‘সবাই আমাকে মেসি ডাকে, কিন্তু আমার প্রিয় রোনালদো’

কক্সবাজারের উখিয়া থেকে এসে দক্ষিণ এশিয়ার বয়সভিত্তিক ফুটবল টুর্নামেন্টে আলো কেড়েছেন শাহেদা আক্তার। ২২ ডিসেম্বর ঢাকায় শেষ হওয়া অনূর্ধ্ব-১৯ নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে হয়েছেন সর্বোচ্চ গোলদাতা, জিতেছেন সেরা খেলোয়াড়ের ট্রফি। এমন অর্জনের পর নারীমঞ্চের সঙ্গে নিজের ক্যারিয়ার ও স্বপ্ন নিয়ে কথা বললেন শাহেদা আক্তার

প্রশ্ন :

অনূর্ধ্ব-১৯ নারী সাফে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ। টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ গোলদাতা ও সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জিতেছেন। কেমন লাগছে?

শাহেদা আক্তার: এখনো ঘোরের মধ্যে আছি। এর আগে বয়সভিত্তিক দুটি সাফের ফাইনালে ভারতের কাছে হেরেছিলাম। এবার সেই ভারতকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। এ আনন্দ বলে বোঝাতে পারছি না।

প্রশ্ন :

ফুটবলার হলেন কী করে?

শাহেদা আক্তার: যখন ক্লাস টুয়ে পড়ি তখন থেকেই সোনাইছড়িতে আমাদের বাড়ির সামনের মাঠে ছেলেদের সঙ্গে ফুটবল খেলতাম। কক্সবাজারের উখিয়ার সবচেয়ে বড় মাঠ ওটা। ছেলেদের সঙ্গে খেলতে গিয়ে আমার সাহস অনেক বেড়ে যায়। এরপর স্কুলের ফুটবল দলে খেলার সুযোগ দেন স্যারেরা। বঙ্গমাতা স্কুল ফুটবলে সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জিতি। আমার খেলা দেখে বিকেএসপিতে ট্রায়াল দেওয়ার কথা বলেন ফুটবল কোচ সফিউল্লাহ স্যার। ২০১৭ সালে বিকেএসপিতে ভর্তির সুযোগ পাই। ২০১৮ সালে যুব গেমসে খেলে ঢাকা বিভাগের হয়ে সর্বোচ্চ ১৩ গোল করেছিলাম।

অনূর্ধ্ব-১৯ নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে শাহেদা আক্তার হয়েছেন সর্বোচ্চ গোলদাতা, জিতেছেন সেরা খেলোয়াড়ের ট্রফি
ছবি: তানভীর আহম্মেদ

প্রশ্ন :

ছেলেদের সঙ্গে খেলাটা নিশ্চয় আন্তর্জাতিক মঞ্চে বাড়তি সুবিধা দিয়েছে?

শাহেদা আক্তার: হ্যাঁ। এটা সত্যি যে শুরুতে ছেলেদের সঙ্গে খেলে আসার কারণে তখন থেকেই আমার স্কিলে কিছুটা উন্নতি হয়েছে। যদিও ওই সময় ছেলে আর মেয়েদের খেলায় শারীরিক পার্থক্যটা খুব বেশি দেখা যায় না। ছেলেদের সঙ্গে খেলাটা আমাকে ভালো ফুটবলার হতে সাহায্য করেছে। আমার অল্প কিছুদিনের ফুটবল ক্যারিয়ারে ওই সময়ের অভিজ্ঞতাই সবচেয়ে আনন্দের, সবচেয়ে মজার।

প্রশ্ন :

তখনকার কোন স্মৃতিটা বেশি মনে পড়ে?

শাহেদা আক্তার: আসলে শুরুর দিকে আমাকে ছেলেরা খেলতে নিতে চাইত না। সবাই আমার দিকে কেমন করে তাকাত। কিন্তু যখন ছেলেদের সঙ্গে সমানতালে ফুটবল খেলতে শুরু করি, তখন ছেলেরাও বুঝতে পারে আমিও ভালো খেলি। এর পর থেকেই ছেলেরা আমাকে দলে নিতে শুরু করে।

প্রশ্ন :

অনূর্ধ্ব-১৫ সাফের জন্য ডাক পেলেন কবে?

শাহেদা আক্তার: আমি প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলি ২০১৮ সালে বিকেএসপির হয়ে। সেটা ছিল দিল্লিতে সুব্রত মুখার্জি কাপ। ওই টুর্নামেন্টে প্রথম ম্যাচেই ৪০ সেকেন্ডে গোল করেছিলাম। এটা দেখে অনেকে অবাক হয়েছিল। তখন থেকেই ভাবতাম, কবে জাতীয় বয়সভিত্তিক দলে খেলব। এরপর যুব গেমসে ভালো খেলার পুরস্কার পেলাম। ২০১৮ সালে ভুটানে অনূর্ধ্ব-১৫ সাফে সুযোগ পেয়েছিলাম। সেমিফাইনালে ভুটানের বিপক্ষে জয়ের ম্যাচে গোল করেছিলাম। আসলে তখন থেকেই বাফুফের ক্যাম্পে আছি। মারিয়া (মান্দা) আপু, সানজিদা (খাতুন) আপুদের সঙ্গে ক্যাম্পে থাকতে খুব ভালো লাগে।

কক্সবাজারের উখিয়া থেকে এসে দক্ষিণ এশিয়ার বয়সভিত্তিক ফুটবল টুর্নামেন্টে আলো কেড়েছেন শাহেদা আক্তার
ছবি: তানভীর আহম্মেদ

প্রশ্ন :

এলাকার সবাই তো আপনাকে কক্সবাজারের মেসি বলে। আপনার প্রিয় খেলোয়াড় কি লিওনেল মেসি?

শাহেদা আক্তার: আমি বল পেলে এক দৌড়ে বক্সের মধ্যে ঢোকার চেষ্টা করি, এ জন্য সবাই আমার খেলা দেখে মেসি বলে ডাকে। কিন্তু আমার প্রিয় খেলোয়াড় ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো।

প্রশ্ন :

খেলতে গিয়ে পরিবার থেকে কি কখনো কোনো বাধা এসেছে?

শাহেদা আক্তার: এ ক্ষেত্রে নিজেকে সৌভাগ্যবতী মনে করি। কারণ, মা-বাবা ও এলাকার মানুষ কোনোদিন নেতিবাচক কিছু বলেনি।

প্রশ্ন :

আপনার পরিবারে কে কী করেন?

শাহেদা আক্তার: আমার বাবা জালাল আহমেদ আগে দিনমজুরের কাজ করতেন, এখন কিছু করেন না। মা গৃহিণী, নাম শামসুন্নাহার। আমরা তিন বোন, এক ভাই। আমি মেজ।

শাহেদা আক্তারের মুখে বিজয়ের হাসি
ছবি: তানভীর আহম্মেদ

প্রশ্ন :

ফুটবল আপনাকে কতটা বদলে দিয়েছে?

শাহেদা আক্তার: ফুটবল খেলে আমার জীবনটাই বদলে গেছে। এখন অনেক মানুষ আমাকে চেনে। এবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেক অভিনন্দন পাচ্ছি। আগে একসময় উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কাজ করতেন আমার ভাই। টানাটানির সংসার ছিল আমাদের। ফুটবল খেলে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে টাকা পেয়েছি, বাড়িতে এখন বিল্ডিং উঠেছে। গত অক্টোবরে আমরা মাটির ঘর ছেড়ে সে ঘরে উঠেছি।

প্রশ্ন :

ফুটবল নিয়ে কী স্বপ্ন দেখেন?

শাহেদা আক্তার: এখনো জাতীয় দলে খেলা হয়নি। আমি এরপর জাতীয় দলে খেলতে চাই। জাতীয় দলের হয়েও াবে গোলের পর গোল করতে চাই।