সাবলীল সাবিলা

সাবিলা নূর
সাবিলা নূর

ওকে দেখে একদম মনেই হয় না অভিনয় করছে, মনে হয় এই চরিত্রটাই ও। সেই চরিত্রের মধ্যেই ওর বেড়ে ওঠা, খাওয়াদাওয়া, জীবনযাপন। সেটা হোক না কেন গ্রাম-শহর কিংবা মফস্বলের কোনো তরুণী। আমার পরিচালিত ইউটার্ন নাটকে প্রথম অভিনয় করতে এসেছিল সাবিলা। প্রথম দৃশ্যটা ধারণের পর আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলাম, এত সাবলীল অভিনয় সে কীভাবে করল একদম শুরুতেই!
বখে যাওয়া এক তরুণীর ভূমিকায় অভিনয় করেছিল ও, খুব কাজের চাপের মধ্যে শুটিং করতে হয়েছিল সেবার, টানা দিন-রাত শুটিং, একটুও বিরতি দিতে পারিনি ঠিকমতো। আমরা প্রায় সবাই হাঁপিয়ে উঠেছিলাম শুধু সাবিলা ছাড়া। কি এনার্জি রে বাবা!
রাত চারটার সময় অ্যাকশন বললেও সুইট মেয়েটি এক নিমেষেই হয়ে ওঠে বখে যাওয়া এক তরুণী। আবার ইমোশনাল কোনো দৃশে্যর আগে একটু সুন্দর করে বুঝিয়ে দিলেই হলো, মুহূর্তেই চোখটা ছলছলে হয়ে ওঠে তার।
ওকে যতটুকু চিনেছি, বাস্তব জীবনেও যেমন প্রচণ্ড চটপটে, তেমনই আবেগের ডিব্বা। সহজেই কেউ কষ্ট দিয়ে ফেলতে পারে তাকে আবার সহজেই ভালোবাসায় গলে যায় অবিরত।
বাবা সরকারি কর্মকর্তা (অিতরিক্ত সচিব) মা গৃহিণী। দুই ভাই আর এক বোনের মধ্যে সাবিলাই ছোট। পরিবারের কেউই মিডিয়াতে কাজ করার কথা ভাবতেই পারেনি, সাবিলাই প্রথম, তাই শুরুতে পরিবারের বেশ খানিকটা আপত্তি থাকলেও দর্শকেরা সাবিলাকে যেভাবে ভালোবাসতে শুরু করেছে, তাতে পরিবারের মন না গলে যায় কোথায়? নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির বিবিএ পড়ুয়া মেধাবী এই তরুণী ভালো রেজাল্ট ঠিকঠাক রেখে কীভাবে যে একের পর এক দর্শকনন্দিত নাটক আর বিজ্ঞাপনে কাজ করে আসছে খোদা মালুম। ইউটার্ন-এ তার পরিশ্রমটা সার্থক। সেটা বোঝা যায় প্রথম নাটকেই মেরিল প্রথম আলো ২০১৪ পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ নবাগতর মনোনয়ন পাওয়া দিয়েই। ওর বিশেষ কয়েকটি নাটক উল্লেখ করতে পারি—এয়ারটেলের টেলিফিল্ম মাংকি বিজনেস–এর সেই মিষ্টি সুন্দর হাসি আর কাল্পনিক চরিত্রের রূপায়ণটা অনেকেরই ভোলার কথা নয়। নাটক প্রচার হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রীতিমতো ঝড়। আর এই ভালোবাসা দিবসের নাটক শত ডানার প্রজাপতি এখনো চোখে লেগে আছে। পুরান ঢাকার রং খেলায় সাবিলার গালে রং লাগানোর দৃশ্যটা মনে রাখার মতো। চোখ বন্ধ করে ভালোবাসায় বুঁদ হয়ে থাকা এক অদ্ভুত ম্যাজিক্যাল তরুণী যেন! ঠিক কী ভেবেছিল সাবিলা ওই শটটা দেওয়ার সময়, যখন তোমার গালে রং আর হাতের স্পর্শ এসে পড়ল? একদিন কথায় কথায় জিজ্ঞেস করেছিলাম। ‘সেটা তো বলা যাবে না, তবে এতটুকু বলতে পারি প্রিয় কারও স্পর্শের কথা, জীবনের প্রথমে অনুভূতির আবেগ মনে করে আচ্ছন্ন হয়ে ওইটা শুটিং করেছি’ বেশ খানিকটা লাজুক হাসি হেসে সাবিলা বলে।
জীবনে কোন চরিত্রটা করতে চাও?
-‘ক্যানসার পেশেন্ট’, ঝটপট উওর তার, ‘তবে গ্ল্যামারাস ক্যানসার পেশেন্ট না, কেমো দেওয়া, চুল উঠে গেছে এ রকম সত্যিকারের চরিত্রটা করতে চাই।’
এটাই আসলে সাবিলা নূর! এক ফোঁটাও কৃত্রিম কিছু করতে পারে না। ভেতর থেকে অনুভব করে অভিনয় করে সে। টিভি সিরিজ আর কমিকসের মহা ভক্ত সাবিলা।
এই সময়ের তরুণদের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে তাকে নিয়ে আগ্রহের শেষ নেই। ‘ভালো অভিনেত্রী তার ওপর খুব সুন্দর তুমি! এত এত ফলোয়ার কেমন লাগে তোমার?’ সাবিলাকে বলি।
—জবাবে, সেই অদ্ভুত ভুবন-ভোলানো হাসির মাঝে একচিলতে দুষ্টুমি, বুঝি ভালোই উপভোগ করে সে ব্যাপারটা...
সাবিলার মতো পরিশ্রমী তারকায় ভরে উঠুক আমাদের শিল্পাঙ্গন, শুভকামনা সাবিলা নূর।
লেখক: চলচ্চিত্রনির্মাতা