সে আমার সঙ্গে কথা বলে না

মেহতাব খানম
মেহতাব খানম
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশনাল অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক মেহতাব খানম। তিনি আপনার মানসিক বিভিন্ন সমস্যার সম্ভাব্য সমাধান দেবেন। অল্প কথায় আপনার সমস্যা তুলে ধরুন।—বি. স.

সমস্যা

আমার এক চাচাতো ভাইকে ছোটবেলা থেকেই পছন্দ করি। কিন্তু আমি জানি ও আমাকে পছন্দ করে না। একসময় অনেক পছন্দ করত। হঠাৎ করেই সে আমার সঙ্গে কথা বলে না। ও আমার ফোনও ধরে না। মেসেজ পাঠালেও উত্তর দেয় না। আমি কিছুতেই ওর কথা ভুলতে পারছি না। এ জন্য পড়াশোনায়ও মনোযোগ দিতে পারছি না। শুধু ওর কথা মনে পড়ে। তাই দশম শ্রেণির পরীক্ষায় আমার ফলও খারাপ হচ্ছে। আমি চাই ওর কথা সম্পূর্ণ ভুলে গিয়ে পড়াশোনা করে অনেক ভালো কিছু করতে। কিন্তু পড়তে বসলেই ওর কথা মনে পড়ে। আমি ওকে ভুলে যেতে চাই। খুব মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করতে চাই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
পরামর্শ
তুমি লিখেছ চাচাতো ভাইটিকে খুব ছোটবেলা থেকেই পছন্দ করো। তখন তোমার বয়স কত ছিল মনে পড়ে? সেই বয়সের অনুভূতি এবং বয়ঃসন্ধিকালে এসে তার প্রতি তোমার মনোভাব ও আবেগের মধ্যে কোনো পার্থক্য আছে কি? এটা ভালো করে ভেবে দেখবে, কেমন? আর ‘পছন্দ’ করার অর্থটি ঠিক কী, সেটিও নিজেকে প্রশ্ন করবে।
ভাইটিও যে তোমাকে পছন্দ করত, সেটি কি তোমাকে ছোট বোন হিসেবে, নাকি অন্য কোনো ইঙ্গিত তার মধ্যে ছিল?
শৈশব, কৈশোর ও প্রাপ্তবয়সে আমাদের শরীর ও মনে অনেক পরিবর্তন হয়। তোমার ভাই যেহেতু এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, তার জীবনধারা অনেক বদলে গেছে। সে জীবন ও পৃথিবী সম্পর্কে নতুন অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছে। এখন হয়তো তার নতুন বন্ধুবান্ধবও হয়েছে।
তুমি তাকে যেভাবে চাইছ বা যে দৃষ্টিকোণ থেকে দেখছ, তার ক্ষেত্রে সেটি একই রকম না-ও হতে পারে। এ ছাড়া তোমাদের আত্মীয়তার সম্পর্কও রয়েছে। এমনও তো হতে পারে যে সে তোমার মনোভাবটি ভালোভাবেই বুঝতে পারছে। হয়তো ও ভাবছে, দুজনের কারও পরিবারই হয়তো চাইবে না যে তোমাদের মধ্যে অন্য কোনো সম্পর্ক গড়ে উঠুক। ঠিক কখন থেকে তোমার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করেছে, তা তুমি মনে করতে চেষ্টা করো। তুমি তার সঙ্গে কিছুটা অবুঝের মতো আচরণ করেছ কি না, তা-ও ভেবে দেখবে।
তবে তোমার অবশ্যই অধিকার রয়েছে তার কাছে এ আচরণের সুস্পষ্ট একটি ব্যাখ্যা চাওয়ার। সেটি পেলে তুমি হয়তো প্রথমে কষ্ট হলেও পরবর্তী সময়ে নিজেকে সুন্দরভাবে বুঝিয়ে মনোযোগী হতে পারতে। কিন্তু সে যদি কোনোভাবেই প্রত্যুত্তর না দেয়, তাহলে তো কিছু করার নেই। অন্য একটি মানুষকে কোনোভাবেই আমরা জোর করতে পারি না তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনো আচরণ করতে, তাই না?
এই নেতিবাচক অভিজ্ঞতা কিন্তু তোমাকে আবেগীয় দক্ষতা অর্জনে একভাবে সহায়তাও করছে। তুমি যদি কষ্টের অনুভূতিগুলো সফলভাবে মোকাবিলা করে নিজেকে আবার লেখাপড়ায় মনোনিবেশ করতে পারো, তাহলে নিজেকে অভিনন্দন জানাবে। আর তুমি যখন প্রাপ্তবয়স্ক হবে, তখন দেখবে যে তোমার মধ্যেও অনুভূতির অনেক পরিবর্তন এসেছে।