শীতে শিশুর গোসল

খোকার ঠোঁটে যে হাসিখানি
চমকে ঘুমঘোরে—
কোন্ দেশে যে জনম তার
কে কবে তাহা মোরে।
রবীন্দ্রনাথের কাব্যে ‘খোকা’র মুখের হাসির বর্ণনা। শিশুর মুখের হাসির জন্য মা-বাবার শতসহস্র চেষ্টা চলে অবিরাম। কখনো ঘোড়া সেজে পিঠে সওয়ার করা, কখনো গল্পের রাজ্যে ডুব। শিশুর নিরাপত্তা আর সুস্থতার জন্য হাজারো চিন্তা মনে। শিশুর খাওয়া, ঘুম, গোসল—কী নিয়ে নেই ভাবনা!
শীতের সময় বড়রাই গোসল করতে হিমশিম খান। এমন সময় শিশুকে গোসল করাতে গেলে নানা প্রশ্ন আসতে পারে মনে। গোসল করালে শিশুর ঠান্ডা লেগে যাবে কি না কিংবা না করালে অপরিষ্কার শরীর রোগে পড়বে কি না, এই নিয়ে দ্বিধায় পড়তে পারেন। জেনে নিন বিশেষজ্ঞ মতামত। ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের শিশু বিভাগের অধ্যাপক রোকেয়া খানম বলেন, কুসুম গরম পানিতে শিশুকে গোসল করাতে হবে। প্রতিদিন গোসল করান। তবে আবহাওয়া বুঝে এক-দুই দিন পরপর গোসল করানো লাগতে পারে। শিশুকে গোসলের আগে সাবান লাগিয়ে দিন এক-দুই দিন পরপর। সপ্তাহে দুই দিন শ্যাম্পু করাতে পারেন।
নবজাতকের বাড়তি যত্ন
ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের নবজাতক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মনীষা ব্যানার্জি জানালেন, জন্মের পর অন্তত ৭২ ঘণ্টা শিশুকে গোসল করানো যাবে না। সবচেয়ে ভালো হয় নবজাতকের নাভি পড়ে স্বাভাবিক অবস্থায় চলে এলে তারপর প্রথম গোসল করালে। প্রথম গোসলের পর সুস্থ নবজাতককে প্রতিদিনই চাইলে গোসল করাতে পারেন। তবে আবহাওয়া বেশি ঠান্ডা হলে এক দিন পরপর গোসল করানো যায়। এমনকি খুব বেশি ঠান্ডার সময় সপ্তাহে দুই দিন গোসল করালেও ক্ষতি নেই। ফোটানো পানি যখন কুসুম গরম অবস্থায় থাকে, সেই সময় শিশুকে গোসল করাতে হবে। সপ্তাহে দুই দিন সাবান-শ্যাম্পু ব্যবহার করে গোসল করাতে পারেন। পূর্ণ গর্ভকাল পেরিয়ে যেসব শিশুর জন্ম, যাদের জন্মের সময়কার ওজন স্বাভাবিক, তাদের জন্যই এসব নিয়ম। অন্যদের (অপরিণত অবস্থায় বা কম ওজন নিয়ে জন্মানো শিশু) বেলায় নিয়ম আলাদা, কারণ তাদের নিউমোনিয়ার মতো জটিল সমস্যার ঝুঁকি বেশি। তাই তাদের ক্ষেত্রে চিকিত্সকের পরামর্শ আলাদাভাবে জেনে নিতে হবে।
তেল মালিশের বৃত্তান্ত
তেল মালিশ করলে শিশুর ঠান্ডা লাগবে না, এমন ধারণা ঠিক নয়। রসুন গরম তেল মালিশ করলে শিশুর বাড়তি কোনো উপকার নেই। নবজাতককে (অর্থাৎ জন্মের পর ২৮ দিন বয়স পর্যন্ত) তেল মালিশ না করাই ভালো। নবজাতকের সঠিক তাপমাত্রা ধরে রাখার জন্যই এই সতর্কতা। নবজাতকের ত্বক বেশি শুষ্ক হয়ে পড়লে, চামড়া উঠে আসছে বলে মনে হলে প্রতিদিন একবার ভালো মানের ময়েশ্চারাইজার লাগাতে পারেন। ২৮ দিন বয়স পেরোলেও তেল মালিশকে বৈজ্ঞানিকভাবে খুব উপকারী বলা হয় না (তৈলাক্ত ত্বকে ময়লা আটকে যাওয়ার ভয় থাকে বলে), তবে চাইলে গোসলের পর শিশুর উপযোগী তেল, অলিভ অয়েল হালকাভাবে লাগাতে পারেন। সরিষার তেল বা এ রকম ঘন তেল ব্যবহার না করাই ভালো। বরং শিশুর উপযোগী ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা যায়।
আরও কিছু
সারা দিনের মধ্যে তাপমাত্রা যখন সবচেয়ে বেশি থাকে (দুপুর ১২টা- বেলা ১টার দিকে), গোসল করানোর জন্য সেই সময়টাই ভালো।
গোসলের সময় নরম কাপড় দিয়ে শিশুর শরীরের ভাঁজগুলো পরিষ্কার করে দিতে পারেন।
যেদিন সাবান লাগানো হবে, সেদিন শরীরের কিছু অংশ (যেসব অংশ খোলা থাকে) একটু ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিন।
গোসলের সময় যতটা সম্ভব কম রাখুন। সাবান-শ্যাম্পু করালেও সময় যেন খুব বেশি না লাগে। বেশি সময় ধরে গোসল করালে (বা বেশি শীতে ঘন ঘন গোসল করালে) শিশুর ঠান্ডা লেগে যেতে পারে। হতে পারে নিউমোনিয়াও।
চটজলদি গোসল সেরেই ভালোভাবে মুছে দিন আর গরম কাপড় পরিয়ে দিন।
যেদিন গোসল করানো হবে না, সেদিন নরম কাপড় দিয়ে শরীর মুছে দিন। মাথাও ধুয়ে দিতে পারেন। অবশ্যই জামাকাপড় বদলে দিন প্রতিদিন এক বা একাধিকবার, শিশু আরাম পাবে।
উন্মুক্ত স্থান, যেখানে বাতাস লাগে, সেখানে শিশুকে গোসল করাবেন না। গোসল করানোর সময় বা গোসলের পর গা মুছে দেওয়ার সময় খেয়াল রাখতে হবে, কাছে যেন এমন কোনো পানির উত্স বা পাত্র না থাকে, যার মধ্যে শিশু হঠাৎ পিছলে পড়ে যেতে পারে। কাছাকাছি খুব গরম পানি যেন না থাকে। শিশুর বিচরণক্ষেত্রে সব সময়ের জন্যই প্রয়োজন এ ধরনের সতর্কতা।