সমুদ্রপথে মানবপাচার চলছেই

কক্সবাজারের টেকনাফ সমুদ্র উপকূল দিয়ে মালয়েশিয়ায় মানবপাচার বন্ধ হচ্ছে না। দালাল চক্র এখনো সক্রিয়। ট্রলারডুবিতে প্রাণহানির পরও সমুদ্রপথে মালয়েশিয়ার উদ্দেশে যাত্রা করছে ভাগ্যবিড়ম্বিত মানুষেরা। টেকনাফ থানা সূত্র জানায়, এ পর্যন্ত শতাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে মানব পাচারের অভিযোগে মামলা হয়েছে ৭৪টি। মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তিরা টেকনাফ উপজেলার সদর, সাবরাং, সেন্ট মার্টিন ও বাহারছড়া ইউনিয়নের বাসিন্দা। তবে দালালদের তৎপরতা বেশি শাহ পরীর দ্বীপ এলাকায়। থানার করা দেড় শ জনের দালালদের তালিকায় ৬০ জনই শাহ পরীর দ্বীপের। বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি) ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার একাধিক সিন্ডিকেট বাংলাদেশ থেকে সমুদ্রপথে মালয়েশিয়ায় মানবপাচার করছে। গত তিন বছরে ট্রলারে মানবপাচারের সময় অন্তত চার শতাধিক যাত্রী সমুদ্রে ডুবে মারা গেছেন। গত ৩০ অক্টোবর ও ৭ নভেম্বর নাফ নদী বঙ্গোপসাগরের মোহনায় দুটি ট্রলার ডুবে এখনো নিখোঁজ ২০৪ জন। এ ছাড়া গত ৩ ফেব্রুয়ারি শ্রীলঙ্কা নৌবাহিনী কর্তৃক উদ্ধার হওয়া ১৩৯ যাত্রীর মধ্যে ৬১ জন বাংলাদেশি নাগরিক। সরকারের সহযোগিতায় গত ২০ মে তাঁদের বিমানযোগে ঢাকায় আনা হয়। এঁদের মধ্যে এক নারীসহ ৪৮ জন টেকনাফের, একজন ময়মনসিংহের, ছয়জন কক্সবাজারের, চারজন মহেশখালীর, একজন নাইক্ষ্যংছড়ির ও একজন চকরিয়ার। সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হামিদুর রহমান বলেন, নিখোঁজ ২০৪ ব্যক্তির পরিবার এখন দিন কাটাচ্ছে অনাহারে। এক পরিবারের দুই-তিনজন সদস্য পর্যন্ত নিখোঁজ রয়েছেন। অথচ এত কিছুর পরও মানুষ সমুদ্রপথে মালয়েশিয়া যাওয়া বন্ধ করছে না। দালালদের প্রলোভনে পরে কম টাকায় মালয়েশিয়া যাওয়ার চেষ্টা করছে। এ জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও তৎপর হতে হবে।টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ ফরহাদ বলেন, ‘শতাধিক দালালের বিরুদ্ধে টেকনাফ থানায় ৭৪টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে ১৫ জন দালাল ধরা পড়েছে। অন্য আসামিরা আত্মগোপনে থাকায় তাদের ধরা সম্ভব হচ্ছে না।’ টেকনাফ ৪২ বিজিবি ব্যাটালিয়ানের অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. জাহিদ হাসান বলেন, ‘সীমান্ত এলাকার বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গা ও দেশের নানা অঞ্চলের দরিদ্র মানুষজন সমুদ্রপথে মালয়েশিয়া যাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন। গত কয়েক মাসে এ রকম তিন শতাধিক লোককে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে। কিন্তু তার পরও মানবপাচার বন্ধ করা যাচ্ছে না।’উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহ মোজাহিদ উদ্দিন বলেন, ‘টেকনাফ উপকূলকে মালয়েশিয়া মানবপাচারকারী দালাল চক্র নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহার করছে। তাই দালালদের গ্রেপ্তার করার জন্য সকল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’