শ্যামলবরন মেয়েটি...

মানানসই সাজ–পোশাকে ফুটে ওঠে সৌন্দর্য্য। ছবি: কবির হোসেন, মডেল: জে্যাতি, সাজ: কানিজ আলমাস খান, পোশাক: বিবিয়ানা
মানানসই সাজ–পোশাকে ফুটে ওঠে সৌন্দর্য্য। ছবি: কবির হোসেন, মডেল: জে্যাতি, সাজ: কানিজ আলমাস খান, পোশাক: বিবিয়ানা

মেঘলা দিনে ময়নাপাড়ার মাঠে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যে মেয়ের কালো হরিণ চোখের দেখা পেয়েছিলেন, তারই নাম দিয়েছিলেন কৃষ্ণকলি। শ্যামলবরন মেয়েটিকে অন্য লোকে হয়তো ‘কালো’ বলতে পারে। তবে কবির চোখে সে কৃষ্ণকলি।

ছবি: কবির হোসেন, মডেল: জে্যাতি
ছবি: কবির হোসেন, মডেল: জে্যাতি

‘শ্যামলবরন মেয়েটি ডাগর কালো আঁখিটি না না না তার নাম বলব না...।’ এই গানেও তুলে ধরা হয়েছে শ্যামলবরন মেয়ের সৌন্দর্য। আর এত দিনে এ কথাও পরিষ্কার—রঙে নয়, সৌন্দর্যের প্রকাশ নির্ভর করে নিজেকে কীভাবে উপস্থাপন করছেন তার ওপর। গায়ের রংটা একটু চাপা বা শ্যামলা ধরনের বলে কোন রঙের পোশাকে এই যুগের মেয়েদের মানাবে, সেটি তাঁদের জন্য কখনোসখনো একটু ভাবনার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। বন্ধু বা বোন হয়তো পছন্দ করে তাঁর জন্য একটা পোশাক কিনলেন। বাসায় আনার পর তিনি নিজে যখন পরে দেখলেন, আর তখনই বুঝলেন পোশাকটা সুন্দর হলেও তাঁকে মানাচ্ছে না। মন খারাপ তো হবেই, তাই না? সাজগোজের উপকরণ বাছাইয়ের ক্ষেত্রেও অনেক সময় পড়তে হয় এমন সমস্যায়। তবে এসব সমস্যা চাপা রঙের ত্বক যাঁদের শুধু তাঁদের নয়, কমবেশি সবারই।
সাজের উপকরণ বা পোশাক যা-ই হোক না কেন, রং বাছাইয়ের ক্ষেত্রে একটু সচেতন হলেই মানানসই জিনিসটি তিনি বেছে নিতে পারেন। রূপবিশেষজ্ঞ কানিজ আলমাস খান বলেন, ‘যাঁদের গায়ের রং একটু চাপা, তাঁদের অনেকেরই ধারণা হালকা রঙের সাজপোশাক হয়তো তাঁদের জন্য মানানসই। আসলে একটু গাঢ় রঙও তাঁদের সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলবে। যেকোনো রঙের মাঝারি টোন তাঁদের জন্য ভালো হবে।’

কালো মেয়ের কালো হরিণ চোখ
কৃষ্ণকলির ছিল কাজলকালো চোখ। আজকাল আবার বিভিন্ন রঙের ব্যবহার দেখা যায় চোখের সাজে। আজকের শ্যামলবরন মেয়ের বারণ নেই নানান রঙে চোখ সাজানোর বেলাতেও। কানিজ আলমাস খান জানালেন মেরুন, ফিরোজা, নীল, বার্গেন্ডি, তামাটে (কপার) কিংবা মাঝারি শেডের বেগুনি রঙে চোখ সাজাতে পারেন অনায়াসেই। আর আইলাইনারের ক্ষেত্রেও নীল, ফিরোজা, মাঝারি শেডের বেগুনি, একটু গাঢ় সবুজ বা তামাটে রং চলতে পারে। তবে চোখের সাজে কেউ কমলা রং ব্যবহার করতে চাইলে তিনি কমলা রঙের আইলাইনারের সঙ্গে হালকা করে একটু তামাটে রঙের ছোঁয়া লাগিয়ে নিতে পারেন।

ছবি: কবির হোসেন, মডেল: জে্যাতি
ছবি: কবির হোসেন, মডেল: জে্যাতি

নানারঙা ঠোঁটকাঠি
ম্যাজেন্টা, বার্গেন্ডি, মেরুন, বাদামি রঙের পাশাপাশি চলতে পারে গাঢ় গোলাপি রঙের লিপস্টিকও। চাইলে লিপগ্লস ব্যবহার করতে পারেন। তবে কখনোই খুব হালকা রঙের লিপগ্লস লাগাবেন না। আবার চাইলে এসব রঙের মধ্য থেকে একাধিক রং বেছে নিয়ে সাজে আনতে পারেন আরেকটু বৈচিত্র্য। হয়তো লিপস্টিক বেছে নিয়েছেন মেরুন, তো তার সঙ্গে চোখের জন্য বেছে নিতে পারেন ম্যাট গোল্ড অথবা তামাটে রং।
কোন রঙে আইশ্যাডো?
মেরুন, ফিরোজা, নীল, বার্গেন্ডি, তামাটে কিংবা মাঝারি শেডের বেগুনি রঙের ব্লাশ-অন ব্যবহার করতে পারেন। এসব রং আপনার ত্বকে মানিয়ে যাবে সহজেই।
কৃষ্ণকলির নখের রঙে
বাহারি রঙের নেইলপলিশ রয়েছে বাজারে। তবে এগুলোর মধ্যে থেকে উজ্জ্বল কমলা বা কটকটে গোলাপি রং যদি বেছে নেন, তা আপনার হাতে না-ও মানাতে পারে। গাঢ় রঙের অন্যান্য নেইলপলিশ সহজেই মানিয়ে যাবে আপনার হাতে।
কখন কেমন সাজ
দিনের বেলা মেকআপ করার সময় হালকা বেজ ব্যবহারেই মেয়েটি হয়ে উঠতে পারেন অনন্যা। ত্বক পরিষ্কার করে নিয়ে ফেসপাউডার লাগিয়ে নিলেই হলো। তবে ত্বক যদি শুষ্ক প্রকৃতির হয়, তাহলে ফেসপাউডারের আগে লাগাতে পারেন একটু ময়েশ্চারাইজার। আর রাতের সাজে বেজ হতে পারে একটু ভারি। সোনালি বা তামাটে রঙে এ সময় মানাবে বেশ।
অলংকার-বাহার
উজ্জ্বল সোনালি বা চকচকে রুপার গয়নার চেয়ে অক্সিডাইজড অলংকার আপনার জন্য বেশি ভালো। গাঢ় রুপালি রঙের সঙ্গে কালো রঙের মিশেলে তৈরি গয়নাও বেশ মানানসই। তামাটে রঙের অথবা সোনালি ও তামাটে রঙের মিশ্রণে তৈরি গয়নাও পরতে পারেন।
সুস্থ ত্বক মানেই সুন্দর ত্বক
ত্বকের রং যেমনই হোক না কেন, ত্বক রাখতে হবে সুস্থ। ব্রণের দাগ বা কালো ছোপ যেকোনো রঙের ত্বকের সৌন্দর্যই নষ্ট করে দেয়। তাই প্রয়োজন নিয়মিত যত্নের। আর বিভিন্ন উপকরণ ব্যবহার করে নিজের ত্বকের রং একেবারে বদলে ফেলতে চাওয়াও ঠিক নয়।
পোশাকের রং
ফ্যাশন ডিজাইনার মাহিন খান জানালেন, চাপা রঙের মেয়েদের পোশাকে গাঢ় হলুদের ছোঁয়া থাকলেও অসুবিধা নেই। চাইলে সবুজ বা কমলা রঙের পোশাকও পরা যেতে পারে।

বিবিয়ানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ডিজাইনার লিপি খন্দকার বলেন, গায়ের রং চাপা হলে সবচেয়ে ভালো মানায় বিভিন্ন শেডের গাঢ় গোলাপি রঙ। ম্যাজেন্টা, হলুদ, মেরুন বা বেগুনি রঙের পোশাকও পরা যেতে পারে। কালো রঙের পোশাকেও তাঁদের মানিয়ে যায় বেশ। অফ হোয়াইট কিংবা নিয়ন রঙের পোশাকও তাঁরা পরতে পারেন অনায়াসে। আর পোশাকে হালকা কাজ বা ভারী কাজ যা-ই থাকুক না কেন, রং মানিয়ে গেলে সেই পোশাক তাঁরা পরতে পারেন নিশ্চিন্তে। এসব বিষয় মাথায় রেখে যেকোনো পোশাকই পরে নিতে পারেন আজকের কৃষ্ণকলি।

বুঝে–শুনে পরলে যেকোনো পোশাকই মানিয়ে যায়। ছবি: কবির হোসেন, মডেল: জে্যাতি
বুঝে–শুনে পরলে যেকোনো পোশাকই মানিয়ে যায়। ছবি: কবির হোসেন, মডেল: জে্যাতি