মালদ্বীপের পথে সাতক্ষীরার মেয়ে

বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ডামাডোলের মাঝে খুব ছোট্ট খবর। কিন্তু এই ছোট্ট খবরটিই যে আনন্দে ভাসিয়েছে এ দেশের ক্রীড়াঙ্গনকে। বাংলাদেশের প্রথম নারী ফুটবলার হিসেবে বিদেশি লিগে খেলার সুযোগ হয়েছে সাবিনা খাতুনের। বাংলাদেশে মেয়েদের ফুটবল যে হাঁটি হাঁটি পা পা করে একটি পর্যায় এসে দাঁড়িয়েছে। সাবিনার সুসংবাদটি যেন সবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল সেটা। আর সাতক্ষীরার মেয়ে সাবিনা এই গৌরবগাথা রচনার মধ্য দিয়ে নিজেকে গেলেন অনন্য এক উচ্চতায়।
বাংলাদেশের একজন নারী মাঠে ফুটবল খেলবেন—এই ধারণাটির সঙ্গেই তো সংঘর্ষ আছে এ দেশের সিংহভাগ জনগোষ্ঠীর মননের। অনেক বাধাবিপত্তি আর কটুকাটব্য এড়িয়েই সাবিনাদের নাম লেখাতে হয় খেলাধুলার জগতে। প্রচণ্ড ইচ্ছাশক্তি ছাড়া যে এসব বাধা পেরোনো সম্ভব নয়, এটা বোঝেন বোদ্ধামাত্রই। সাবিনাও অবশ্যই এর ব্যতিক্রম নন। খুব ছোটবেলা থেকেই পাড়ার ছেলেদের ফুটবল দেখতে দেখতে খেলাটির প্রতি জন্ম নেয় ভালোবাসা। মনে মনে লালন করেন ফুটবলার হওয়ার ইচ্ছা। সৎ ইচ্ছাশক্তি যে সুযোগের জন্ম দেয়—এই আপ্তবাক্য ফলেছে তাঁর জীবনেও। জাতীয় পর্যায়ে নারী ফুটবলারদের বাছাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই তাঁর এই পর্যায়ে উঠে আসা। তার আগে অবশ্য নিজ শহর সাতক্ষীরায় কোচ আকবর ‘স্যার’ তাঁকে গড়ে তোলেন অনেক যত্ন নিয়েই। ২০০৮ সালে জাতীয় পর্যায়ের ক্যাম্পের পর আর কোনো দিন পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। সময়ের পরিক্রমায় সেই সাবিনাই নিজেকে নিয়ে যাচ্ছেন দেশের সীমানা পেরিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে।
সাবিনা নিজেই জানিয়েছেন কত ধরনের বাধা তাঁকে পার হতে হয়েছে। জানিয়েছেন ফুটবলার হওয়ার ক্ষেত্রে তাঁর প্রাণপাত প্রতিজ্ঞার কথা, ‘মেয়েরা ফুটবলার হবে, এটা আমাদের সমাজের অনেকেই মেনে নিতে পারে না। আমারটাও অনেকে মেনে নিতে পারেনি। তবে আমার ইচ্ছাশক্তির কাছে সবাই পরাজিত হয়েছে বিপুল ব্যবধানে। তবে এটা ঠিক, ফুটবলার হওয়ার ক্ষেত্রে আমি আমার বাবা আর মায়ের সমর্থন পেয়েছি যথেষ্টই।’
গত বছর পাকিস্তানের ইসলামাবাদে অনুষ্ঠিত মেয়েদের সাফ ফুটবলে জাতীয় দলের হয়ে সাবিনার উপস্থিতি ছিল দারুণ উজ্জ্বল। মালদ্বীপের বিপক্ষে বাংলাদেশের ৩-১ গোলে জয়ে সাবিনার পা থেকে এসেছিল দুটি গোল। সেই দুটি গোলই হয়তো তাকে নিয়ে যাচ্ছে মালদ্বীপের ঘরোয়া ফুটবলে।
খবরটা প্রথমে শুনে বিশ্বাসই হয়নি সাবিনার। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন মারফত পেয়েছেন খবরটা। প্রস্তাবটা পেয়ে রাজি হতে বিন্দুমাত্র সময়ক্ষেপণ করেননি। এ দেশের নারী ফুটবলারদের জন্য বিরাট এক দিকের দুয়ারই যে খুলে গেল এর মধ্য দিয়ে। সাবিনা অত্যন্ত খুশি হবেন যদি তাঁর মালদ্বীপ-যাত্রা বাংলাদেশের নারী ফুটবলকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারে।
সাতক্ষীরার মেয়ে সাবিনা মেসির দারুণ ভক্ত। সেই সঙ্গে আর্জেন্টিনার। বাংলাদেশের ঘরোয়া ফুটবলে বিজেএমসির হয়ে খেলেন তিনি। প্রিয় নারী ফুটবলার ব্রাজিলের মারতা। স্বপ্ন দেখেন নিজেকে মারতার মানের একজন খেলোয়াড় হিসেবে গড়ে তুলবেন। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশকে এনে দেবেন অনেক অনেক সাফল্য।
সাবিনার মালদ্বীপ-যাত্রা তো এসব স্বপ্নের কেবল শুরুই।