সিঁথিকথা

লম্বাটে চেহারায় সিঁথি করুন এক পাশে, কপালটা একটু ঢেকে। মডেল: ঝুমুর, ছবি: নকশা
লম্বাটে চেহারায় সিঁথি করুন এক পাশে, কপালটা একটু ঢেকে। মডেল: ঝুমুর, ছবি: নকশা

কোনো এককালে যখন ছিল না চুলের রং, সেলুনের ভিড়, কীভাবে সাজত চুল? সেই সময়ের প্রিয় লেখকদের বইয়ের পাতায় নারীর চুলের বর্ণনায় ঘুরেফিরে আসত সিঁথির কথা। চুলের সুরক্ষায় কিংবা নিজের ব্যক্তিত্বের সঙ্গে মেলাতে এখনো সেই সিঁথিই সম্বল অনেকের। সিঁথিতেই ঠিক হোক চুলের ভাঁজ, তবে তারও কিছু কৌশল আছে বৈকি।
সিঁথির ব্যাকরণ
চিরুনি দিয়ে চুলে সিঁথি কাটলেই কিন্তু চলে না। সিঁথিটা ঠিক কোন অংশে টানলে চুলের আর মুখের সামঞ্জস্য ফুটে উঠবে, সেটা বোঝাও ভীষণ জরুরি। সত্তরের দশকে প্রায় সব তারকা শুরু করেছিলেন মাঝে সিঁথি কাটার চল। সেই মাঝের সিঁথি শুরু হবে দুই ভ্রুর ঠিক মাঝখান থেকে, যেখানে নাকের সীমানা মিশে গেছে। পাশে সিঁথি কাটলে তা শুরু হবে ভ্রুর ঠিক শুরুর অংশের সঙ্গে মিলিয়ে। সামনের চুলের ঘনত্ব বাড়াতে অনেকে আরেকটু নিচ থেকে সিঁথি কাটেন। নব্বইয়ের দশকে এই সিঁথি ভীষণ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। এই সিঁথিও শুরু হতে হবে ভ্রুর স্বাভাবিক কোণ যেখানে বেঁকেছে, সেই বিন্দু থেকে। চুলে ব্যাঙস বা ফ্রিঞ্জ কেটেছেন এমন ব্যক্তিদের কোনাকুনি সিঁথি না কেটে উপায় নেই। কোনার সিঁথি শুরু হবে যেকোনো একটা ভ্রুর শেষ প্রান্ত থেকে। আর শেষ হবে অন্য ভ্রুর বাঁকানো কোনায়।
মুখের জ্যামিতি
সিঁথির আরেকটি বৈশিষ্ট্য জড়িয়ে আছে মুখের আকৃতির সঙ্গে। সব সিঁথিতে সবাইকে মানায় না। গোল মুখের সিঁথি আলাদা, আবার লম্বাটে মুখের সিঁথিও মেলে না কোনা কাটা মুখের সঙ্গে। এ নিয়ে জানালেন হেয়ারোবিক্স ব্রাইডালের প্রধান রূপবিশেষজ্ঞ তানজিমা শারমিন।
গোলাকার চেহারা
একটু গোল আকৃতির চেহারা যাঁদের, মাঝে সিঁথি তাঁদের ভারি মানায়। কপাল বড় হলেও সমস্যা হবে না। অনেকের মনে দ্বিধা, এতে করে যদি তালুর চুল কম হয়ে যায়? তাঁরা সামনের চুলগুলোকে সাজিয়ে দিতে পারেন বব কাটে। তবে এ জন্য চুল সিল্কি হওয়া বেশ জরুরি। একটা লেয়ার কাটও একটুও খারাপ লাগবে না।
লম্বাটে চেহারা
এই চেহারার বড় মুশকিল হলো বড় কপাল। তাই সিঁথি হবে পাশে, একটু কপাল ঢেকে। মাঝে সিঁথি করলে কপাল আরও বড় দেখাবে, মুখ হয়ে উঠবে আরও লম্বাটে। নতুন লুক চাই? তবে একটা ব্যাঙস কাট দিয়ে নিন চুলে। দারুণ মানাবে।

ডিম্বাকৃতির চেহারা

ইংরেজিতে যাকে আমরা ওভাল ফেস বলে চিনি। যেকোনো সিঁথিতে এই চেহারা দারুণ লাগে। কপাল একটু বড় হলে মাঝে সিঁথি করুন। আর ছোট হলে পাশে।

চৌকো মুখ

চোয়ালের অংশটা একটু বড় হওয়ার কারণে এই মুখ একটু চৌকোনা দেখায়। চেহারা ছোট দেখাতে চাইলে সাইডে লং ব্যাঙস দিয়ে মাঝে সিঁথি করে রাখুন। সাইডে সিঁথি করে কখনো টেনে চুল আঁচড়ে বাঁধবেন না। চোয়াল আরও প্রকট হয়ে উঠবে।

তিন কোনা আকৃতি

নির্দ্বিধায় সিঁথি কাটুন মাঝে। আর পাশে সিঁথি কাটতে চাইলে সেটা হবে কানঘেঁষা নয়, বরং তালুর ওপরেই একটু ডান বা বাম করে সিঁথি কাটতে হবে।

হৃদয়াকৃতির মুখ

কপালের ওপরে একটু কোণ করে গজানো চুল আর লম্বাটে চিবুকের কারণে কারও কারও চেহারাতে ভেসে ওঠে হৃদয়ের আকৃতি। তাঁদের সিঁথি মাঝে টানলেও লুক খুব একটা বদলে যায় না। তবে একটা সাইড ফিঞ্চ কাট দিয়ে এক পাশে সিঁথি করে চুল ছেড়ে দিলে, চোখও ফেরানো যায় না!

এ তো গেল মুখ অনুযায়ী সিঁথি কেমন হওয়া উচিত তার ব্যাকরণ। বিশেষ অনুষ্ঠান কিংবা এমনিতেই নিজের লুক নিয়ে যাঁরা খেলতে পছন্দ করেন, তাঁরা কিছু বিশেষ সিঁথি কাটতে পারেন চুলে। যেমন জিকজ্যাক সিঁথি। মাথার তালুতে ইংরেজি জেড আকৃতির এই সিঁথি সেই কবে থেকে গেঁথে আসছে চুলের মালা। যাঁদের চুলের ঘনত্ব মোটামুটি তাঁরা এই সিঁথি কাটলে চুল বেশ ভারী দেখায়। অনেকেরই পছন্দ কোনা করে কাটা সিঁথি। কোনা সিঁথিতে মাথার পেছনের অংশে চুলের ভলিউম বেড়ে যায়, আর মুখ শুকনো দেখায়।

সিঁথি যেভাবেই কাটুন, কী দিয়ে কাটছেন সেটাও খেয়াল করুন। চিরুনির কোনা সিঁথি কাটার জন্য উপযুক্ত নয় মোটেই। সিঁথি কাটার সূক্ষ্মÿকাঁটাওয়ালা চিরুনি ব্যবহার করুন। এতে করে মোটা সিঁথির বিড়ম্বনা থেকেও মুক্তি পাবেন।