২০২২ সালে ধর্ষণ মামলা নিয়ে তাঁদের যে প্রত্যাশা

নতুন বছরে নারীর জীবনে কোন ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখতে চান না, এই প্রশ্নের জবাবে দুই নারীনেত্রী ও একজন অধ্যাপক যা বললেন

ধর্ষণ মামলায় দীর্ঘসূত্রতা চাই না

ফওজিয়া মোসলেম
ছবি: সংগৃহীত

ফওজিয়া মোসলেম

সভাপতি, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ

বিগত বছরগুলোতে আমরা নারী নির্যাতনের বিশেষ কিছু ঘটনা বারবার পুনরাবৃত্ত হতে দেখেছি। ধর্ষণ, গণধর্ষণ, শিশু ধর্ষণ, হত্যা, পারিবারিক সহিংসতা। এই সব কটিরই মূলে রয়েছে নারীর প্রতি সংবেদনশীলতার অভাব। নারীকে শুধু নারী হিসেবে মূল্যায়িত হতে দেখতে চাই না। যেকোনো দুর্ঘটনার পর আমরা প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অসততা, দুর্বলতা, অদক্ষতা ও জবাবদিহির অভাব দেখি। নারীর ন্যায়বিচার প্রাপ্তিতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে এই মনোভাব। এই মনোভাব চাই না। ধর্ষণের দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের দ্রুত বিচারের মাধ্যমে শাস্তি কার্যকর করতে হবে। অপরাধীদের যেকোনো ধরনের রাজনৈতিক, প্রশাসনিক আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতাদের জবাবদিহি, প্রয়োজনে বিচারের আওতায় আনতে হবে। বর্তমানে প্রচলিত ধর্ষণ আইনটি আমূল সংস্কার করতে হবে। ধর্ষণের মামলার যে দীর্ঘসূত্রতা, তা চাই না।

বিচারব্যবস্থায় পক্ষপাতিত্ব চাই না

তাসলিমা ইয়াসমীন
ছবি: সংগৃহীত

তাসলিমা ইয়াসমীন

সহযোগী অধ্যাপক, আইন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

নতুন বছরে আমি চাই না নারীর প্রতি সহিংসতা ও বাল্যবিবাহর ঘটনাগুলো উপেক্ষিত হোক। এই সামাজিক প্রথাগুলো বন্ধ করতে সহিংসতাকে দমন করতে যা যা করার দরকার করতে হবে। একজন নারী যখন নির্যাতনের শিকার হয়ে বিচারের জন্য আসেন, তাঁকে যেন হতাশ হয়ে ফিরতে না হয়, তাঁকে যেন আরও হয়রানির শিকার হতে না হয়। আমরা চাই না এই বছরেও একজন ধর্ষককে, একজন নির্যাতনকারীকে সহানুভূতির সঙ্গে দেখা হোক। বরং আমরা চাই, যিনি নিপীড়নের শিকার হলেন, তাঁর পাশে দাঁড়াতে। জাতীয়-উপজেলা পর্যায়ে যে কমিটিগুলো আছে, তাদের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। বিচারব্যবস্থায় নারী হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। বিচারব্যবস্থায় পক্ষপাতিত্ব চাই না। বিচার বিভাগে যাঁরা সততার সঙ্গে কাজ করতে চান, তাঁরা যেন বাধার সম্মুখীন না হন।

ধর্ষণ মামলায় মিথ্যা রিপোর্ট চাই না

ইলিরা দেওয়ান
ছবি: সংগৃহীত

ইলিরা দেওয়ান

সাবেক সাধারণ সম্পাদক, হিল উইমেন্স ফেডারেশন

নতুন বছরটাতে তো পুরোনো অনেক কিছুই চাই না। বিশেষ করে পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা এবং মনোভাব। আমাদের সমাজে পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব যেভাবে নারীকে দমিয়ে রেখেছে, তা থেকে আদিবাসী নারীরাও বাদ পড়েননি। পাহাড়-সমতলের নারীরা দিনের পর দিন এই সহিংসতা সহ্য করে আসছেন। এটা থেকে মুক্তি পেতে হবে। ধর্ষণের পর নারীর যে মেডিকেল রিপোর্ট আসে, সেটা নেতিবাচক দেওয়ার জন্য একটা চাপ থাকে। এই মিথ্যা রিপোর্টের কারণে বিচার পান না নির্যাতিত নারীরা। মিথ্যা রিপোর্ট প্রদানের জন্য যে প্রভাব খাটানো হয়, আদিবাসীসহ সব সমাজব্যবস্থা থেকে তা বন্ধ করতে হবে।