সবাই মিলে করি কাজ

পরিবারের সবাই মিলে একটু করে কাজ করলে মায়ের সাহায্য হয়; কাজও শেখা হয়। মডেল: উপমা, সুহেয়লা, আরাফাত ও জিয়া। ছবি: খালেদ সরকার
পরিবারের সবাই মিলে একটু করে কাজ করলে মায়ের সাহায্য হয়; কাজও শেখা হয়। মডেল: উপমা, সুহেয়লা, আরাফাত ও জিয়া। ছবি: খালেদ সরকার

মা বা স্ত্রী, ভূমিকা যাই হোক না কেন, ব্যস্ততার কমতি নেই কারও। কখনো ঘরের কাজে কখনো কর্মক্ষেত্রে ব্যস্ত থাকেন।

অনেক সময় দেখা যায় তাঁকে সাহায্য করার জন্য কেউই থাকে না। এমনকি ছুটির দিনগুলোতে সব কাজ তাঁকে একাই করতে হয়। তাঁকে যে সাহায্য করতে হবে, এই অনেকের মধ্যে নেই। স্ত্রীই সব দিন রান্না করবেন, ঘর গোছাবেন এটি আমরা ধরে নেই। তাঁর স্বামীও তো এক দিন তাঁকে ঘরের কাজে সাহায্য করতে পারেন। দেখবেন তিনি কত খুশি হন। আবার সন্তানেরাও দেখা গেল ছুটির দিনে মাকে সাহায্য করল বা বাবার সঙ্গে মিলে কোনো কিছু রান্না করে মাকে অবাক করে দিল। এমন ছোট ছোট বিষয়ের মাধ্যমে পারিবারিক বন্ধনও দৃঢ় হবে।

বাবা গাছের পরিচর্যা করছেন
বাবা গাছের পরিচর্যা করছেন

মনোবিজ্ঞানী তামিমা তানজিনের মতে, ছোটবেলা থেকেই শিশুদের বাসার কাজে সহযোগিতা করা শেখাতে হবে। কারণ, এখনকার বেশির ভাগ শিশুই কাজের লোকের ওপর নির্ভর। আবার মা-বাবা অনেক বেশি আদর দিয়ে এটা বোঝান যে তাদের কাজ করার কোনো দরকার নেই। ফলে ছোটবেলা থেকেই আর কোনো কাজ করা শিখে না। কাজ শিখলে শিশু যে শুধু আনন্দই পাবে তা নয়, এতে করে মা-বাবার সঙ্গে তার বোঝাপড়াও ভালো হবে।একসঙ্গে সময় কাটাতে পারবে।

ছুটির দিনগুলোতে মা যদি তাঁর কাজগুলো সন্তান বা সন্তানদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নেন তাহলে মায়ের ওপর থেকে কিছু কাজের চাপ কমতে পারে। সন্তানও আত্মনির্ভরশীল হবে। স্বামীদেরও উচিত ছুটির দিনগুলোতে স্ত্রীকে কাজে সাহায্য করা।

ভাইবোনে কাপড় গোছাই
ভাইবোনে কাপড় গোছাই


এ থেকে তাঁদের ও সন্তানদের মধ্যে পরস্পরকে সাহায্য করার মনোভাব গড়ে উঠবে। ঢাকার একটি কলেজের পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক স্বপন কুমার মিত্র। ছুটির দিনগুলোতে তিনি স্ত্রীকে রান্নাবান্নায় সহযোগিতা করেন। তিনি তাঁর ছেলেমেয়েদেরও নিজের কাজ নিজে করার জন্য উদ্বুদ্ধ করেন। বিশেষ করে নিজেদের জামাকাপড় ধোয়া এবং

নিজেদের বিছানা গুছিয়ে রাখা। তাঁর মতে, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কোনো মনোমালিন্য বা মান-অভিমান হলে একসঙ্গে কাজ করতে গিয়ে সম্পর্ক সহজ হয়। মাকে বাবা সাহায্য করছেন এটি দেখলে সন্তানেরাও নিজের কাজ নিজে করে। পারস্পরিক বোঝাপড়া ও বন্ধুত্ব তৈরির জন্য এই সময়টুকু প্রয়োজন।

গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের গৃহব্যবস্থাপনা ও গৃহায়ণ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ইসমাত রুমিনা বলেন, এ সময়ে স্বামী-স্ত্রী-সন্তান সবাই নিজেদের কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। কোয়ালিটি সময় কাটানোও দুষ্কর হয়ে যায় তাঁদের জন্য। কিন্তু সুস্থ পারিবারিক সম্পর্ক ঠিক রাখার জন্য সময় দিতে হবে পরস্পরকে। সে জন্য ছুটির দিন বা সুযোগ পেলেই পরস্পরকে ঘরের কাজে সাহায্য করলে একসঙ্গে বেশ কিছুটা সময় কাটানো যায়। সন্তানেরাও শুধু ফেসবুক বা বন্ধুদের সঙ্গে সময় না কাটিয়ে মাকে সাহায্য করলে, পরিবারের প্রতি দায়িত্বশীল হতে শিখবে।

একজন নারী স্বামী-সন্তানকে ভালোবাসবেন, তাদের কষ্ট হবে এমন কিছু করবেন না, এটি যেমন ঠিক। আবার সংসারের কাজে তাদের একটু একটু করে যুক্ত করলে এটি সবার জন্যই ভালো কিছু বয়ে আনবে।