শিং মাছের নতুন প্রজাতি

গত বছর মেনি মাছের নতুন প্রজাতি শনাক্ত করে চারদিকে হইচই ফেলে দেওয়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই গবেষক এবার শিং মাছের নতুন একটি প্রজাতি আবিষ্কার করেছেন। মেরিন সায়েন্সেস অ্যান্ড ফিশারিজ ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক মো. শাহাদাত হোসেন ও তাঁর গবেষণা সহযোগী সুব্রত সরকার গত বছর নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ উপজেলা থেকে মাছটি সংগ্রহ করেন।

তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে ও বিশ্বের নানা গবেষণা প্রতিষ্ঠানে সংরক্ষিত নমুনার সঙ্গে মিলিয়ে দেখার পর এই মাছ নতুন প্রজাতির বলে তাঁরা শনাক্ত করেন। মৎস্য বিজ্ঞানী অধ্যাপক ননী গোপাল দাশের নাম অনুসারে গবেষকেরা নতুন প্রজাতির এই মাছের নাম রাখেনheteropneustes nani। জার্মানির গবেষণা সংস্থা ‘সেনকেনবার্গ নেচার রিসার্চ সোসাইটি’ কর্তৃক প্রকাশিত ভার্টিব্রেট জুলজি নামের বিজ্ঞান সাময়িকীর ডিসেম্বর ২০১৩ সংখ্যায় এই গবেষণা ফলাফল প্রকাশিত হয়।

নোয়াখালীর গ্রামাঞ্চলে লিয়া শিং নামে পরিচিত এই নতুন প্রজাতিটির পিঠের অংশ গাঢ় কালো, পেটের দিকের রং হালকা। ধূসর বুকে অসংখ্য সুক্ষ্ম দাগ, শরীরের মাঝ বরাবর দুটি অনুজ্জ্বল সমান্তরাল রেখা দেখা যায়। মাথা চাপা ও চ্যাপ্টা। ছোট আকারের এই মাছ শিং মাছের পঞ্চম প্রজাতি। এটির গড় দৈর্ঘ্য ১১৫-১২০ মিলিমিটার এবং ওজন ২০-২৫ গ্রাম।

এবার নতুন প্রজাতির শিং মাছটি শনাক্ত করার কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে দুই গবেষককে সহায়তা করেছেন একই ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সাইদুর রহমান চৌধুরী ও এস এম শরীফুজ্জামান।

যেভাবে শনাক্ত হলো: গবেষকেরা জানান, কয়েক বছর আগে মাছটির নমুনা সংগ্রহের পর গবেষকেরা দেখেন এটির বৈশিষ্ট্য প্রচলিত শিং মাছগুলোর চেয়ে আলাদা। পরে পৃথিবীর বিভিন্ন জীব-জাদুঘরে সংরক্ষিত শিং মাছের নমুনা এবং তথ্যের তুলনামূলক বিশ্লেষণ করে বিষয়টি সম্পর্কে নিশ্চিত হন তাঁরা। জার্মানির বিজ্ঞান সাময়িকী ভার্টিব্রেট জুলজিতে এই গবেষণার ফলাফল ছাপা হলে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও মেলে।

গবেষকেরা জানান, শিং মাছ সিলুরিফরমেস বর্গের অন্তর্গত ও হেটারোপনেসটিডি পরিবারভুক্ত। এর আগে বিশ্বে শিং মাছের চারটি স্বীকৃত প্রজাতি ছিল।

১৭৯৪ সালে বৈজ্ঞানিক এম ই ব্লচ তৎকালীন ভারতবর্ষের তামিলনাড়ুতে শিং মাছের প্রথম প্রজাতি শনাক্ত করেন।

গবেষকেরা আরও জানান, বৃহত্তর নোয়াখালীর বিস্তীর্ণ জলাভূমিসহ সমগ্র বাংলাদেশের পূর্ণাঙ্গ জীববৈচিত্র্যের বিজ্ঞানভিত্তিক অনুসন্ধান করা এখনো সম্ভব হয়নি। এমন অনুসন্ধান হলে আরও নতুন প্রজাতির প্রাণী শনাক্ত করা যাবে বলে তাঁরা মনে করেন।