সারা পৃথিবীতে আমরা বন্ধু বানাই

ঢাকায় ব্রিটিশ কাউন্সিলের কার্যালয় স্থাপনের ৭০ বছর পূর্তি উদ্​যাপিত হলো সম্প্রতি। এ উপলক্ষে ব্রিটিশ কাউন্সিলের গ্লোবাল চেয়ার স্টিভি স্প্রিং সিবিই প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে এসেছিলেন। ২০১৭ সালে তিনি যুক্তরাজ্যের রানির কাছ থেকে সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ ‘কমান্ডার অব ব্রিটিশ এম্পায়ার’ (সিবিই) পদক পান। গত ২২ নভেম্বর ঢাকার ফুলার রোডে ব্রিটিশ কাউন্সিল কার্যালয়ে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আহমেদ দীপ্ত

স্টিভি স্প্রিং সিবিই
ছবি: প্রথম আলো

ঢাকায় ব্রিটিশ কাউন্সিলের ৭০ বছর পূর্ণ হলো, বৈশ্বিক পরিসরে এর তাৎপর্য কতখানি?

স্টিভি স্প্রিং সিবিই: বাংলাদেশ সব সময়ই আমাদের অগ্রাধিকারে রয়েছে। এ দেশের স্বাধীনতার ২০ বছর আগে আমরা এখানে এসেছি। সেই সময়ে একসঙ্গে কাজ করেছি। স্পষ্টতই বাংলাদেশ যুক্তরাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ বন্ধু। যুক্তরাজ্যে অনেক বাঙালি আছেন। বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক খুবই বন্ধুত্বপূর্ণ। আমি এখানে এসে ইতিমধ্যে আমার তিন বন্ধুর প্রথম কাজিনের সঙ্গে দেখা করেছি। এমন মানুষগুলোর সঙ্গে পরিচিত হয়েছি, যাঁদের আগে কখনো দেখিনি, কিন্তু তাঁরা আমার যুক্তরাজ্যের বাংলাদেশি বন্ধুদের আত্মীয় বা স্বজন। এই দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বের ‘নেটওয়ার্ক’ খুবই শক্তিশালী ও বৈচিত্র্যময়। ব্রিটিশ কাউন্সিল বাংলাদেশ ঢাকা কার্যালয়ের প্রতিষ্ঠার ৭০ বছর উদ্​যাপন করছে এবং একই সঙ্গে বাংলাদেশ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্​যাপন করছে। এই দুই উদ্​যাপন একসঙ্গে মিলেছে, এর একটা বড় তাৎপর্য রয়েছে।

বাংলাদেশে ইংরেজি শিক্ষার প্রসারে ব্রিটিশ কাউন্সিল কীভাবে আরও বড় পরিসরে ভূমিকা রাখতে পারে?

স্টিভি স্প্রিং সিবিই: আমরা প্রথমে যা করি, তা হলো বন্ধু বানাই। সারা পৃথিবীতেই আমরা বন্ধু বানাই; আইডিয়া ও অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করি। যুক্তরাজ্যে থাকা বাংলাদেশি বন্ধুদের কাছ থেকে আমরা শিখি এবং আশা করি, এখানে আপনারা যুক্তরাজ্যের বন্ধুদের কাছে শিখছেন। আমরা আমাদের বাংলাদেশি বন্ধুদের কাছ থেকে শিখি এবং আশা করি বাংলাদেশি বন্ধুরা তাঁদের যুক্তরাজ্যের বন্ধুদের কাছ থেকে শেখে। শিল্প ও সংস্কৃতির মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন আইডিয়া, দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কাজ করি।

দারিদ্র্য, জলবায়ু পরিবর্তন এবং শিক্ষার সুযোগ নিয়ে কাজ করি। আমরা যুক্তরাজ্য থেকে সেরা ভাবনাগুলো বাংলাদেশে আনার কাজ করছি। সবচেয়ে ভালো পাঠ্যক্রম তৈরি, পাঠদানের সেরা পদ্ধতি নিয়ে কাজ করছি। আপনি একটি ভাষায় কথা বলতে পারেন, তার মানে এই নয় যে সেই ভাষাটি আপনি শেখাতে পারবেন। আমরা এখানে অনেক সময় নিয়ে শিক্ষকদের শেখাই। সুতরাং, বাংলাদেশে আমাদের শক্তিশালী কার্যালয় আছে। তিনটি ভিন্ন কার্যালয়ে ২২৫ জন কর্মী একসঙ্গে শিল্প, সংস্কৃতি ও শিক্ষা নিয়ে কাজ করছে।

ব্রিটিশ কাউন্সিল কীভাবে বিশ্বব্যাপী তরুণদের ইংরেজি ভাষার দক্ষতা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে? বাংলাদেশের স্কুল ও কলেজে ইংরেজি শিক্ষার মান উন্নয়নেই–বা আপনাদের ভূমিকা কী হতে পারে?

স্টিভি স্প্রিং সিবিই: আমাদের প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চশিক্ষা—তিন স্তরেই কাজ করতে হবে। পাঠ্যক্রমের মানোন্নয়নে আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করতে পারি। পাঠদানে আরও ভালো করতে আমরা শিক্ষকদের সহযোগিতা করতে পারি, পাঠদানে সর্বোচ্চ মান নির্ধারণ করে সেটি নিশ্চিতকরণে কাজ করতে পারি। প্রাথমিক থেকে একেবারে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত পাঠদান এখন যেভাবে হচ্ছে এবং যেভাবে হওয়া উচিত—এসব নিয়েও কাজ হতে পারে। অন্যদিকে, সামর্থ্য অনুযায়ী সবাই যেন ইংরেজি শেখার কোর্সগুলোতে অংশ নিতে পারে, সে ক্ষেত্রে ব্রিটিশ কাউন্সিলের সাংস্কৃতিক ও সামাজিক দায়বদ্ধতা আছে। কোর্সগুলোর তথ্য অনলাইনেও আছে, যেন শিক্ষক ও আগ্রহীরা সহজেই শিখতে পারেন।

আপনি গত ২১ নভেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করেছেন। কী নিয়ে আলাপ হলো?

স্টিভি স্প্রিং সিবিই: বাংলাদেশের শিক্ষার অবস্থা নিয়ে কথা হয়েছে। তিনি আমাদের বাড়িওয়ালা (হাসি)। তাই আমরা ব্রিটিশ কাউন্সিলের ভবন নিয়ে আলোচনা করেছি। বাংলাদেশ সফর নিয়ে আলাপ হয়েছে। যুক্তরাজ্যের শিক্ষার্থীরা, যাঁরা বাংলাদেশ আসতে চায় এবং বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাজ্যের শিক্ষার্থীদের জন্য কীভাবে শিক্ষাপ্রক্রিয়া সহজ করা যায়, সে বিষয়ে কথা বলেছি। বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণায় আমরা কী কী অতিরিক্ত কাজ করতে পারি, সে বিষয়েও কথা হয়েছে। এ বছরের জানুয়ারিতে লন্ডনে অনুষ্ঠিত এডুকেশন ওয়ার্ল্ড ফোরাম এবং বাংলাদেশের খাবার প্রসঙ্গও আমাদের আলাপে উঠে এসেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শতবর্ষ উদ্​যাপন করছে। কিন্তু যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা ও গবেষণা সংস্থা কিউএস র​্যাঙ্কিংয়ে বিশ্বের ১ হাজার ৩০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবস্থান ৮০১-১০০০তম। বছরের পর বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়তন বাড়লেও মানসম্পন্ন গবেষণা ও শিক্ষার দিক থেকে অগ্রসর হয়নি। আপনি বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?

স্টিভি স্প্রিং সিবিই: বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বৈশ্বিক র​্যাঙ্কিং সম্পর্কে আমাদের সতর্ক হওয়া উচিত। এই অঞ্চলে অবশ্যই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ খ্যাতি রয়েছে বলে আমার ধারণা। আমি মনে করি, গবেষণার উপলব্ধিই হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল চালিকাশক্তি। এখানেই আমরা ঢাকা এবং যুক্তরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনে সাহায্য করতে পারি। ব্যক্তিগতভাবে আমি যুক্তরাজ্যের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে জড়িত ছিলাম, যেটি একটি র​্যাঙ্কিংয়ে ১৯তম এবং অন্য একটি র​্যাঙ্কিংয়ে ৬৫তম। সুতরাং এটি নির্ভর করে আপনি র​্যাঙ্কিংয়ের ক্ষেত্রে কোন বিষয়গুলো দেখছেন তার ওপর।

বাংলাদেশে এবারই প্রথম এলেন। ফেরার সময় কী নিয়ে যাবেন? এ সফরে সবচেয়ে বেশি কী উপভোগ করেছেন?

স্টিভি স্প্রিং সিবিই: এখানকার শব্দ, নানা রং ও কর্মব্যস্ততা দেখে আমি অভিভূত। আমার দেখা সারা বিশ্বের মানুষের মধ্যে বাংলাদেশিরা সবচেয়ে বন্ধুত্বপূর্ণ। এই বাংলার উষ্ণতা শক্তিশালী এবং অপ্রতিরোধ্য। যে জিনিসটি আমার সবচেয়ে বেশি মনে ধরেছে—এখানকার সবাই খুব উচ্ছল। যখন কেউ বলে, ‘হ্যাঁ, আমি বাংলাদেশে ঘুরতে যাচ্ছি’, তারা আসলে ভারত, নেপাল, পাকিস্তানও ঘোরে। কিন্তু আমি কেবল বাংলাদেশ ঘোরার জন্য এসেছি। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০তম বার্ষিকী ও উদ্​যাপন দেখতে। আফসোস, আমি বেশি দিন থাকব না। ঢাকার বাইরে দেশের বাকি অংশ দেখতে পারলে আরও ভালো লাগত। তবে এটাই হবে আমার আবার এ দেশে ফিরে আসার অজুহাত।