হঠাৎ কিছু ঘটে গেলে

হাতের কাছে থাক ফাস্ট এইড বক্স
হাতের কাছে থাক ফাস্ট এইড বক্স

সাঁতার কাটছি, হঠাৎ কানে পানি ঢুকল। কখনো চোখে ধুলাবালু ঢোকে। আগুনে গায়ের চামড়া পুড়ে যায়। এসব আকস্মিক ঘটনায় আমরা সাধারণত নিজেদের মতো করে কিছু ব্যবস্থা নিই। তা তো করতেই হবে। কিন্তু যেন হিতে বিপরীত না হয়, তা দেখা প্রয়োজন। ঘটনা গুরুতর হলে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত। তার আগে আসুন দেখি কী হলে কী করা যায়
১. কানে পানি ঢুকলে আমরা সাধারণত মাথা মাটির দিকে হেলিয়ে জোরে জোরে লাফ দিই। কিন্তু এতে কাজ হয় না। কানের তিনটি অংশ। বাইরের অংশ, যা দেখা যায়। মাঝখানের অংশ, যা কানের পর্দা পর্যন্ত বিস্তৃত। এখানে ছোট ছোট হাড় শব্দতরঙ্গ প্রসারিত করে। তৃতীয়টি ভেতরের অংশ, যেখান থেকে শব্দতরঙ্গ বিদ্যুৎ–তরঙ্গে রূপান্তরিত হয়ে মস্তিষ্কে যায়। সাধারণত শুকনো কাপড় বা তুলা কানের ভেতর সাবধানে ঢুকিয়ে পানি শুষে নেওয়া যায়। তবে ‘পানি দিয়ে পানি বের করার’ একটি ব্যবস্থা গ্রামে চালু আছে। যে কানে পানি ঢোকে, সেই কানেই আরও কয়েক ফোঁটা পানি ঢুকিয়ে দিলে কানটা গমগম করে ওঠে। সঙ্গে সঙ্গে উল্টো দিকে মাথা কাত করে ঝাঁকুনি দিলে কৈশিক আকর্ষণে (ক্যাপিলারি) সব পানি বেরিয়ে আসে। তবে এরপরও পানি আটকে থাকলে কথা বলার সময় একধরনের ঝমঝম শব্দ কানে বাজে। সে ক্ষেত্রে অথবা পানি যদি কানের মাঝের অংশ পর্যন্ত চলে যায়, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।
২. আগুনে পুড়লে চামড়ায় খুব দ্রুত পানি ঢালতে হবে। এ বিষয়ে বার্ন ইউনিটের জাতীয় সমন্বয়কারী সামন্ত লাল সেনের পরামর্শ হলো, ফ্রিজের বা বরফগলা ঠান্ডা পানি দেওয়া চলবে না, কলের বা পুকুর-নদীর সাধারণ পরিষ্কার পানি প্রয়োজন। কাছের কোনো হাসপাতাল বা চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার আগ পর্যন্ত এক টানা ২০ থেকে ৩০ মিনিট পানি ঢালতে হবে। আগুনের তাপ চামড়ার ভেতর পর্যন্ত ঢুকে ভেতরের পেশিতন্তু ধ্বংস করতে থাকে। সেই তাপ শুষে নেওয়ার জন্য প্রাথমিকভাবে প্রচুর পানি দরকার। অ্যাসিড ছুড়ে মুখ বা গায়ের চামড়া ঝলসে দেওয়া হলেও একইভাবে পানি ঢালতে হবে।
৩. চোখে ধুলাবালু ঢুকলে চোখ কচলানো উচিত নয়। এতে চোখের ক্ষতি হয়। এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের চক্ষু বিভাগের চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলামের পরামর্শ হলো, চোখে পরিষ্কার পানির ঝাপটা দিতে হবে। এরপরও যদি চোখ লাল হয়ে থাকে বা কচকচ করে, তাহলে কৃত্রিম চোখের পানি (আর্টিফিশিয়াল টিয়ার) দেওয়া যায়। চোখ খুব স্পর্শকাতর। তাই পরিস্থিতির অবনতি ঘটলে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া প্রয়োজন।
৪. চামড়া কেটে রক্ত বেরোলে আমরা লিওকোপ্লাস্ট বা গজ প্যাড লাগাই। পরে তা চামড়ার সঙ্গে সেঁটে যেতে পারে। এ সময় জোর করে টেনে তোলার চেষ্টা না করাই ভালো। কারণ রক্ত জমাট বেঁধে যে নরম আবরণ পড়ে, তা উঠে আবার রক্তক্ষরণ শুরু হতে পারে। তাই পুরোনো গজের ওপরেই প্রয়োজনে আবার গজ লাগানো যেতে পারে। এ বিষয়ে বিস্তৃত জানার জন্য দেখুন, রিডার্স ডাইজেস্ট, এশিয়া, মে, ২০১৫ সংখ্যা।
৫. ব্যথা পেয়ে হাত বা পায়ের কোনো অংশ ফুলে গেলে গরম সেঁক না দিয়ে বরফ দিন। কারণ, তাপের জন্য রক্তপ্রবাহ বেড়ে ফোলা অংশ আরও ফুলে উঠতে পারে। বিপরীতে, বরফ ফোলা কমায়।
সূত্র: নিউইয়র্ক টাইমস/সায়েন্স টাইমস, ১২ মে, ২০১৫