হাজারো শব্দের বদলে একটি ছবি হতে পারে ভাব প্রকাশের কার্যকরী মাধ্যম। বারবার শোনা এই প্রবাদ বেদবাক্যের মতো মেনে চলছে তাৎক্ষণিক বার্তা আদান-প্রদানের অ্যাপগুলো। বিশেষ করে স্মার্টফোনে। চাহিদাও বেশ, বিশেষ করে তরুণদের কাছে। প্রথমে ইমোটিকন, এরপর এল ইমোজি। নতুন চল স্টিকারের। আকারে কিছুটা বড় ছবিভিত্তিক স্টিকার বর্তমানে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। চিরাচরিত হাসি-কান্না-রাগ থেকে বেরিয়ে এসে চমৎকার ছবির কিছু স্টিকার আপনার মুখে হাসি ফোটাতে পারে। আপনাকে রাগিয়ে তুলতে যেমন পারে, তেমনই রাগ পানি করতেও পারে। অনুভূতি প্রকাশ অনেকটাই সহজ করেছে এই স্টিকার।
শুধু লেখা যথেষ্ট নয়
লেখা আর লেখা। ছবিহীন এমন অন্তর্জালের কথা ভাবতেও আঁতকে উঠতে হয়। কতটাই না বিরক্তিকর হবে যদি এমন হতো। একসময় অবশ্য শুধু লেখাই ছিল, তারপর এল ছবি। এখন ভিডিও চিত্রের যুগ। যোগাযোগ যে সব সময় নতুন মাত্রা খুঁজে নেবে, তেমনটাই স্বাভাবিক। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র মো. জান্নাতুন নাঈম যেমন বলেন, ‘মাঝেমধ্যে এমন হয়, শুধু লিখে হয়তো কোনো কিছু বোঝানো যাচ্ছে না। তখন স্টিকার বেশ কাজে দেয়। বন্ধুদের সঙ্গে খুনসুটি করা যায় এই স্টিকার দিয়ে।’
স্টিকারে বৈচিত্র্য
স্টিকারে বৈচিত্র্য ভাব প্রকাশে ভিন্নমাত্রা যোগ করতে পারে। অনুভূতি প্রকাশ অনেকটাই সহজ হয়, যদি সঠিক স্টিকারটি বেছে নেওয়া যায়। সে কথাই বললেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্যের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আরজুমান আরা হোসেন। বলেন, ‘স্টিকারগুলোর মাঝে নতুনত্ব যোগ হচ্ছে প্রতিনিয়ত। হালের স্টিকারগুলো বেশি ব্যবহার করা হয়। একটা স্টিকার দিয়েই বুঝিয়ে দেওয়া যায় কী বলতে চাইছি।’
একই বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী সুমাইয়া সিদ্দিকীর প্রিয় মাগসি, মিনিয়ন, বার্ড, ফিনচ, টুজকি স্টিকার।
কিছু কিছু স্টিকার নামিয়ে নিতে টাকা খরচ হয় বটে, তবে বিনা মূল্যে পাওয়া যায়, এমন স্টিকারের সংখ্যাও কম নয়। একটু বেছে ভিন্ন ধরনের কোনো স্টিকার প্যাক নামিয়ে নিয়ে নিজেকে অন্যদের চেয়ে কিছুটা হলেও আলাদা করে তুলতে পারেন।
বেশি ব্যবহার ফেসবুকে
স্টিকারের চল মোটামুটি সব অ্যাপেই। হোয়াটসঅ্যাপ, ভাইবার, লাইন, ফেসবুক ওয়েবসাইট ও মেসেঞ্জারসহ লিখে লিখে যোগাযোগ করা যায়, এমন সবকিছুতেই স্টিকার ব্যবহার করা যাচ্ছে। যে সেবাগুলোতে স্টিকার ছিল না, ব্যবহারকারীর চাহিদার কথা মাথায় রেখে সেগুলোতেও শুরু করা হচ্ছে। তবে তরুণদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ফেসবুকেই তাঁরা বেশি ব্যবহার করছেন। ফেসবুকে স্টিকারের বয়স এক বছর মাত্র। গত বছরের অক্টোবরেই ফেসবুকে স্টিকারের চল শুরু হয়। এরই মাঝে জনপ্রিয়তায় শীর্ষে থাকার কারণ হিসেবে বলা যায়, এই সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটে ব্যবহারকারী এমনিতেই বেশি। তার ওপর বিনা মূল্যের স্টিকারের বিপুল সম্ভার পছন্দের প্রধান কারণ।
চাই অ্যানিমেটেড স্টিকার
স্টিকার ব্যাপারটাই মজার। তবে যদি একটু নড়েচড়ে ওঠে, উপস্থাপনাটা আরও একটু মজার হয়। ধরুন, হাসির ছবি নয়, বরং স্টিকারে হেসে দেখিয়ে দেওয়া যেতে পারে। শাম্মী আখতার জানালেন সে কথা। তিনি পড়ছেন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে। শাম্মী বললেন, ‘একজন মানুষের মন নিমেষেই ভালো হয়ে যেতে পারে অ্যানিমেটেড স্টিকার দেখে। এটি সরাসরি মানুষের মনে প্রভাব ফেলে। অপর প্রান্তে ফুটিয়ে তোলে হাসির রেখা। তিনি মজা করে বলেন, বন্ধুদের খোঁচাতেও স্টিকারের জুড়ি নেই। অনেক সময় তো ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথোপকথন (কনভারসেশন) চলে স্টিকার দিয়েই।’
সহজে যোগাযোগ
মাস খানেক হলো নতুন চাকরিতে যোগ দিয়েছেন তানভীর রহমান। কাজের বেশ চাপ। কাজের সময়টাতে লিখে লিখে উত্তর দেওয়ার সময় কই তাঁর! এদিকে বন্ধুদেরও তো অপেক্ষায় রাখা যায় না। তাই উত্তর চলে স্টিকারে।
ভিন্নমত
উল্টোটাও অবশ্য বলেছেন কেউ কেউ। প্রশ্নোত্তরভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট কোরাতে এ ব্যাপারে প্রশ্ন রেখেছিলাম। মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার বিরক্তি এনে দেয় বলে সেখানে উল্লেখ করেন মেরি মুর নামের এক মার্কিন অধিবাসী। তিনি বলেন, ‘এমনিতে ভালোই লাগে। কিছু কিছু স্টিকার তো বেশ আদুরে। তবে প্রতিটি বাক্যের সঙ্গে ব্যবহার করলে আমি রেগে যাই।’ সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী জিমি চাকমা তো বলেই বসলেন, ‘যখন কোনো কিছুর উত্তর দিতে ভালো লাগে না, একটা স্টিকার পোস্ট করে দিই।’