রেডিওথেরাপি চিকিৎসা পদ্ধতির মাধ্যমে বিকিরণ রশ্মি ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়। এটি দেওয়া হয়ে থাকে টেলিথেরাপি ও ব্রাকিথেরাপির মাধ্যমে। টেলিথেরাপি হলো বিকিরণ রশ্মি, শরীরের বাইরে থেকে নির্ধারিত ও নির্দিষ্ট স্থানে প্রয়োগ করা হয়। এখানে রোগীকে সঠিকভাবে অবস্থানের জন্য ইমমোবালাইজেশন ডিভাইসের মাধ্যমে পজিশনিং করানো হয়। ব্রাকিথেরাপির মাধ্যমে বিকিরণ রশ্মি শরীরের ভেতরে ক্যানসার আক্রান্ত অংশে অ্যাপ্লিকেটরের মাধ্যমে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
আমাদের দেশে প্রধানত টেলিথেরাপির মাধ্যমে মুখগহ্বর, কণ্ঠনালি, গলা, ফুসফুস, স্তন, জরায়ুমুখের ক্যানসারের চিকিৎসা দেওয়া হয়ে থাকে। জরায়ুমুখে ব্রাকিথেরাপিও করা হয়। রেডিওথেরাপি সম্পর্কে রোগীদের বিভিন্ন ধরনের ভ্রান্ত ধারণা আছে। কেউ কেউ মনে করেন, হাত-পায়ে মেশিনের সাহায্যে তাপ প্রয়োগ করা হয় বা সেঁক দেওয়া হয়। এতে শরীরের চামড়া পুড়ে যেতে পারে। কারও ধারণা, হাত-পা বেঁধে মেশিনের সাহায্যে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এসব ভেবে ক্যানসার রোগীরা আরও বেশি আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।
এমন ধারণা মোটেও ঠিক নয়। চিকিৎসাবিজ্ঞানের উন্নতির সঙ্গে রেডিওথেরাপি চিকিৎসায়ও যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। গামা নাইফ ও সাইবার নাইফ রেডিয়েশন অনকোলজির যুগান্তকারী টেকনিক হিসেবে ব্রেইন টিউমারের চিকিৎসা দেওয়া হয়। তাতে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয় না।
রেডিওথেরাপির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অন্যান্য ক্যানসার চিকিৎসা পদ্ধতির চেয়ে কম। চিকিৎসার স্থান ভেদে পার্শ্বক্রিয়া পরিলক্ষিত হয়। মুখ ও গলার ক্যানসার চিকিৎসার সময় মুখে ঘা, গিলতে ব্যথা, খাওয়ায় অরুচি ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে।
রোগী যখন ফুসফুস ক্যানসারের জন্য রেডিওথেরাপি গ্রহণ করে, তখন তার কিছু উপসর্গ পরিলক্ষিত হয়। বমিভাব, খাওয়ায় অনীহা, দুর্বলতা; কোনো কোনো ক্ষেত্রে কাশি ও সামান্য জ্বর দেখা দিতে পারে, যেটি রেডিয়েশন সিকনেস নামে পরিচিত। এ অবস্থায় রোগীকে এ সম্পর্কে ধারণা দিতে হবে ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়াতে হবে। বিশেষ করে বিভিন্ন ধরনের খাবার, পানীয় ও ফলমূলজাতীয় জিনিস বেশি করে খেতে দিতে হবে। নারীদের স্তন ক্যানসারে চেস্টওয়াল ও গলার নিচ অংশে (সুপারক্লেভ এরিয়া) রেডিওথেরাপি দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে ফুসফুস ও বিপরীত দিকের স্তন, গলা ও ট্রাকিয়ায় রেডিয়েশন যেতে পারে। এতে গিলতে অসুবিধা, কাশি ও জ্বর হয়। এ জন্য চিকিৎসার সময় রোগীকে সঠিকভাবে পজিশনিং করতে হবে।
রেডিওথেরাপি চলা অবস্থায় ক্যানসার রোগীকে গোসল করানো যাবে না বা পানি লাগানো যাবে না। এটা অবশ্য কোন ধরনের যন্ত্র ব্যবহার করা হয়, সেটার ওপর নির্ভর করে।
অধ্যাপক ডা. মো. ইয়াকুব আলী,অধ্যাপক ও প্রধান, অনকোলজি বিভাগ,এনাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, সাভার, ঢাকা