সাহসী, আত্মবিশ্বাসী করছে তায়কোয়ান্দো

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ছাড়াও যে কেউ এখানে তায়কোয়ান্দো শেখার সুযোগ পাচ্ছেন
ছবি: স্বপ্ন নিয়ে

ভিনদেশি চলচ্চিত্রের প্রতি ছোটবেলা থেকেই ঝোঁক ছিল। চীনা ও কোরীয় ভাষার অ্যাকশন ছবিগুলো দেখতে খুব ভালোবাসতেন খাগড়াছড়ির প্রত্যাশা দেওয়ান। এভাবেই মার্শাল আর্টের প্রতি তাঁর ভালোবাসা। একদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের জিমনেসিয়ামে দেখলেন, একদল ছেলেমেয়ে তায়কোয়ান্দো, অর্থাৎ কোরীয় মার্শাল আর্ট শিখছেন। হাতের কাছে এমন সুযোগ হেলায় হারাতে চাননি আইন বিভাগের এই শিক্ষার্থী। সেই থেকে তাঁর তায়কোয়ান্দো শেখার শুরু।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সুদীপ্ত চাকি জানান, তিনি জীবনের নতুন এক মানে খুঁজে পেয়েছেন তায়কোয়ান্দো শিখতে এসে। ছোটবেলায় জটিল এক অস্ত্রোপচারের কারণে সুদীপ্তর শারীরিক সক্ষমতা কমে গিয়েছিল। কিন্তু তায়কোয়ান্দো শিখতে এসে শরীরের পাশাপাশি তিনি মনেও বল পেয়েছেন। এটি তাঁকে পড়াশোনায় আরও মনোযোগী হতে সাহায্য করেছে।

সুদীপ্ত মনে করেন, তরুণদের মধ্যে তায়কোয়ান্দো যতটা জনপ্রিয় হওয়ার কথা ছিল কিংবা শরীরচর্চার এই কার্যকর উপায়টির যতটা প্রচারণা দরকার ছিল, তেমনটা হচ্ছে না। তাই ভবিষ্যতে নিজ উদ্যোগে হলেও তায়কোয়ান্দোকে জনপ্রিয় করতে চেষ্টা করবেন বলে জানান তায়কোয়ান্দোতে ব্ল্যাক বেল্টধারী এই শিক্ষার্থী।

প্রত্যাশা দেওয়ান ও সুদীপ্ত চাকির মতো এমন ৫০ থেকে ৬০ শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে নিয়মিত তায়কোয়ান্দো চর্চা করেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষা বিভাগ ও রাজশাহী তায়কোয়ান্দো অ্যাসোসিয়েশন যৌথভাবে এই কার্যক্রম পরিচালনা করে। শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই নন, আশপাশের স্কুল থেকেও ছেলেমেয়েরা সেখানে তায়কোয়ান্দো শিখতে আসে। কথা হলো শহরের অগ্রণী বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী হাসিমুর কবির ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল ও কলেজের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী আলভী আফনানের সঙ্গে। হাসিমুর জানাল, আগে সে তেমন ছোটাছুটি করতে পারত না, অল্প একটু দৌড়ালেই হাঁপিয়ে যেত। এখন দুর্বলতা অনেকটা কেটেছে। অন্যদিকে ফারিহার নাকি তায়কোয়ান্দো শেখার প্রতি খুব একটা আগ্রহ ছিল না। শুরুতে মা-বাবার আগ্রহের কারণেই আসত। কিন্তু এখন একটু একটু করে আত্মরক্ষার এই প্রশিক্ষণ ভালো লাগতে শুরু করেছে, বেড়েছে আত্মবিশ্বাস।

তায়কোয়ান্দো যে স্রেফ আত্মরক্ষার কৌশল, এমনটা মনে করেন না সুদীপ্ত চাকি। তিনি বলছিলেন ‘এর মাধ্যমে আত্মরক্ষার কৌশল শেখার পাশাপাশি শরীরচর্চাও হয়। আমরা আগে যেভাবে জীবনযাপন করতাম, এখানে আসার পর তার পুরোটাই পরিবর্তন হয়ে গেছে। এখানে নিয়মানুবর্তিতা ও শৃঙ্খলা থেকে শুরু করে আত্মনির্ভরশীলতার দীক্ষাও দেওয়া হচ্ছে।’ সুদীপ্ত মনে করেন, তরুণদের মধ্যে তায়কোয়ান্দো যতটা জনপ্রিয় হওয়ার কথা ছিল কিংবা শরীরচর্চার এই কার্যকর উপায়টির যতটা প্রচারণা দরকার ছিল, তেমনটা হচ্ছে না। তাই ভবিষ্যতে নিজ উদ্যোগে হলেও তায়কোয়ান্দোকে জনপ্রিয় করতে চেষ্টা করবেন বলে জানান তায়কোয়ান্দোতে ব্ল্যাক বেল্টধারী এই শিক্ষার্থী। প্রত্যাশা দেওয়ানের ভাবনা যদিও একটু ভিন্ন। তিনি স্বপ্ন দেখেন তায়কোয়ান্দোর আন্তর্জাতিক মঞ্চে একদিন দেশের প্রতিনিধিত্ব করবেন। পাশাপাশি আত্মরক্ষার কৌশল শিখতে তায়কোয়ান্দোতে মেয়েদের অংশগ্রহণ যেন বাড়ে, এটাই তাঁর প্রত্যাশা।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে তায়কোয়ান্দো চর্চার শুরুর গল্প বলছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষা বিভাগের সহকারী পরিচালক কামরুজ্জামান। তাঁর উদ্যোগেই ক্যাম্পাসে বড় পরিসরে শুরু হয়েছিল তায়কোয়ান্দো চর্চা। তিনি বলেন, ‘আমি ছোটবেলা থেকে মার্শাল আর্টের চর্চা করি। ১৯৯৮ সালে নেপাল থেকে ব্ল্যাক বেল্ট অর্জনের পর ২০০৩ সালে কোরিয়া সরকারের একটি বৃত্তির আওতায় সে দেশে প্রশিক্ষণের সুযোগ পাই। পরে আরও বেশ কিছু প্রশিক্ষণ নিয়েছি। সেসব প্রশিক্ষণ থেকে তায়কোয়ান্দোর বড় জগৎ সম্পর্কে আমি প্রথম ধারণা পাই। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পর থেকে এর প্রসারে কাজ করে যাচ্ছি।’ করোনা যেহেতু আমাদের কিশোর-তরুণদের শরীর ও মনে বড় ধরনের একটা নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে, তাই তায়কোয়ান্দোর মতো খেলাধুলার চর্চায় আরও গুরুত্ব দেওয়া উচিত বলে মনে করেন কামরুজ্জামান। ভবিষ্যৎ ভাবনার কথাও বলছিলেন তিনি, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে তায়কোয়ান্দো চর্চার এমন সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় দেশে ও বিদেশে আমাদের পদক প্রাপ্তি বাড়ছে। ভবিষ্যতে আমরা কোরিয়ার যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে তায়কোয়ান্দোর ওপর স্নাতক ও স্নাতকোত্তর প্রোগ্রাম চালু আছে, সেসব বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম চালু করতে চাই। এতে করে দুই দেশের শিক্ষার্থীরাই উপকৃত হবে।’