এয়ারপোর্ট রোড থেকে বনানী ১১ নম্বর সড়কে ঢুকতেই উৎসবের আবহ চোখে পড়ে। পথের পাশের গাছগুলোর শাখা থেকে ঝুলছে রংবেরঙের রঙিন বাতি, হরেক রঙের ফিতা। ভবনগুলোতে লাগানো জমকালো পোশাক পরা মডেলদের ছবিসংবলিত বিশালাকার হোর্ডিং। ফ্যাশন হাউসগুলোর বিক্রয়কেন্দ্রের বাইরে বাহারি সাজসজ্জা, ঝুলছে ঈদ মোবারক লেখা ব্যানার। ঈদ সমাগত, বেচাকেনাও বেড়েছে।বনানীর এই সড়কটি কয়েক বছর ধরে দেশি ফ্যাশন হাউসগুলোর একটি বড় বাজারে পরিণত হয়েছে। এয়ারপোর্ট রোড থেকে পূর্বদিকে গুলশানে যাওয়ার সেতু পর্যন্ত সড়কটির দুই পাশে এবং উত্তর দিকের সংযোগ সড়কগুলোর পাশ দিয়ে খ্যাতনামা ফ্যাশন হাউসগুলোর বিক্রয়কেন্দ্র গড়ে উঠেছে।গতকাল বৃহস্পতিবার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে অন্যমেলার বিক্রয়কেন্দ্রে কেনাকাটা করতে আসা গৃহবধূ বীথি বলছিলেন, ‘এক জায়গায় অনেকগুলো প্রতিষ্ঠানের শোরুম থাকায় দেশি পোশাকে নতুন কী এল না এল, তা যেমন জানা যায়, তেমনি এক জায়গা থেকেই পছন্দের পোশাকটি কেনা যায়। তা ছাড়া এখন পথে যে ভিড়, তাতে নানা জায়গায় ঘুরে ঘুরে কেনাকাটা করতে গেলে যাতায়াতের খরচ আর দুর্ভোগ সবই বেড়ে যায়। এক জায়গা থেকে কেনাকাটা করার সুযোগ থাকায় এসব ঝঞ্ঝাট থেকে খানিকটা রেহাই মেলে।’ বললেন তিনি। নারী, পুরুষ, শিশু—সবার পোশাক থাকলেও ট্রেন্ডস-এর খ্যাতি মূলত পুরুষদের পোশাকের জন্যই। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের কাছে কদর রয়েছে এদের টি-শার্টের। এবার ঈদের গোল গলা টি-শার্টে রয়েছে গ্লিটার, রাবার, স্ক্রিন প্রিন্টসহ বিভিন্ন ধরনের কাজ। দাম ৬৯৫ থেকে ৮৯৫ টাকা। শাখা ব্যবস্থাপক শামীম মোল্লা জানালেন, মিসরীয় সুতির ফুল হাতা ফরমাল শার্ট তিন হাজার থেকে চার হাজার টাকা। ভারতীয় অরবিন্দ সুতির শার্ট এক হাজার ২০০ থেকে দুই হাজার টাকা। সিল্ক ডিসক কাপড়ের ফরমাল সেমি ন্যারো কাট প্যান্ট এক হাজার ৬০০ থেকে দুই হাজার ২০০ টাকা। টুইলের প্যান্ট এক হাজার ২৫০ থেকে এক হাজার ৪৫০ টাকা এবং জিনস প্যান্ট এক হাজার ৪৯৫ থেকে এক হাজার ৮৪০ টাকা।
ছেলের জন্য জামা-প্যান্ট কেনা হয়েছে, এখন তার বায়না পাজামা-পাঞ্জাবির জন্য। গুলশান ২ নম্বরের জাকিয়া ইয়াসমিন ছেলেকে নিয়ে এসেছিলেন নগরদোলার বিক্রয়কেন্দ্রে। তিনি জানালেন, ‘দেশি ফ্যাশন হাউসগুলোর পাজামা-পাঞ্জাবির রং, অলংকরণ খুব সুন্দর। আর কাপড়ও ব্যতিক্রমী। তাই ছেলেকে নিয়ে এখানেই এসেছি ওর পছন্দের পাঞ্জাবি কিনতে।’ নগরদোলার পাঞ্জাবির দাম ৯৯০ থেকে ছয় হাজার টাকা পর্যন্ত। বাচ্চাদের পাঞ্জাবির দাম অবশ্য কম, ৬৯০ টাকা থেকে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত। এখানে পোশাক-আশাক ছাড়াও পোশাকের সঙ্গে মানানসই অলংকার, উপহার দেওয়া বা ঘর সাজানোর জন্য হরেক রকমের হস্ত ও কারুশিল্পসামগ্রীও পাওয়া যাবে।
অন্যমেলার ব্যবস্থাপক আলিউল ইসলাম জানালেন, মসলিন, জামদানি, সিল্ক, এন্ডি, সুতিসহ নানা ধরনের ঈদের শাড়ি এনেছেন ৭০০ থেকে ২৫ হাজার টাকার মধ্যে। এবার মেয়েদের যেমন লম্বা ঝুলের কামিজ বেশি চলছে, তেমনি ছেলেদের লম্বা ঝুলের পাঞ্জাবির চাহিদা বেশি। পাঞ্জাবির দাম ৭০০ থেকে সাত হাজার টাকা পর্যন্ত। সুতি থ্রিপিস এক হাজার ৫০০ থেকে দুই হাজার ৫০০ এবং সিল্ক, মসলিন এসবের দাম তিন হাজার ৫০০ থেকে পাঁচ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত। মাহে রমজান শেষ প্রান্তে উপনীত। তবে ঈদের কেনাকাটার পালা চলবে একেবারে চাঁদরাত পর্যন্ত।