ডাল বাগাড় দিলে শুধু ছ্যাত শব্দ নয়, পাঁচফোড়নের সুগন্ধও বাড়ির বাইরে ছড়িয়ে পড়া উচিত। মাংস রাঁধলে সিঁড়ি বেয়ে ঘরে ওঠার আগেই সে খবর পাওয়া যায়। পোলাওয়ের হাঁড়ির ঢাকনা তুললেই রান্নাঘর থেকে বসার ঘর পর্যন্ত সুগন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। এ তো রান্নারই গুণ। তবে তার জন্য মসলার ব্যবহারটাও জানা থাকা চাই।
বেশি করে মসলা দিলেই যে খাবারে সুগন্ধ বেশি হবে অথবা খেতে মজা লাগবে, তা নয়। কোন মসলা কোন খাবারে কী পরিমাণে দিতে হবে, সেটা জানা খুবই জরুরি। এ নিয়ে দেখে নিন রান্নাবিদ সিতারা ফিরদৌসের পরামর্শ।

জেনে নিন
হলুদ, মরিচ, ধনে, আদা, জিরা, রসুন এসব মসলা গুঁড়া বা বাটা দুভাবেই ব্যবহার করা যায়। আবার কোনো কোনো রান্নায় কেটেও দেওয়া যেতে পারে।
শাক রান্নায় পেঁয়াজ, রসুন, কাঁচা মরিচ এসব দেওয়া যেতে পারে।
পোস্তদানা বেটে পোলাও, বিরিয়ানি, মাংসে দেওয়া যায়।
নারকেল বেটে নারকেল দুধ দিয়ে পোলাও, চিংড়ির মালাইকারি বানানো যায়। আবার মুরগির মাংস, লাউশাক, লতি, শাপলাতে নারকেল দুধ বা নারকেল বাটা দেওয়া যেতে পারে।
শাহজিরা, তিল, কালোজিরা, মৌরি, মেথি, রাঁধুনি এসব মসলা দিয়ে পাঁচফোড়ন তৈরি করা যায়। আবার এগুলো আলাদা আলাদা গুঁড়া করে মিশিয়ে কারি পাউডার তৈরি করা যায়। চাট মসলা হিসেবেও এগুলো ব্যবহার করা যায়।
পাঁচফোড়ন যেকোনো নিরামিষ, মাছের তরকারি, আচার, চাটনিতে ব্যবহার করা যায়।
ডালে পাঁচফোড়ন দেন অনেকেই। আবার পাঁচফোড়নের মসলাগুলো আলাদাভাবেও যেকোনোটি দিতে পারেন।
শুধু মেথি দিয়ে মাংস, মাছ রান্না করলে খেতে সুস্বাদু লাগে।।
যেকোনো ভুনা মাংসে, কিছু কিছু সবজিতে সরিষা দেওয়া যায়। গুঁড়া মাছের চচ্চড়িতে সরিষা বাটা দিতে পারেন।
যেকোনো তরকারিতে ফোড়ন দিলে সরিষা গোটা ব্যবহার করা ভালো। সরিষা ইলিশ, সবজি, মাছ, মাংসতে সরিষা বেটে দিতে হবে।
রুই, চিতই, পাঙাশ এসব বড় মাছে দারুচিনি, এলাচ, জায়ফল, জয়ত্রী, লবঙ্গ, তেজপাতা ইত্যাদি মসলা গোটা বা বেটে দেওয়া যায়।
জায়ফল বা জয়ত্রী গুঁড়া করে বা বেটে পোলাও, বিরিয়ানি, খিচুড়িতে দেওয়া যায়।
কাবাব চিনি, স্টার অ্যানিস কাবাব তৈরিতে ব্যবহার করা যেতে পারে। আবার এগুলো মাংস ও বিরিয়ানিতে ব্যবহার করলে ভিন্ন স্বাদ পাবেন।
পিপল, খসখস, একাঙ্গি এ-জাতীয় মসলা কাবাবে ব্যবহার করা যায়। গরম মসলার (দারুচিনি, এলাচ, লবঙ্গ, সাদা গোলমরিচ, জিরা, জায়ফল, জয়ত্রী) গুঁড়ার সঙ্গে মিশিয়ে এসব ব্যবহার করা যায়।
পাপরিকা, রোজমেরি, অরিগানো, ফাইভ স্পাইস, চারমগজ ইত্যাদি মসলা রান্নায় নতুন স্বাদ আনে। বিশেষ করে একটু ভিন্ন স্বাদে গরু বা মুরগির মাংস রান্নায় এগুলো ব্যবহার করতে পারেন।
পেস্তাবাদাম, আমন্ডবাদাম, কাজুবাদাম, চিনাবাদাম এসব বেটে ব্যবহার করতে পারেন মিষ্টান্ন বা বিরিয়ানিতে। গ্রেভির স্বাদ বাড়ে বাদামবাটা দিলে। গোটা বা বাটা জাফরানও দিতে পারেন।
কিশমিশ, আলুবোখারা আস্ত বা বেটে দেওয়া যায় বিভিন্ন রকম মাংসে।
মসলার সংরক্ষণ
মসলা সংরক্ষণ নিয়ে পরামর্শ দিয়েছেন গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের গৃহ ব্যবস্থাপনা ও গৃহায়ণ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রিনাত ফওজিয়া।
পেঁয়াজ, মরিচ, ধনেপাতা সব মসলাই কোনো না কোনো গাছের অংশ। এসব মসলা তাই স্যাঁতসেঁতে স্থানে বা ভিজে গেলে নষ্ট হয়ে যায়।
প্লাস্টিকের বা কাচের ঢাকনাওয়ালা পাত্রে বা কনটেইনারে মসলা সংরক্ষণ করে রাখতে পারেন।
ধাতব পাত্রে মসলা রাখা যাবে না কারণ গাছের কোনো না কোনো অংশ থেকেই আমরা মসলা পাই। এসব গাছের তেলের অংশ থেকে ধাতুর নানা ক্রিয়া-বিক্রিয়া হতে পারে। যা শরীরে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে।
বাতাস চলাচল করতে পারে, আলো কম থাকে এসব স্থানে মসলার কৌটা রাখতে হবে। তাপ থেকে দূরে রাখতে হবে।
রান্নাঘরে চুলার ওপর কেবিনেট থাকে। এসব কেবিনেট যেহেতু গরম হয়ে যায়, তাই এসব স্থানে মসলার কৌটা না রাখাই ভালো।
মসলা কৌটা থেকে বারবার বের করে ব্যবহার না করে রান্নার আগেই আলাদা পাত্রে তা গুছিয়ে নেওয়া ভালো। চুলা ধরানোর পর বারবার তাহলে মসলার পাত্রের মুখ খুলতে হবে না। •
গুঁড়া মসলা সাধারণত ছয় মাস ভালো থাকে। তবে মরিচ ছয় মাস থাকে না। তাই মরিচের কৌটা ফ্রিজের ভেতর রাখাই ভালো।
গরম মসলা গোটা রেখে দেওয়াই ভালো। যখন প্রয়োজন তখনই গুঁড়া করে নিন।