শিক্ষার্থীরা কোথায় পাবেন মানসিক স্বাস্থ্যসেবা

ছবিটি প্রতীকী
ছবি: প্রথম আলো

১৯৯২ সাল থেকে প্রতিবছর ১০ অক্টোবর ‘বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস’ পালিত হয়ে আসছে। কিন্তু মানসিক স্বাস্থ্যসেবার প্রয়োজনীয়তা বিশ্বব্যাপী এত প্রবলভাবে সম্ভবত এর আগে কখনো অনুভূত হয়নি। শিক্ষা, অর্থনীতি ও জীবনযাত্রার পাশাপাশি আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যেও বড় ধরনের আঘাত হেনেছে করোনা। অনেকে স্বজন হারিয়েছেন, কেউ হারিয়েছেন উপার্জনের পথ। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ওলটপালট হয়ে যাওয়ায় অনেক শিক্ষার্থীকে ঘিরে ধরেছে বিষণ্নতা ও উদ্বেগ। তাই এ বছর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা দিবসটির স্লোগান নির্ধারণ করেছে—‘সবার জন্য মানসিক স্বাস্থ্য সেবা: চলুন নিশ্চিত করি’।

দীর্ঘ বিরতির পর শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ফিরতে শুরু করেছেন। ছাত্রছাত্রীদের মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা দিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কি তৈরি আছে?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশনাল অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগ থেকে শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হয়। বিভাগের চেয়ারম্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-নির্দেশনা ও পরামর্শদান দপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক মেহজাবীন হকের তত্ত্বাবধানে বিভিন্ন সেবা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। মুঠোফোন ছাড়াও অনলাইনে ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপে এই সেবা পাওয়া যায়। মেহজাবীন হক বলেন, ‘আমরা শিক্ষার্থীদের নানাভাবে সংযুক্ত করার চেষ্টা করেছি। শিক্ষার্থীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের মাধ্যমে কর্মশালা ও সেশন পরিচালনা করেছি। করোনার শুরু থেকেই বিভিন্ন উপায়ে ছাত্রছাত্রীদের মানসিক স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। তবে আমরা যতটা প্রত্যাশা করেছিলাম, ছাত্রছাত্রীরা সেভাবে সাড়া দেননি। এখনো মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সংশয় ও দ্বিধা থাকার কারণে অনেক শিক্ষার্থী আমাদের কাছে আসেন না। নিজের মধে৵ লুকিয়ে থাকেন, নিজেকে কষ্ট দেন। আমরা চাই সব শিক্ষার্থী মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতন হোক, জানার চেষ্টা করুক।’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীদেরও মানসিক স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ে পরামর্শ ও সহায়তা দিচ্ছে এই বিভাগ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশনাল অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগের ফেসবুক পেজের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা যোগাযোগ করতে পারেন।

ঢাকার ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে এমবিএ পড়ছেন জেনিফার বিনঞ্জলি। মহামারির সময়ে এক দিকে অনলাইনে পরীক্ষা, অ্যাসাইনমেন্ট, প্রেজেন্টেশন ও পড়াশোনা; অন্যদিকে ঘরের বাইরে যাওয়ার সুযোগ কমে যাওয়া—সব মিলিয়ে বেশ চাপ অনুভব করছিলেন তিনি। জেনিফার বলেন, ‘এ সময়ে নিজের শখের পেছনে সময় দেওয়ার চেষ্টা করেছি। হতাশা আর একঘেয়েমি তো ছিলই। তাই ক্যাম্পাসের কাউন্সেলিং ইউনিটের সহায়তা নিয়েছিলাম।’
ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির কাউন্সেলিং ইউনিট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন মানসিক সংকটে সহায়তা দিচ্ছে। কাউন্সেলিং ইউনিটের সাইকোসোশ্যাল কাউন্সেলর আয়েশা সিদ্দিকা বলেন, ‘শুধু শিক্ষার্থী নয়, অভিভাবক ও শিক্ষকদেরও আমরা যুক্ত করার চেষ্টা করেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়োজনে বিভিন্ন ওয়েবিনার ও কর্মশালা হয়েছে। জড়তার কারণে অনেক শিক্ষার্থী সরাসরি কাউন্সেলিংয়ে আসতে চাইতেন না। অনলাইনে যোগাযোগের সুবিধা থাকায় এই জড়তা অনেকটা কেটেছে। শিক্ষার্থীরা তাঁদের সংকট ও সমস্যা আমাদের জানাচ্ছেন।’ কাউন্সেলিং ইউনিট, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির বিভিন্ন অধিবেশন, কর্মশালা ও ওয়েবিনারের খোঁজ পাওয়া যাবে এই ঠিকানায়

বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-নির্দেশনা ও পরামর্শদান দপ্তরসহ কাউন্সিলরের কার্যালয় ও স্টুডেন্ট অ্যাফেয়ার্স অফিসের মাধ্যমে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা ও কাউন্সেলিং দেওয়া হচ্ছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি, ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ, ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি, গ্রিন ইউনিভার্সিটিসহ বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের অনলাইন ও মুঠোফোনে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হচ্ছে।

মনোস্বাস্থ্য সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ‘মনের বন্ধু’ও করোনার সময়ে শিক্ষার্থী ও তরুণদের অনলাইন বা মুঠোফোনে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা দিয়েছে। মনের বন্ধুর সাইকোসোশ্যাল কাউন্সিলর মেহেদি মোবারক বলেন, ‘করোনাকালে টেলিকাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে আমরা ৩১ হাজার মানুষকে বিনা মূল্যে মানসিক স্বাস্থ্য সেবা দিয়েছি, যাঁদের মধ্যে শতকরা ৬০ ভাগ তরুণ। পড়াশোনা ও ক্যারিয়ার নিয়ে দুশ্চিন্তা, সম্পর্ক বা পরিবারসংক্রান্ত সমস্যায় ছাত্রছাত্রীরা আমাদের কাছ থেকে সহায়তা পাচ্ছেন।’ মনের বন্ধুর ফেসবুক পেজের মাধ্যমে মানসিক স্বাস্থ্যসেবাসংক্রান্ত পরামর্শ পাওয়া যাবে। ০১৭৭৬৬৩২৩৪৪ নম্বরে ফোন করেও শিক্ষার্থীরা মনের বন্ধুর কাউন্সেলরদের কাছ থেকে বিনা মূল্যে সহায়তা নিতে পারেন। এ ছাড়া মনের বন্ধুর ওয়েবসাইটে অনলাইন কোর্সে অংশগ্রহণের মাধ্যমে নিজের মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা পাওয়া যাবে।