সন্তানের মানসিক বিকাশে মা-বাবাই প্রধান কান্ডারি

মোহিত কামাল
মোহিত কামাল

বয়ঃসন্ধিকালটা এক অদ্ভুত সময়। ছেলেমেয়েরা বয়ঃসন্ধিক্ষণে উপস্থিত হলেই পড়ে নানা সংকটে। সঠিক তথ্যের অভাবে এ সংকট তারা কাটাতে পারে না। ফলে তারা নানা শারীরিক ও মানসিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। এ নিয়ে প্রথম আলো কথা বলেছে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ মোহিত কামালের সঙ্গে
প্রথম আলো: বয়ঃসন্ধিকালে ছেলেমেয়েদের মানসিক সমর্থন কতটা জরুরি?
মোহিত কামাল: শৈশব ও যৌবনের মধ্যবর্তী দ্রুত পরিবর্তনশীল সময়টা হচ্ছে বয়ঃসন্ধিকাল। বয়ঃসন্ধিক্ষণের শুরুতে হরমোন নিঃসরণের কারণে ছেলেমেয়েদের শারীরিক ও মানসিক বিভিন্ন পরিবর্তন দেখা যায়। ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের পরিবর্তন খুব দ্রুত ঘটে। তারা অচেনা শৃঙ্খলে আবদ্ধ হতে থাকে। ফলে এ সময় কিশোর-কিশোরীদের মানসিক সমর্থন অত্যন্ত জরুরি; যা তাদের ভবিষ্যৎ জীবন গড়তে সাহায্য করবে।
প্রথম আলো: আমাদের দেশে দেখা যায়, বিশেষ করে নিম্নবিত্ত পরিবারগুলোতে কিশোর-কিশোরীদের মানসিক সমর্থন দেওয়ার বিষয়টি কম। এটা কীভাবে কাটানো যায়?

মোহিত কামাল: কৈশোরকাল হচ্ছে আবেগের কাল। আবেগতাড়িত হয়ে এ সময় ছেলেমেয়েরা নানা রকম ভুল করে। এই বয়সের আবেগ একধরনের আত্মপ্রেম। ফলে বিভিন্ন বিষয়ে তারা পরিবারের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারে না। এ ক্ষেত্রে তাদের সঙ্গে পরিবারের দূরত্ব বাড়ে। তখন বেশির ভাগ মা-বাবা সন্তানকে মানসিক সমর্থন দেওয়ার বদলে বকাঝকা, রাগারাগি করেন। যার ফল হিসেবে সন্তান আরও ভুল পথে হাঁটতে পারে। শুধু নিম্নবিত্ত পরিবার কেন, মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত পরিবারেও বয়ঃসন্ধিকালে ছেলেমেয়েদের মানসিক সমর্থন দেওয়ার বিষয়টি কম। বয়ঃসন্ধিকাল নিয়ে সচেতনতা গড়ে নিম্নবিত্তসহ সব পরিবারকেই কিশোর-কিশোরীদের পাশে থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করা সম্ভব।
প্রথম আলো: পরিবার যদি একটি ছেলে বা মেয়েকে বুঝতে না পারে বা মানসিক সমর্থন না দেয়, এর পরিণতিতে তার কী কী ক্ষতি হতে পারে?
মোহিত কামাল: কিশোর-কিশোরীদের সুরক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করে পরিবার। পরিবারের মাধ্যমেই একটি শিশুর মানসিক বিকাশ শুরু হয়। বয়ঃসন্ধিকালে ছেলেমেয়েদের আচরণগত নানা পরিবর্তন দেখা যায়। হঠাৎ করেই তারা নিজেদের বড় ভাবতে শুরু করে। পরিবার বিশেষ করে মা-বাবাকে শত্রু মনে হতে থাকে। এ ক্ষেত্রে সন্তানের ভুল ভাঙাতে মা-বাবাকেই এগিয়ে আসতে হবে। কারণ, সন্তানকে বোঝার বা মানসিক সমর্থন দেওয়ার দায়িত্ব মা-বাবার ওপরেই অর্পিত থাকে। মা-বাবাকে সন্তানদের মনের গতিপ্রকৃতি বুঝতে হবে, তাদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। মা-বাবা যদি তা করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে সন্তানেরা মাদক গ্রহণসহ নানা সমস্যায় জড়িয়ে পড়তে পারে। মনে রাখতে হবে, সন্তানের মানসিক বিকাশে মা-বাবাই প্রধান কান্ডারি। সন্তানের বিষয়ে তাঁদের আরও সচেতন হতে হবে।
প্রথম আলো: সন্তানের বয়ঃসন্ধিকালে মা–বাবারা সাধারণত যে ভুলগুলো করেন।
মোহিত কামাল: মা–বাবারা সব সময় নিজের সন্তানকে বিদ্যালয়ের শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থী বানাতে মরিয়া থাকেন। তাঁরা সন্তানের যোগ্যতা বা সামর্থ্যের বিষয়টি মাথায় রাখেন না; যা সন্তানকে অত্যধিক প্রত্যাশার দেয়ালে দাঁড় করিয়ে দেয়। এ ছাড়া সন্তানের ওপর কঠোর নজরদারি এবং অতিরিক্ত শাসন তাদের একধরনের চাপে ফেলে দেয়। যাতে করে তারা উৎসাহ হারিয়ে ফেলে এবং নিজেকে একা ভাবতে শুরু করে। এসব বিষয়ে মা–বাবাকে সতর্ক পদেক্ষপ নিতে হবে| 
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মুসলিমা জাহান|