কদর। অনলাইনে সোয়েট প্যান্ট, সোয়েট শার্ট, টি–শার্ট, স্লিপ ড্রেস, হাউজ ব্রিজি স্টাইল ড্রেস—যার আরেক নাম কটেজকোর ইত্যাদি পোশাক কেনা হয়েছে অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি। অ্যাকটিভওয়্যার, সাইক্লিং শর্টস, লেগিংসের বিক্রিও বেড়েছে। ঘর থেকে কাজ করার এ বছরে ফরমাল পোশাকের জায়গা দখল করেছে এরা। অনেকে তো ধরেই নিয়েছেন, এভাবে চলতে থাকলে আস্তে আস্তে হারিয়ে যাবে অফিসের নিত্যদিনের ফরমাল পোশাক।

আবার যাঁরা নিতান্তই প্রয়োজনের তাগিদে রাস্তায় বেরোচ্ছেন, তাঁদের পোশাকেও ছিল খাপছাড়া ক্যাজুয়ালিটি। আসছে বছরটি এর প্রভাব থেকে সহজে মুক্তি পাবে না।

অনুষঙ্গেও আরামের খোঁজ

শুধু পোশাক নয়, জুতা আর অনুষঙ্গে প্রাধান্য পেয়েছে আরাম। হাই হিল, ড্রেস শু, লোফারের কোনো খোঁজই পাওয়া যাচ্ছে না! সবাই ঝুঁকেছেন আরামদায়ক স্যান্ডেল আর ফার ক্রকসের দিকে। আর চুল সাজাতে এসেছে নানা রঙের ক্লিপ, ফ্যাব্রিক রাউন্ড হেয়ার ব্যান্ড ও স্কাঞ্চি।