
আমার কাজ শুরু হয় শেষ রাতে। বাসায় ফিরি দুপুরে। তখন খাঁখাঁ রোদ। দুপুরের রোদটা বিরক্ত লাগে। সকালের রোদ দেখি না অনেক দিন।
সেদিন বৃহস্পতিবার ছিল। একাকী সংসারে ঘড়ির অ্যালার্মে জেগে উঠেছি। প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম অফিসে যাওয়ার। শেষ রাত। খুব বৃষ্টি হচ্ছিল। আমারও অফিসে যাওয়ার সময় ঘনিয়ে আসছে।
টানা দুই ঘণ্টা অঝোরে বৃষ্টি পড়ল। অফিসে যেতে পারলাম না। ঘুমও এল না। অফিসে জানিয়ে দিলাম, যেতে পারছি না।
অফিসে যাওয়া হলো না। ওদিকে বৃষ্টি পড়া একদম থেমে গেছে। ভোরও হয়ে গেছে। সূর্য উঠবে উঠবে ভাব। হঠাৎ মনে হলো, আজ ছাদে গিয়ে সকালের রোদ দেখব। সকালের রোদ গায়ে মেখে গোসল করব। আকাশের কতটাজুড়ে রোদের আনাগোনা, তা দেখব অফিসের ফাইলে আটকানো আমার ঝাপসানো চোখ দুটো দিয়ে।
আমি যে বাসাটায় থাকি, সেটা ছয়তলার মতো। সিঁড়ি বেয়ে ছাদে উঠে গেলাম সকালের রোদ দেখতে। চারদিক কেমন যেন আলোকিত, তবে দুপুরের মতো আলোকিত নয়। কেমন যেন মনে হলো, অনেক কালোর মাঝে একটু আলো ছড়িয়ে আছে। ভাবলাম, আজ অনেক বছর পর সূর্যোদয় দেখব। পূর্ব দিক হয়ে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছি, বৃষ্টি-পরবর্তী বাতাস লাগছে শীর্ণকায় শরীরে। ছাদে হালকা বৃষ্টির পানিও জমে আছে। মনে হলো, যেন সমুদ্রের এক পাশে একাকী দাঁড়িয়ে আছি খালি পায়ে। অনেক সময় হলো, কিন্তু সূর্য উঠছে না এমনটা শুধু মনে হচ্ছে।
সাড়ে সাতটা বাজতেই বিশাল একটি সূর্য পাশের একটি দালান ভেদ করে বেরিয়ে পড়ল। মাথায় আসল বিষয়টা খেলা করল তখন। সূর্য ঠিক সময়ই উঠেছে। কিন্তু আমার চোখে পড়েনি। অফিসের হাসিব সাহেব প্রায়ই বলতেন, শহরে সূর্য ওঠা দেখা যায় না। এর প্রমাণটা পেলাম আজ। উঁচু উঁচু দালানের প্রাচীর ভেদ করে উঠতে উঠতে শিশু সূর্য যেন যুবক হয়ে যায়।
সকালের রোদ আস্তে আস্তে প্রখর হতে শুরু করে দিয়েছে। আর আমারও আস্তে আস্তে রোদ থেকে দূরে সরে যেতে কেমন যেন মন চাইছে। সকালের সূর্য দেখব বলে এত আগ্রহ, তা তো হলোই না, বরং মনে মনে প্রতিদিন দুপুরে সকালের যে রোদের কথা ভাবতাম, তার পরশ কেমন যেন এই সকালে দুপুরের রোদের মতোই হয়ে গেল। শহরে সকাল, দুপুর, বিকেলের রোদ একই, যেন আগুন ঢেলে দেওয়া আছে। একটু পর ভাবলাম, এখন যদি শেষ রাতের মতো আবার বৃষ্টি হতো, আজ বৃষ্টিতে ভিজতাম। সকালের রোদের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে আমি এখন বৃষ্টির অপেক্ষা করছি।
মোহাম্মদ অংকন
ঢাকা।