রাগ নিয়ন্ত্রণে রাখুন

অত্যধিক রাগ মানসিক সমস্যার কারণে হতে পারে। মডেল: ইমরানছবি: অধুনা

‘রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন’ প্রচলিত বাক্যটি জানেন অনেকেই। তারপরও মুহূর্তের আবেগে, অনুভূতির তীব্রতায় আমরা রেগে যাই। কেউ কেউ নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারান সহজে। ফলে ঘটতে পারে দুর্ঘটনাও। রাগের মাথায় একটা কিছু বলে বা করে ফেলে পরবর্তী সময়ে আক্ষেপও করেন তাঁরা। অনিয়ন্ত্রিত রাগের কারণে শরীরের ক্ষতি হতে পারে। প্রচণ্ড রাগান্বিত অবস্থায় নিক্ষেপিত বাক্যবাণের কারণে সম্পর্কে চিড় ধরতে পারে। তাই রাগ নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি।

তবে রাগ নিয়ন্ত্রণ মানে এমন নয় যে নিজের ভেতর রাগ চেপে রাখবেন। আবেগ চেপে গুমরে পড়ে থাকা মানসিক স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর। তাই যে বিষয় আপনার রাগের কারণ, তার সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিকে নিয়ে সহজভাবে বিষয়টি আলাপ করতে পারেন। তবে এই আলাপ-আলোচনার সঠিক সময় তখনই, যখন এর সঙ্গে সম্পৃক্ত সব ব্যক্তি ঠান্ডা মাথায় থাকেন।

তাহলে ক্রোধের উত্তপ্ত মুহূর্তে কী করবেন? ব্যক্তিভেদে আবেগ নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি আলাদা। তবে কিছু বিষয় নিজের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করে দেখতে পারেন। রাগের বিষয়টিকে রাগের মুহূর্তে মন থেকে এড়িয়ে যাওয়াই মূল সমাধান।

কথাই অমৃত, কথাই গরল

কথা নাকি বন্দুকের গুলির মতো। একবার ছুটে বেরিয়ে গেলে আর ফেরানোর উপায় নেই। তাই কথা বলুন বুঝেশুনে। কথাই মিষ্টিমধুর, কথাই তিতকুটে। আবার একই কথা বলা যায় নানাভাবে। তাই ক্রোধান্বিত অবস্থায় হুট করে কিছু বলে বসবেন না। যখন ভদ্রতা বজায় রেখে কথা বলতে না পারার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়, তখন চুপ করে থাকাই ভালো। এমন কথা কখনোই বলবেন না, যার কারণে পরে অনুতপ্ত হতে পারেন। তাই ভেবেচিন্তে কথা বলুন। যে কথায় নিজের সামাজিক ও পারিবারিক মর্যাদার হানি হতে পারে, এমন কথা কখনোই বলা যাবে না।

অপর পক্ষ উল্টোপাল্টা কথা বললেও আপনার সে কথার জবাব দেওয়ার প্রয়োজন নেই। আপনার পরিবার, শিক্ষা, বেড়ে ওঠা নিয়ে যেকোনো ব্যক্তি যা খুশি বলে দিলেই যে সেটি আপনাকে তৎক্ষণাৎ শুধরে দিতে হবে, তা কিন্তু নয়। আবার আপনারও তাঁকে পাল্টা মন্দ কথা বলা ঠিক নয়। কর্মক্ষেত্রে, বাজারে, গণপরিবহনে অনাকাক্ষিত ঘটনা ঘটতেই পারে। এসব ক্ষেত্রে নানান ধরনের চাপে মাথা গরম থাকে অনেকের। তাই জবাব যতটা কম দেওয়া যায়, ততই ভালো। কোনো ব্যক্তির কাজে রাগের উদ্রেক হলে তাঁকে এড়িয়ে যান। আর যাঁর সঙ্গে আপনি ক্রোধের মুহূর্তটির পরও চলবেন-ফিরবেন, তাঁর সঙ্গে আলাপ করার জন্য আপনি পরে কোনও একটি সময় বেছে নিতে পারেন।

প্রশ্বাসে প্রশান্তি, এড়িয়ে অশান্তি

রেগে গেলে খুব গভীরভাবে শ্বাস নিন। শ্বাস-প্রশ্বাসের সময় নিজেকে ধীরে ধীরে বলতে পারেন, ‘এটা কোনো ব্যাপার নয়’, ‘রিল্যাক্স’ বা এ রকম কোনো কথা। রাগ নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত এভাবেই বলতে থাকুন। নিজেকে ভালো কথা বলুন। ভালো কিছু চিন্তা করুন। ভালো–মন্দের বোধ হারিয়ে ফেলার আগে মনকে অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিন। পছন্দের অডিও ক্লিপ চালু করে ফেলুন। কিংবা পছন্দের বইয়ের পাতায় (বা ডিজিটাল স্ক্রিনে) চোখ রাখুন। মনোনিবেশ করুন এ রকম কোনো কিছুতে। এড়িয়ে যান অনাকাঙ্ক্ষিত বাক্যালাপ। দাঁড়ানো অবস্থা থাকলে বসে পড়তে পারেন। চোখেমুখে পানিও ছিটাতে পারেন।

হাসিই মহৌষধ, ভাবনায় ভালোবাসা

অন্যের কথায় কান দেবেন না। আশপাশ থেকে অনেকেই বলতে পারেন, ‘আরে ভাই!আপনারে এত বড় কথাটা বলল, আর আপনি ওরে ছেড়ে দিচ্ছেন? আমি হলে তো ওর নাম ভুলায় দিতাম আজকে।’ এমন কোনো কথা কানে এলে সেই বক্তার দিকে তাকিয়ে একটু হেসে মাথাটা নাড়িয়ে বুঝিয়ে দিতে পারেন, আপনাকে প্ররোচিত করা সহজ নয়। হাসির পর আস্তে করে বলতেও পারেন, ‘থাক, বাদ দিন।’

যা নিয়ে মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে, সেটির মধ্যে ‘হাস্যরসাত্মক’ কিছু থাকলে মনে মনে নাহয় বেশ একটু হেসে নিন। ধরুন, বাসের জানালার পাশে বসতে চাওয়া নিয়ে একটি তর্কাতর্কি শুরু হয়েছে। রাগ চড়ছে। এই সময় ভাবুন, কী ক্ষুদ্র একটি বিষয় নিয়ে মাথা গরম করছেন আপনি! বিষয়টা সত্যিই ‘হাস্যকর’ ঠেকবে আপনার কাছে। তর্কের অধিকাংশ বিষয়ই নিতান্ত ‘তুচ্ছ’, যেগুলোকে আমরা সাময়িকভাবে বড় মনে করি। ছোট্ট এই জীবনে করার আছে অনেক কিছু। রাগ প্রকাশে বুদ্ধি-শক্তি খোয়াবেন কেন? সব কথাকেই ‘চ্যালেঞ্জ’ হিসেবে নেবেন না। মনে রাখবেন, জীবনে জেতার বহু সত্যিকার ‘চ্যালেঞ্জ’ রয়েছে। ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার কথা বারবার ভাববেন না। ক্ষমা মহৎ গুণ। অন্যের কারণে মনমেজাজ খারাপ হলেও মন থেকে তাঁকে ক্ষমা করে দিন, নিজের মনের উদারতায় নিজেই শান্তি পাবেন। তুচ্ছ ঘটনা ভুলে যান। তবে কারও কারও ক্ষেত্রে অত্যধিক রাগ মানসিক সমস্যার কারণে হতে পারে, তাই কোনোভাবেই রাগ নিয়ন্ত্রণে না থাকলে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।

তথ্যসূত্র: ফেমিনা ও নিউজ ১৮