'আমার একমাত্র সন্তানের কথা ভেবে বাচ্চাটিকে বাঁচালাম'

মনির হোসেনের কো​েল সাজ্জাদ হোসেন। ছবি: চট্টগ্রাম অফিস
মনির হোসেনের কো​েল সাজ্জাদ হোসেন। ছবি: চট্টগ্রাম অফিস
মনির হোসেন চট্টগ্রাম ট্রাফিক পুলিশের কনস্টেবল। গত ৩০ আগস্ট কলার খোসায় পা পিছলে চট্টগ্রাম নগরের মহেশ খালে পড়ে যায় আট বছরের শিশু সাজ্জাদ হোসেন। ঘটনাটি অনেকে দেখলেও কেউ এগিয়ে আসেনি শিশুটিকে উদ্ধার করতে। কিন্তু ব্যতিক্রমী মনির হোসেন এসে উদ্ধার করেন শিশুটিকে। ১ সেপ্টেম্বর এ কাজের জন্য মনির হোসেনকে পুরস্কৃত করে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ

কীভাবে উদ্ধার করলেন শিশু সাজ্জাদকে?
খালে ঝাঁপ দেওয়ার পর প্রথমে নিজেই ভারসাম্য হারালাম। সামলে নিতে সময় নিলাম কয়েক সেকেন্ড। এরপর শিশুটিকে ওপরে তুলে ধরলাম। কিন্তু জুতাসহ ইউনিফর্মের ভারে আমি নিজেও প্রায় তলিয়ে যাচ্ছিলাম। তবু আপ্রাণ চেষ্টা করে তীরের কাছে আনলাম বাচ্চাটাকে। এরপরই যোগ দেয় স্থানীয় কয়েকজন। তারা পাড় থেকে রশি দিয়ে শিশুটিকে ওপরে টেনে তোলে। এরপর কাঠের গুঁড়ির সাহায্যে আমি পাড়ে আসি। ততক্ষণে আমার বিধ্বস্ত অবস্থা। কাদা-আবর্জনায় একাকার। একটাই শান্তি—বাচ্চাটাকে বাঁচাতে পেরেছি।
সেখানে তো অনেকেই ছিল। আর কেউ উদ্ধারে এগিয়ে আসেনি?
প্রায় ১০ থেকে ১৫ জন মানুষ ছিল সেখানে। কেউ বাঁচাতে এগিয়ে আসেনি। আমার একমাত্র সন্তানের বয়সও সাত বছর। তার কথা ভেবে আমি স্থির থাকতে পারিনি। ঝাঁপিয়ে পড়লাম। বাচ্চাটিকে বাঁচালাম। মনে হচ্ছিল, একটু দেরি হলেই সে মারা যেত।
আপনার নিজের সম্পর্কে কিছু বলুন।
আমার গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর সুধারাম থানার লালপুরে। স্ত্রী ও এক সন্তান নিয়ে আমার সংসার। উচ্চমাধ্যমিক পাস করেছি ১৯৯৭ সালে। পুলিশের চাকরিতে যোগ দিয়েছি ২০০০ সালে।
পুরস্কৃত হয়ে কেমন লাগছে?
পুরস্কারটি আমার জন্য অত্যন্ত সম্মানের। ১ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ আমাকে পুরস্কৃত করে। তবে পুরস্কার পাওয়ার আশায় শিশুটিকে উদ্ধার করিনি। আমার কাছে বাচ্চার জীবন বাঁচানোটাই বড় মনে হয়েছে। আমি ছোটবেলা থেকে একটা কথা সব সময় মানি, ‘মানুষ মানুষের জন্য।’