যেভাবে সারা বিশ্বের ছয়জনের একজন সাদিয়া

প্রজননস্বাস্থ্য বিষয়ে কাজ করার জন্য সারা বিশ্ব থেকে নির্বাচিত ছয়জনকে অনুদান দিয়েছে বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ইনস্টিটিউট ফর পপুলেশন অ্যান্ড রিপ্রোডাক্টিভ হেলথ। তাঁদের মধ্যে বাংলাদেশের সাদিয়া রহমানও আছেন। তাঁকে দেওয়া হয়েছে প্রায় সাড়ে আট লাখ টাকা। অনুদানটি কীভাবে পেলেন জানালেন সাদিয়া।

সাদিয়া রহমান
ছবি: সংগৃহীত

‘ওয়ান টোয়েন্টি আন্ডার ফোরটি’ মূলত বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ইনস্টিটিউট ফর পপুলেশন অ্যান্ড রিপ্রোডাক্টিভ হেলথের একটি প্রকল্প। যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিনস ব্লুমবার্গ স্কুল অব পাবলিক হেলথের সহায়তায় ২০১৫ সাল থেকে এই কার্যক্রম শুরু হয়, যার মূল উদ্দেশ্য তরুণদের পরিবার পরিকল্পনা ও প্রজননস্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতন করা।

আমি নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি থেকে বিবিএ শেষ করেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় থেকেই নানা সরকারি ও সামাজিক সংগঠনে কাজের মাধ্যমে নেতৃত্বের দক্ষতাগুলো অর্জনের চেষ্টা করেছি। ইন্টারন্যাশনাল ইয়ুথ অ্যালায়েন্স ফর ফ্যামিলি প্ল্যানিংয়ের (আইওয়াইএএফপি) বাংলাদেশ সমন্বয়কারী হিসেবে কাজের অভিজ্ঞতাও আমাকে সমৃদ্ধ করেছে

ওয়ান টোয়েন্টি আন্ডার ফোরটি প্রকল্পে জয়ী হয়েছেন ৪০ বছরের কম বয়সী ১২০ জন। এর অংশ হিসেবে তাঁদের দেওয়া হয় ‘ইনজেনুইটি ফান্ড’। ২০২১ সালে বাংলাদেশি তরুণ হিসেবে আমি এই তহবিলের অধীনে ১০ হাজার মার্কিন ডলার (প্রায় সাড়ে ৮ লাখ টাকা) অনুদান পেয়েছি। সাবসাহারান আফ্রিকা ও দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে তরুণদের প্রজননস্বাস্থ্য নিয়ে কাজে উৎসাহ দিতে এই অনুদান দেওয়া হয়। আমি ছাড়াও এ বছর অনুদান পেয়েছেন পাকিস্তানের জশুয়া দিলাওয়ার, মাদাগাস্কারের মারিয়া ফ্রডেনবার্জার, ক্যামেরুনের সিমন ম্যাঙ্গা, মালাউইয়ের নিসিলি মুশানি ও বারওয়ানি সিস্কা। আমি প্রজননস্বাস্থ্য, মানসিক স্বাস্থ্য ও জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে কাজ করার জন্য ১০ হাজার ডলার উদ্ভাবনী প্রকল্পে ব্যয়ের সুযোগ পাব। ২০২২ সালের ১৪ থেকে ১৭ নভেম্বর থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠেয় পরিবার পরিকল্পনাবিষয়ক ষষ্ঠ আন্তর্জাতিক সম্মেলনে আমাদের কাজের অগ্রগতি উপস্থাপন করতে হবে।

যে কারণে ইনজেনুইটি ফান্ড ২০২১

আমি ২০১৯ সালের ওয়ান টোয়েন্টি আন্ডার ফোরটি প্রতিযোগিতায় কয়েকটি ধাপ অতিক্রম করে সেরা তালিকায় নির্বাচিত হই। কাজের পরিধি ও সামাজিক অংশগ্রহণের ওপর ভিত্তি করে এই তালিকায় মনোনয়ন দেওয়া হয়। নির্বাচিত হওয়ার পর আমি অনুদানের জন্য আমার ধারণাপত্র (কনসেপ্ট নোট) জমা দিই। প্রজননস্বাস্থ্য ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট হুমকি বিষয়ে তরুণদের কীভাবে সচেতন করা যায়, সে বিষয়েই কিছু ধারণা দিয়েছিলাম। বিভিন্ন সৃজনশীল কাজ, যেমন ছবি আঁকা বা শিল্পের মাধ্যমে আমি তরুণদের যুক্ত করার চেষ্টা করি। ‘স্কুল অব ইমপসিবল’ নামের এই ধারণাপত্রে আমার পরিকল্পনার বিস্তারিত জানাতে হয়েছে। আর সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্যই পেয়েছি অনুদান।

আমার কাজ

২০২০ সালে আমি লাইট টু লাইফ নামের একটি সংগঠনের সঙ্গে কাজ শুরু করি। প্রজননস্বাস্থ্য, মানসিক স্বাস্থ্য ও জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে তরুণদের সংগঠিত করার মাধ্যমে নানা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। আমার সঙ্গে কাজ করছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তের তরুণেরা। প্রথম দিকে ক্ষুদ্র পর্যায়ে কাজ শুরু করলেও ধীরে ধীরে ঢাকা থেকে শুরু করে বরিশাল, খুলনা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার পর্যন্ত আমাদের কাজের পরিধি বিস্তৃত হয়েছে। আমরা বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা থেকে শুরু করে বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বিষয়গুলোতে প্রান্তিক তরুণদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করে যাচ্ছি।

আমি নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি থেকে বিবিএ শেষ করেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় থেকেই নানা সরকারি ও সামাজিক সংগঠনে কাজের মাধ্যমে নেতৃত্বের দক্ষতাগুলো অর্জনের চেষ্টা করেছি। ইন্টারন্যাশনাল ইয়ুথ অ্যালায়েন্স ফর ফ্যামিলি প্ল্যানিংয়ের (আইওয়াইএএফপি) বাংলাদেশ সমন্বয়কারী হিসেবে কাজের অভিজ্ঞতাও আমাকে সমৃদ্ধ করেছে। সচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে পাঁচ হাজার তরুণের কাছ থেকে স্বাস্থ্যসেবায় তাঁদের সুযোগ বাড়ানোর জন্য গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করেছি। ২০ জন সংসদ সদস্য আমাদের এই গণস্বাক্ষর কর্মসূচিতে যুক্ত ছিলেন।

এর আগে ২০১৮ সালে রুয়ান্ডায় অনুষ্ঠিত পরিবার পরিকল্পনাবিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বক্তা হিসেবে অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছিলাম। বেলজিয়ামে অনুষ্ঠিত প্রজননস্বাস্থ্যবিষয়ক সম্মেলনে প্যানেল স্পিকার হিসেবে বাংলাদেশ থেকে অংশ নিই। এসব অভিজ্ঞতা নিশ্চয়ই অনুদান পাওয়ার ক্ষেত্রে আমাকে এগিয়ে রেখেছে।

আগামীর পরিকল্পনা

দেশের তরুণদের মধ্যে প্রজননস্বাস্থ্য বিষয়ে অনেক জড়তা আছে। সামাজিক নানা কুসংস্কার ও ট্যাবুর কারণে তরুণেরা এসব বিষয়ে কথা বলতে চান না। প্রান্তিক অঞ্চলের তরুণদের মধ্যে সঠিক তথ্য ও শিক্ষার অভাব আছে। আমি ইনজেনুইটি ফান্ড–২০২১–এর মাধ্যমে প্রান্তিক অঞ্চলের তরুণদের জন্য কার্যকর তথ্যভান্ডার তৈরির চেষ্টা করব। সমুদ্র উপকূলের জেলাগুলোতে প্রজননস্বাস্থ্য ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়গুলো সম্পর্কে জানানোর চেষ্টা করব। এ ছাড়া চারটি আঞ্চলিক উৎসব আয়োজন করে নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে তরুণদের কথা বলার সুযোগ তৈরি করতে চাই।