২০২১ সালের এপ্রিল। করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় সারা দেশে পুরোদমে লকডাউন চলছে। মধ্যরাতে হঠাৎ বাড়ি থেকে খবর এল দিদা (দাদি) আর নেই।
আমার মা চাকরিজীবী মানুষ। মায়ের অনুপস্থিতিতে দিদার কাছেই বড় হয়েছি। আমার শৈশব, কৈশোরের অনেকটাই দিদার স্মৃতি। তাই দিদার হঠাৎ চলে যাওয়ার খবরে আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল। শেষবারের মতো তাঁকে না দেখে থাকব কী করে। কিন্তু যেতে চাইলে সকালের মধ্যে গোপালগঞ্জ পৌঁছাতে হবে। কারণ, রাস্তাঘাট, ফেরি সবই তখন বন্ধ।
নদীর ওই পারের অনেক মানুষের হয়তো আমার চেয়েও মর্মান্তিক অভিজ্ঞতা আছে। ঘাটের ফেরির বিশৃঙ্খলায় ঢাকা পৌঁছানোর আগে অ্যাম্বুলেন্সে রোগী মারা যাওয়ার ঘটনা নেহাত কম নয়
পরিচিত অনেকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলাম। কিন্তু কেউ কোনো উপায় বলতে পারল না। ফেরি না চললে যাওয়ারও কোনো উপায় নেই।
তবে মন আর মানল না। মাকে নিয়ে খুব ভোরে গাড়ি ভাড়া করে কোনোরকমে মাওয়া ঘাটে গিয়ে পৌঁছালাম। যথারীতি ফেরি বন্ধ। ক্লান্তি আর বেদনা—সব মিলিয়ে আমি যেন ভেঙে পড়লাম। আমরা কী করব, বুঝতে না পেরে ঘাটেই অপেক্ষা করছিলাম। কিছুক্ষণ পর সৃষ্টিকর্তা যেন মুখ তুলে চাইলেন। পরিচিত একজনের সহায়তায় সকালে ফেরি পারাপারের ব্যবস্থা হলো।
ভাগ্য আমাদের পক্ষে না থাকলে হয়তো দিদাকে শেষবারের মতো দেখতে পেতাম না।
নদীর ওই পারের অনেক মানুষের হয়তো আমার চেয়েও মর্মান্তিক অভিজ্ঞতা আছে। ঘাটের ফেরির বিশৃঙ্খলায় ঢাকা পৌঁছানোর আগে অ্যাম্বুলেন্সে রোগী মারা যাওয়ার ঘটনা নেহাত কম নয়। এ রকম খবর পেলেই আমার মনে হতো, ‘ইশ, পদ্মা সেতুর কাজ কবে যে শেষ হবে!’
অবশেষে বহু প্রত্যাশার সেই পদ্মা সেতুর দ্বার খুলল। আমাদের স্বপ্ন আলোর মুখ দেখছে। এই সেতু আমাদের জন্য কতটা প্রয়োজনীয়, সেটা বলে বোঝানো যাবে না। ঈদের সময় বাড়ি ফেরার কষ্টটাও পদ্মার ওপারের মানুষেরই বেশি। ঈদের সময় লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী বহন করা হয়। লঞ্চগুলোতে তখন পা ফেলার জায়গা থাকে না। ফলে ঈদের সময় লঞ্চডুবির ঘটনাও তো কম নয়। ফেরিতে একরকম যুদ্ধ করে ঈদের সময় নদী পার হতে হয়। এবারের ঈদে নিশ্চয় সেসব শঙ্কা থাকবে না। স্বপ্নের সেতু পাড়ি দিয়ে নির্ঝঞ্ঝাটহীন বাড়ি ফিরবে।