
কথায় বলে, ‘সময়ের দাম লাখ টাকা’। ব্যস্ত নাগরিক জীবনে কাউকে সময় দেওয়া বেশ কঠিন। বিশেষ করে কর্মজীবী নারীরা এ ‘সময়’ নিয়ে তাল মিলাতে গিয়ে বড্ড হিমশিম খান। একদিকে সংসার তো আরেক দিকে তাঁর পেশা। অথচ একটু হিসাব মতো বুঝেশুনে সময়কে ভাগ করে নিয়ে পরিবারকে ‘কোয়ালিটি টাইম’ দেওয়া যায়। এই কোয়ালিটি টাইম কথাটির সঙ্গে শহুরে কর্মজীবী মায়েরা বেশ পরিচিত।
কী এই কোয়ালিটি টাইম?
অনেকের কাছে শোনা যায়, রান্না করতে করতে, টিভি দেখতে দেখতে বা ল্যাপটপে কাজের ফাঁকে তো কথাবার্তা বলি। সময় দিই, তারপরও সময় দিই না বলে অভিযোগ শুনতে হয়। আসলে ‘কোয়ালিটি টাইম’ দেওয়া ও ‘অনেকটা সময়’ দেওয়ার মধ্যে পার্থক্য আছে। কোয়ালিটি টাইম হলো সন্তান বা পরিবারের অন্য সদস্যদের প্রতি নিরবচ্ছিন্নভাবে মনোযোগ দিয়ে তাদের সঙ্গে নির্দিষ্ট কিছু সময় কাটানো। কোয়ালিটি টাইম খুব স্বল্প সময়ের হলেও মানুষের মনোযোগের চাহিদার অনেকখানি পূরণ করতে পারে, যা কি না সারা দিন স্বাভাবিক সময় দিলেও পূরণ হতে চায় না। কেননা সারা দিন আমরা নানা কাজ করি এবং সেই সঙ্গে পরিবার বা সন্তানদের নিয়েও ব্যস্ত থাকি। অর্থাৎ মনোযোগে বিভক্তি নিয়ে আমরা পরিবারে সময় দিই। কিন্তু কোয়ালিটি টাইমে শতভাগ মনোযোগ শুধু পরিবার বা সন্তানদের দিতে হয়।
এটি কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
কোয়ালিটি টাইম দেওয়া নিয়ে যুব ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সহকারী পরিচালক সৈয়দা তসলিমা আক্তার বলেন, ‘যখন স্বামী-সন্তানদের সঙ্গে থাকি, তখন কেবল সময়টা তাদের জন্যই বরাদ্দ থাকে। সন্তানদের কখনো আমি এটা মনে হতে দিই না যে তাদের মায়ের কাছ থেকে তাদের যে সময়টা পাওয়ার কথা তাতে মায়ের অফিশিয়াল কাজ ভাগ বসাচ্ছে। তাই আমি কখনোই পেশাগত কাজ করতে করতে তাদের সময় দিই না। বরং তাদের সঙ্গে যখন থাকি, তখন কেবল তাদের সঙ্গেই থাকি। এতে তারাও বুঝতে পারে যে তাদের মায়ের জন্য তারা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। এতে মায়ের প্রতি সন্তানদের এক ধরনের বিশ্বাস তৈরি হয়, আর সম্পর্কটা দৃঢ় হয়।’
কর্মজীবী মা ও একক পরিবারের শিশুদের জন্য এটি খুব প্রয়োজনীয়। শিশুদের নানা রকম আচরণগত যে সমস্যাগুলো হয়, তা তাদের মনোযোগের চাহিদা সঠিকভাবে পূরণ না হওয়ার কারণে হয়ে থাকে। কোয়ালিটি টাইম দিলে শিশুদের মধ্যে মনোযোগের চাহিদা অনেকখানি পূরণ হয়ে নেতিবাচক আচরণ করার প্রবণতা কমে যায়। শুধু তা-ই নয়, মা-বাবার সঙ্গে সন্তানের সম্পর্কের বন্ধন অনেক দৃঢ় হয় এবং সেই সঙ্গে শিশুদের রাগ, জেদ, অন্যায় আবদার ইত্যাদির পরিমাণও অনেক সময় বেশ কমে যায়। এর ফলে মায়ের মনোযোগ আকর্ষণের জন্য কোনো নেতিবাচক আচরণ থেকে বিরত থাকে।
এমনটা মনে করেন বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের মনোবিজ্ঞানী জোহরা পারভিন। স্বামীকে কোয়ালিটি টাইম দিলে দুজনের সম্পর্কটা আরও গভীর হয় ও মতের মিল বাড়ে। একজনের প্রতি আরেকজনের ভালোবাসার আস্থা দৃঢ় হয়।
কিছু পরামর্শ
*স্বামী ও সন্তানদের সময় দেওয়ার সময় অন্য কাজ করা থেকে বিরত থাকবেন। টিভি দেখা, ল্যাপটপ বা মোবাইলে কোনো কাজ করা বা অফিসের কোনো কাজ যেন আপনার সময়টাকে নষ্ট না করে।
*সন্তানদের পড়াশোনা, বন্ধুবান্ধবের খোঁজ নেবেন। সন্তান কিশোর বয়সী হলে বেশি বেশি উপদেশ দেওয়া থেকে তাদের কথার ওপর মনোযোগী হন। এমন একটি আবহ তৈরি করবেন, যেন সে নির্ভয়ে ও বিশ্বাসের সঙ্গে মনের কথা বলে।
*শিশুদের সঙ্গে তাদের মতো করেই কিছুক্ষণ খেলুন কিংবা মজার মজার গল্প বলুন। মনে রাখবেন, আপনার শিশুটি অনেক কিছু বোঝে। সামান্যতম মনোযোগের বণ্টন তার চোখ এড়ায় না। তাই তাদের প্রতি শতভাগ মনোযোগ নিশ্চিত করুন।
*সারা সপ্তাহ যতই কাজ করুন, ছুটির দিনটি পরিবারের জন্য রাখুন।
*আগেই সবাই মিলে পরিকল্পনা করুন দিনটিকে সুন্দর করে কাটানোর।